• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দরজার নিচ দিয়ে খাবার দিত: উৎপল (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২০, ২০১৭, ১০:২৪ এএম
দরজার নিচ দিয়ে খাবার দিত: উৎপল (ভিডিও)

ঢাকা: অনিরুদ্ধের দীর্ঘ দুই মাস ১০ দিন পর মায়ের কোলে ফিরেছেন সাংবাদিক উৎপল দাস। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কে বা কারা নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকায় রেখে যায় বলে নিজেই জানান এই সংবাদকর্মী। 

রাতে নানা ঘটনার পর বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরে ভুলতা তুলতা পুলিশ ফাঁড়িতে বসে উৎপল সংবাদিকদের জানান, অপহরণকারীরা তাকে একটি টিনশেড ঘরে রেখেছিল। সেখানে কোনো খাট বা চৌকি ছিল না। ফলে মেঝেতেই ঘুমাতেই হতো। ঘরের দরজা বন্ধ থাকতো। তাই দরজার নিচ দিয়ে খাবার দিয়ে যেতো।

রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ শহীদুল আলম বলেন, আমি মহাসড়ক এলাকায় তদারকির দায়িত্বে ছিলাম। এ সময় এসপি সাহেব ফোন করে বলেন, ‘সাংবাদিকরা ফোন করছেন। উৎপল দাস নামের নিখোঁজ কোনো সাংবাদিকের তথ্য জানো?’ 

আমি তখন স্যারকে বলি, আমি এই মুহূর্তে কোনো তথ্য জানি না। তিনি খোঁজ নিতে বললেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সাংবাদিকরা আমাকে ফোন করতে শুরু করেন। আমি খোঁজ নেয়া শুরু করলাম। জানতে পারলাম, শাহ্জালাল ফিলিং স্টেশনে উৎপল দাস রয়েছেন। পৌঁনে ১২টার দিকে আমি সেখানে গেলে তিনি (উৎপল) আমাকে দেখে পুলিশের লোক মনে করেন। জিজ্ঞেস করি আপনি কী উৎপল দা? 

তখন তিনি হ্যাঁ বলে জবাব দেন। পরে তাকে বলি, আমি পুলিশ পরিদর্শক। আমার সঙ্গে চলুন। তাকে পাম্পের ভেতরে নিয়ে যাই। এ সময় তার সঙ্গে এসপি সাহেব একাধিকবার কথা বলেন। আমাকে দেখে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন।

শহীদুল ইসলাম বলেন, তাকে কে নিয়ে গেছে এমন কিছু তিনি বলতে পারেননি। আপনাকে যে নিয়ে গেছে আপনি তাকে দেখেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, আমি দেখিনি। কারা নামিয়ে দিয়ে গেছে তাও তিনি বলতে পারেননি।

উৎপল দাস বলেন, শাহজালাল পেট্রল পাম্পের সামনে থেকে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। তবে গাড়ির টিকিট পাইনি। এরপর রূপগঞ্জ পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম গিয়ে আমাকে সিএনজি স্টেশন থেকে নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে আমার সাংবাদিক ভাইয়েরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমাকে চোঁখ বাধা অবস্থায় তিন-চার ঘণ্টা একটি গাড়িতে করে ঘোরানো শেষে এখানে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না। আমাকে যখন এখান (আধুরিয়া) নামিয়ে দেয়া হয় তখন তারা আমার চোখ খুলে দিয়ে বলেছে, আমরা যখন গাড়ি টান দেবো তখন তুই চোখ খুলবি।

তিনি বলেন, আমাকে একটি টিনশেড নরমাল ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। তিন বেলা নরমাল খাবার দেয়া হতো। সেখানে চৌকি বা খাট ছিল না। ফ্লোরের মধ্যে থাকতে হয়েছিল। ওই ঘরে এটাচ বাথরুম ছিল। সেখানে গোসল করতাম। আমার ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তারা দরজার নিচ দিয়ে খাবার দিয়ে যেতো।

অপহরণকারীরা নির্যাতন করেছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে উৎপল দাস বলেন, আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথম দিকে কিছু চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে। তারা আমাকে বলতো, তোর অনেক টাকা। তুই টাকা দে।

তিনি বলেন, ‘আমাকে ধানমন্ডি স্টার কাবাবের সামনে থেকে দুপুরের দিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পেছন থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার চোখ বাঁধা ছিল। কাউকে দেখতে পাইনি।’

অপহরণকারীদের আচরণে পেশাদারিত্ব ছিল কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিষয়টি এড়িয়ে যান উৎপল।

এখন কেমন আছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি ভালো আছি, দেখলে বুঝবেন। নারায়ণগঞ্জ এসে কিছু খেয়েছেন কিনা? উত্তরে বললেন, পানি খেয়েছি। ক্ষুধা নাই। বাড়ি যাবার টাকা আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পকেটে যে ৩০০ টাকা ছিল, সেটাই আছে। টাকা লাগবে না।

নারায়ণগঞ্জে ঢাকা থেকে সংবাদকর্মীদের আসতে হবে কিনা, এর জবাবে উৎপল তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিকের নাম বলেন, যারা ততক্ষণে রূপগঞ্জের পথে রওয়ানা হয়েছেন।

উৎপল আরো বলেন, যারা আমাকে ধরে নিয়েছিল, তারা আমার মোবাইল নিয়ে যায়। এরপর কি হয়েছে আমি জানি না। তারা কি করেছে জানি না। তারা আমার কাছে টাকা চাইতো। আমার কাছে মোবাইল ছিল না। আজ আমাকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে করে এখানে নিয়ে আসে। চোখ খুলে দেয়ার পর আমি বুঝতে পারি এটা ভুলতা, নারায়ণগঞ্জ।

উৎপলের মা বলেন, অনেক ভালো লাগছে, অনেক শান্তি লাগছে। আমার বাবা। তুই কান্দিস না আমি ঠিক আছি।

যে ফিলিং স্টেশনের সামনে সাংবাদিক উৎপল দাসকে ফেলে যাওয়া হয়েছে; সেই শাহজালাল ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী ঝন্টু চন্দ্র বর্মন জানান, তাকে ফেলে যেতে দেখিনি। তবে ফিলিং স্টেশনের সামানে কালো ব্যাগ কাঁধে অনেক বিধ্বস্ত একজন ব্যক্তিকে বেশ কিছুক্ষণ পায়চারী করতে দেখি। জানতে চাই, কোথায় যাবেন। কিন্তু তিনি মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকায় কোনো উত্তর দেননি। এভাবে সে প্রায় এক ঘণ্টা ফিলিং স্টেশনের সামনে ছিল। পরে ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশ এসে তাকে ফিলিং স্টেশনের অফিস রুমে নিয়ে যায়।

ভিডিও: (বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে)

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!