• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

থেমে নেই ইলিশ ধরা


চাঁদপুর প্রতিনিধি অক্টোবর ১৪, ২০১৮, ০৭:০৯ পিএম
থেমে নেই ইলিশ ধরা

চাঁদপুর : মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ২২ দিন ইলিশসহ সব মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। চাঁদপুর প্রশাসনও প্রতিদিন নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী জেলেদের জেল-জরিমানা করছে। ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ২৬টি অভিযান ও ৩৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় ১১টি মামলায় এক জেলেকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলেও পাঠানো হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল।

এতকিছুর পরও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে রাতে ও ভোরে শত শত জেলে ইলিশ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশই নৌকা প্রতি ১/২ হাজার টাকা নিচ্ছে। যার জন্য পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। তবে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ সুপার এ তথ্য অস্বীকার করেছেন।

এদিকে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ২শ’ নৌকা দিয়ে জেলেরা মাছ ধরতে নামছে। সেখানে ৪ জন পুলিশ নিয়ে আমরা মাত্র ১০ জন একটি নৌকায় অভিযান চালাতে পারি। হরিণা এলাকার অলিতে-গলিতে এখন শুধুই মা ইলিশ। জেলেরা মা ইলিশ ধরে নিজের পেটে নিজেই লাথি মারছে।’ একমাত্র সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া মা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব নয় বলেও জানান মৎস্য কর্মকর্তারা।

সরকার প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের পদ্মা-মেঘনার ৬টি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। এ নিষেধাজ্ঞাকে সফল করতে জেলেদের মাঝে ভিজিএফের চালও বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, চাল নিয়ে জেলেরা আবার ইলিশ ধরতে নদীতে নামছে।

ফোনে ফোনেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ : ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, ‘আমার বাড়ি চল্লিশ কাহনিয়া এলাকায়। ওখানকার জেলেরা আমাকে ডিমওয়ালা ৮শ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৪শ টাকা দরে দেবে বলে ফোন করেছিল। আমি তাদের কথায় সাড়া দেই নাই।’ আইনজীবী হয়ে লোভে পড়ে আইন অমান্য করার পক্ষে নন বলেও জানান তিনি।

কৌশল সম্পর্কে তিনি জানান, ভোররাতে জেলেরা নদীতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরতে নামে। সকাল হওয়ার আগেই আবার তারা তীরে উঠে আসে। ইলিশ ধরার নৌকা মূল নদীর পাশের ছোট খালে নিয়ে রেখে সেখানে জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে নেয়। এরপর ব্যাগে অথবা বিভিন্ন কার্টুনে করে অগ্রীম বুকিং দেয়া ক্রেতাদের কাছে সুযোগ বুঝে পৌঁছে দেয় সেসব মাছ।

খোঁজ নিয়ে সত্যতাও মিলেছে ওই আইনজীবীর এসব কথার। জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও ঝালকাঠির নলছিটিতে চলছে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে চলছে মা ইলিশ ধরা। স্থানীয় শতাধিক জেলে প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরছেন। আর ওইসব ইলিশ বিক্রিও হচ্ছে গোপনে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়।

উপজেলার সুগন্ধা নদীর সরই, মাটিভাঙ্গা, ফেরিঘাট, নাইয়াপাড়া, খোঁজাখালী, অনুরাগ, দপদপিয়া পুরাতন ফেরিঘাট ও বিষখালী নদীর ভেরনবাড়িয়া, নলবুনিয়া, ভবানীপুর এলাকায় শত শত জেলে এসব মাছ ধরছেন বলে জানা গেছে। সরকারিভাবে ট্রলার মহড়া দিলেও এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে না যেতেই শত শত ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। জেলেরা প্রতিদিন এসব এলকায় কয়েক মণ ইলিশ শিকার করে কৌশলে বিক্রি করছে।

স্থানীয়রা জানান, সরকারিভাবে কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জেলেরা তা অমান্য করে ইলিশ ধরছে। সকাল ১০টায়, দুপুর ৩টায়, রাত ১০টায় ও ভোর ৪টায় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে এ মা ইলিশ নিধন করছে তারা। তারা আরও জানান, জেলার রাজাপুরের চল্লিশ কাহনিয়া ও বাদুরতলা এলাকায় ভোরে মা ইলিশ ধরে জেলেরা। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মৎস্য বিভাগ রাতে অভিযান চালিয়ে ভোরে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখনই ইলিশ ধরতে নামেন জেলেরা।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার ভৈরবপাশা এলাকায় সুগন্ধা নদী সংলগ্ন একটি খাল থেকে নৌকা ও জালসহ তিন জেলেকে আটক করে মৎস্য কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। পরে তাদেরকে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের বরাদ্দ কম এবং একটি মাত্র ট্রলার রয়েছে। জনবলও কম, তা দিয়ে অভিযান চালানো কষ্টসাধ্য।’

ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, ‘জেলা প্রশাসনের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। ইতিমধ্যে জেলায় ১০ জনের বেশি জেলেকে অভিযানে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছি।’
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোনো জেলেকে ইলিশ ধরতে দেখলে তাকে কোনো রকম ছাড় দেয়া হয়নি, আর হবেও না।’

অভিযানে কোণঠাসা বরগুনার অসাধু জেলেরা : সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি একের পর এক অভিযানে বরগুনায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন অসাধু জেলেরা। নিয়মিত টহলের কারণে মৎস্য বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে দু’চারজন জেলে নদীতে জাল ফেললেও ধরা পড়ছেন টহল টিমের কাছে।

বরগুনার সকল উপজেলাসহ বিভিন্ন নদী তীরবর্তী এলকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মা ইলিশ রক্ষার কার্যক্রম অনেকটা গতিশীল। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে জেলেদের সহযোগিতা দেয়ার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে অধিক সময় ও শ্রম দিয়েছে মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টি সকল দফতর।

এ কারণে জেলেদের মধ্যেও বেড়েছে সচেতনতা। আর সরকার এবং মৎস্য বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণের অসাধু জেলেরাও নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। পাশাপাশি সমুদ্রে নৌ-বাহীনি ও কোস্ট গার্ডের কড়া নজরদারীরর পাশাপাশি বৈরি আবহাওয়ার কারণে সাগরে যেতে পারছে না সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোও।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের মহিল ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কঠোর অবস্থানে মৎস্য বিভাগসহ পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসন। যার কারণে জেল-জরিমানাসহ মাছ ধরার উপকরণ হারানোর ভয়ে ইলিশ শিকারের সাহস পাচ্ছে না জেলেরা।

রাজবাড়ীতে ছয় দিনে আটক ৩৭ জেলে : পদ্মা নদীর রাজবাড়ী অংশে চলমান মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের ৬ দিনে ৩৭ জেলেকে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে ইলিশ বেচা-কেনা বন্ধ রয়েছে। রাজবাড়ী জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অধিদফতরের অভিযানে ৭ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ দিনে পদ্মায় মাছ ধরার দায়ে জেলার ৩৭ জেলেকে আটক এবং ১৬৫ কেজি ইলিশ ও ২ লাখ ৪০ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক জেলেদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং জব্দকৃত মাছ এতিমখানায় বিতরণ ও জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মজিনুর রহমান জানান, চলমান ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমে নদীতে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। এছাড়া বাজারগুলোতে ইলিশ ক্রয় বিক্রয় বিষয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!