• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

থেমে যাচ্ছে কুমারপাড়ার চাকা


মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি মে ২১, ২০১৮, ০৯:২৪ এএম
থেমে যাচ্ছে কুমারপাড়ার চাকা

ঝালকাঠি: দিন দিন বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্লাষ্টিক সামগ্রী। সময়ের সাথে সাথে বাজারে প্লাষ্টিক সামগ্রীর ভীড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথ ধরেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। দেশের বিভিন্ন স্থানের মত ঝালকাঠির মৃৎ শিল্পীদের পরিবারে এখন হাহাকার। ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট। এক সময় মুখোরিত কুমারপাড়ার চাকা আজ থেমে যাচ্ছে।

জেলার কুমার পাড়ার বাসিন্দাদের পরিবারে দুর্দিন নেমে এসেছে। কুমারপাড়ার চাকা আজ আর তেমন একটা ঘুরতে দেখা যাচ্ছে না। মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, সরা, বাসন, কলসি আর বদনার কদর প্রায় শূন্যের কোঠায়।

কুমার সম্প্রদায়ের হাঁড়ি-পাতিল ও কলস সহ যে কোন মৃৎ শিল্প তৈরিতে প্রধান উপকরন হচ্ছে এটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস ও খড়। এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল। তখন এ শিল্পের সব মহলেই কদর ছিল। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এ শিল্পের মালামাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সরবরাহ করা হতো। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি পাতিলের বোঝাই ভার নিয়ে দলে দলে ছুটে চলত প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লায়। পাতিল, গাবলা, কূপি বাতি, থালা, দুধের পাত্র, ভাঁপাপিঠা তৈরির কাজে খাঁজ, গরুর খাবার পাত্র, ধান-চাল রাখার বড় পাত্র, কড়াই, মাটির ব্যাংক, শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল, খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত কুমাররা।

ঝালকাঠি জেলার মৃৎ শিল্প এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। কুমাররা মাটির তৈরি জিনিস হাট-বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু তেমন বেচাকেনা নেই। এখন দিন বদলে গেছে। সবখানেই এখন প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তাই মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। ফলে মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার পরিবারগুলো আর্থিক সষ্কটসহ নানা অভাবে অনটনে জড়িত। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে ঝালকাঠি জেলার কুমার পরিবারগুলোর নেই কোন আধুনিক মেশিন ও সরজ্ঞাম। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

গ্রামের গৌরাঙ্গচন্দ্র পাল জানান, অভাব অনটনের মধ্যে ও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার পেশা আঁকরে ধরে আছে। মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ঢাকনা হাট-বাজারে ভ্যান নৌকা ভারা দিয়ে হাটে আনলেও জিনিস বিক্রি হয় না। এখন তাদের অনেকেরই অবস্থা শোচনীয়।

তিনি আরো জানান, হাঁড়ি-পাতিল ও অন্যসব জিনিসপত্র তৈরি করতে কাঁচা মাল এটেল মাটি আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদী থেকে সংগ্রহ করা যেত। বর্তমানে নদী ভরাটের কারণে নদী থেকে আর মাটি তোলা যায় না। তাই পাশের গ্রাম থেকে টাকা দিয়ে মাটি কিনে ভ্যানে নৌকায় করে আনতে হয়। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাটির জিনিস তৈরি করে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে ব্যবহারযোগ্য করে সেগুলো জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।

এ অবস্থায় প্রাচীণ এ পেশাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে মৃৎ শিল্পীদের জন্য সরকারি ভাবে স্বল্পশর্তে ঋণ সহায়তা চালু করা গেলে শিল্পটি  চালিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে তাদের দাবী।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!