• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূল চাঙা করতে শুরু হচ্ছে সাংগঠনিক সফর


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১, ২০১৬, ০৫:৪৩ পিএম
তৃণমূল চাঙা করতে শুরু হচ্ছে সাংগঠনিক সফর

ঢাকা : আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছেই। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণেই নেতাদের মধ্যে একটা ‌‘ড্যাম কেয়ার’ ভাব চলে এসেছে। কেউ কাউকে মানতে চাইছে না। যেন সবাই গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এতে দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্ব বাড়ছে ক্রমশ।

আওয়ামী লীগে তৃণমূলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কিংবা নেতাকর্মীদের মধ্যে চলমান সংকট নতুন কিছু নয়। তবে এ সংকট দূরীকরণে মনোযোগী হচ্ছে দলের হাইকমান্ড। আগামী নির্বাচনের আগে ‘যে কোনও মূল্যে’ দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।

তৃণমূলকে চাঙা করতে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে দেশব্যাপি সাংগঠনিক সফর কর্মসূচির কৌশল ঠিক করছে ক্ষমতাসীনেরা। শিগগিরই নবনিযুক্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি দল জেলা পর্যায়ে নানা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এর আগে স্থানীয় নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে নিজেদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের মধ্যে বিরোধ মেটাতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে বিরোধপূর্ণ সাংগঠনিক জেলাগুলোকে চিহ্নিত করা। এরপর জেলার নেতাদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে। যেসব সাংগঠনিক জেলা নিজেদের দ্বন্দ্ব মেটাতে ব্যর্থ হবে, আগে সেসব জেলায় সফর করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

দেশের চলমান জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছে ক্ষমতাসীন দলটি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর শেষ হবে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এরপর জানুয়ারির দিকে জেলা সফর শুরু করবেন নেতারা। তখন তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা। কর্মীসভা করা, যেসব জেলায় কমিটি হয়নি সেখানে কমিটি দেয়া। আহ্বায়ক কমিটি থাকলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্বের খবর প্রায় গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হচ্ছে। স্থানীয় নেতার সঙ্গে এমপির দ্বন্দ্ব, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের দ্বন্দ্ব, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব, সুবিধাভোগী-সুবিধাবঞ্চিদের দ্বন্দ্ব, দুই নেতার দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের ফলে মারামারি, খুন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর প্রায় প্রকাশ পায় সংবাদ মাধ্যমে।

দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন নেতা বলেন, একজন সংসদ সদস্য আছেন, পরের নির্বাচনে তাকে বাদ দেয়ার ফন্দি করে বিরোধী গ্রুপ। আবার কোথাও একজন মেয়র আছেন, পরের নির্বাচনে আরেকজন প্রার্থী হতে চান। তখন মেয়রবিরোধীরা তার দোষ খুঁজে বের করতে লেগেই থাকে। এর বাইরে আধিপত্য বিস্তার, প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করা ও ব্যক্তি-গোষ্ঠী দ্বন্দ্বতো আছেই।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতা বলেন, বিরোধপূর্ণ জেলাগুলো চিহ্নিত করা প্রায় শেষ। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়ে গেছে। তার মধ্যে যারা সংসদ নির্বাচনে ও সিটি নির্বাচনে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি, তাদের এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। এর ফলে চলমান দ্বন্দ্ব অনেকটা কমে যাবে।

নেতারা জানান, বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোর স্থানীয় নেতাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে, স্থানীয় নেতাদের কোনো গ্রুপ থাকবে না, কোনও গ্রুপিংয়ের ইন্ধন দেয়া যাবে না, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কোনো গ্রুপ থাকবে না, সব নেতা-কর্মীকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করতে হবে। না হলে যে কোনো নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে কেন্দ্র।

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গাইবান্ধার সাঁওতালপল্লীর ঘটনায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অভিযোগ আসার পরে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এ কারণে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ দূর করতে এখন স্থানীয় পর্যায়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিরোধপূর্ণ সাংগঠনিক জেলা চিহ্নিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনি সম্পাদকের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দলটির ৮টি সাংগঠনিক বিভাগের মধ্যে বেশ কয়েকটি চিহ্নিত করা হয়েছে। তারমধ্যে আছে পাবনা, নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, বান্দরবান, নরসিংদী, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও নারায়ণগঞ্জ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, “কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে থাকবে দল। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।” তিনি বলেন, “আগামী বছরের শুরু থেকে দলের অভ্যন্তরে সব ধরনের অসঙ্গতি দূর করে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার উপযোগী করা হবে। কিছু জেলায় অভ্যন্তরীণ কলহ রয়েছে। শিগগিরই তা নিরসন করা হবে।”

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাছান চৌধুরী নওফেল বলেন, “আগামী বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে সাংগঠনিক সফর করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এ সফরে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব থাকলে দূর করা হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কর্মীসভা করা হবে। যেখানে কমিটি নেই সেখানে কমিটি দেয়া হবে।”

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!