• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দল গোছাতে মনোযোগী বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২, ২০১৭, ০৫:৫২ পিএম
দল গোছাতে মনোযোগী বিএনপি

ঢাকা: দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি। ভুল এবং আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাপক জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও কাজে লাগাতে পারছে না দলটি। ক্ষমতার বাইরে থেকে মামলা, হামলা আর নির্যাতনে বিপর্যস্ত দলটি ঘুরে দাঁড়াতে চায়।

জনগণকে আস্থায় নিয়ে কার্যকর আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আছে দলটি সার্বিক প্রস্তুতি। দলকে চাঙা করতে বিএনপি চেয়ারপারসন নিয়মিত অফিস করছেন। দলের অন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও গতি এনেছেন কাজে।

চেয়ারপারসনের মামলা মোকাবেলা, আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ, সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনাসহ নীতিনির্ধারণী অন্য বিষয়গুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ছাড়া নানামুখী কর্মকাণ্ড হাতে নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতারা নিজ নিজ অবস্থানে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন গঠনে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয়ার পরই কার্যত ব্যস্ততা বাড়ে বিএনপিতে। দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে বা পরে দল গঠনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা। মূলত আগাম জাতীয় নির্বাচন, অথবা আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখেই তৈরি হয়েছে ব্যস্ত সূচি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার সাজার বিষয়টি সামনে আসায় কাজে গতি বাড়ে। বসে নেই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন রাতে প্রায় একটা বা দেড়টা পর্যন্ত অফিস করছেন। প্রতিদিনই কোনো কোনো নীতিনির্ধারণী কাজে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শও নিচ্ছেন।

জানা যায়, প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলা কমিটির ‘খসড়া’ চেয়ারপারসনের বরাবর উপস্থাপন করছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা। সেই খসড়ার আলোকে সংশ্লিষ্টদের ডেকে কথা বলছেন তিনি। শুধু মূল দল নয়, জাতীয় কাউন্সিলের পর থেকে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনেও বিপুল সময় ব্যয় করতে হচ্ছে খালেদা জিয়া এবং দায়িত্বশীল নেতাদের। এরই মধ্যে দলের অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল ও জাসাস-এর আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এ মুহূর্তে মূল দলের ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে কাজ করছেন চেয়ারপারসন। এরই মধ্যে তিন দফা কাটা-ছেঁড়ার পরও চূড়ান্ত হয়নি কমিটি। সর্বশেষ জানা যায়, মহানগরের চূড়ান্ত তালিকা দেখে মনোনয়ন দেবেন দলীয় চেয়ারপারসন। এর বাইরে হাতে আছে মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রাথমিক তালিকা।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও শ্রমিক দলের নতুন কমিটি গঠনের কাজটিও বাকি রয়েছে। সেগুলো এখন খালেদা জিয়ার হাতে। খুব শিগগিরই হয়তো এ দুটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হবে। এসব কাজে চেয়ারপারসনকে সহায়তা করছেন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলের পুনর্গঠন বিষয়ে ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিএনপি এবং এর প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী দলের পুনর্গঠন কাজ দ্রুতই এগিয়ে চলছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা একটু ব্যস্ত থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, মোটা দাগের কমিটির কাজ আগামী দুই মাসের মধ্যেই শেষ করতে চান তিনি।

এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আগে বিএনপির দেয়া ১৩ দফা প্রস্তাব সরকার আমলে না নিলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সেই প্রস্তাবেই বলা হয়েছিল নির্বাচন কালীন সরকারের একটি রূপরেখা দেবে বিএনপি। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে সহায়ক সরকারের সেই কাঙ্ক্ষিত ফর্মূলা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারা। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়, এমন একটি রূপরেখা প্রণয়নের কাজ চলছে।

জানা যায়, দলের স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্য সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তাবটি তৈরি করছেন। দেশ-বিদেশের নির্বাচন কালীন সরকার পদ্ধতির পর্যালোচনা করে প্রস্তাবটি জাতির সামনে তুলে ধরতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপিপন্থি কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

সরকারের সঙ্গে থাকা ১৪ দল এবং ২০ দলের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দলের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাদের নিয়ে সরকারবিরোধী একটি বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচন কালীন একটি গ্রহণযোগ্য দাবি আদায়ের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন সমমনা দলগুলোকে আবারো সঙ্গে পেতে চান। গত নির্বাচনে খালেদার ডাকে সাড়া দিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি তাদেরকে এবার বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নামাতে চায় দলটি।

তা ছাড়া সরকার যাতে তাদের নিয়ে নির্বাচনী জোট বা অন্য কিছু করতে না পারে প্রয়োজনে আসন ভাগের প্রস্তাবও থাকছে মির্জা ফখরুলের দোতিয়ালিতে। বিকল্প ধারা, গণফোরাম, সিপিবি, বাসদ, জেএসডি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠকও করেন মির্জা ফখরুল। ফখরুলের সহায়তায় কাজ করছেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের কথা বিএনপি নেত্রী অতীতে অনেকবারই বলেছেন। হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে এ উদ্যোগ নিতেও পারেন। তবে কখন, কিভাবে বা কি প্রক্রিয়ায় তিনি এটি করবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তার মতে, আপাতত এটুকু বলা যায় যে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক হলেন খালেদা জিয়া। ফলে তার ডাকে সবাই সাড়া দেবেন, এটি আশা করা যায়।

খালেদা জিয়ার সাজা হলে দলের করণীয় নির্ধারণ নিয়ে চেয়ারপারসনের একাধিক উপদেষ্টা ও ভাইস-চেয়ারম্যান কাজ গুছিয়ে রাখছেন বলে জানা যায়। যদিও বিএনপির কোনো সূত্রই খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেনি। তবে, দলের ভাইস-চেয়ারম্যান পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ম্যাডামকে জেলখানায় যেতে হলে বিএনপির কি করণীয় হতে পারে তা নিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!