• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দলীয় পদ-নাম দুটিও ভুয়া নাঈমের!


বিশেষ প্রতিনিধি মে ১৫, ২০১৭, ০১:৪১ পিএম
দলীয় পদ-নাম দুটিও ভুয়া নাঈমের!

ঢাকা: শুধু কারো দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করেই ক্ষান্ত থাকেননি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের প্রতারক হিসেবে পরিচিত ও বনানীর আলোচিত ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি নাঈম ওরফে হালিম। অনুসন্ধানে নাঈম ওরফে হালিমের বিষয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হাসান মোহাম্মদ হালিম তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও ভয়ঙ্কর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি নিজেকে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হালিম হিসেবে পরিচয় দিলেও আসল হালিম তিনি নন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি আবদুল হালিমের নাম ব্যবহার করতেন।

শুধু তা-ই নয়, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের ছেলে নাঈম আশরাফের নাম ব্যবহার করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে নাঈম আশরাফ ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। সেই নাঈম আশরাফের নামেই এতদিন ঢাকায় পরিচিতি পেয়েছেন প্রতারক হালিম। অর্থাৎ তার ঢাকায় পরিচিতি পাওয়া নাঈম আশরাফ নামটি এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে নিজেকে হালিম পরিচয় দেওয়াটা একটা বড়ধরনের প্রতারণা।

আওয়ামী লীগ নেতার নাম ব্যবহার ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদ ব্যবহার করেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন হাসান মোহাম্মদ হালিম। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই প্রতারক স্থানীয়ভাবে হালিম নামেই পরিচিত।

নাঈম, সাফাত, সাদমান

এ বিষয়ে কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম রেজা জানান, কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন গান্ধাইল ইউনিয়নের চৌরাস্তা গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় কারিগরি কলেজের শিক্ষক আবদুল হালিম, যিনি কালো হালিম নামে পরিচিত। অথচ ওই ব্যক্তির নাম ও পদবি ব্যবহার করেই প্রতারক হাসান মোহাম্মদ হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ নিজেকে কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে দিয়েছেন।

সেলিম রেজা আরো বলেন, দলের সহসভাপতির পদ তো দূরের কথা, তাঁকে আমি চিনিই না। তাঁর সঙ্গে কোনো দিন দেখা বা সাক্ষাৎ হয়নি আমার। এ সময় হালিমকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা।

একই বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম বলেন, এইচ এম হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ নামের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোনো নেতা নেই। হালিম মূলত তাঁর অপকর্ম ও প্রতারণার কাজটি সহজ করতেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ ব্যবহার করেছেন।

এদিকে, আবদুল হালিমের চাচি সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘টেলিভিশন ও পত্রিকায় তার ছবি দেখে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে সে হালিম। তবে তার আরেক নাম নাঈম আশরাফ কি-না, তা আমি জানি না।’

নাঈমের সেই বিতর্কিত পোস্টার

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা গান্ধাইল গ্রামের আমজাদ হোসেন ফেরিওয়ালার ছেলে এইচ এম হালিম। ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে বগুড়া পলিটেকনিকে ভর্তি হন। সেখানেও নিজের বাবার নামসহ পুরো পরিচয় গোপন করে প্রতারণা করে প্রেম ও বিয়ে করেন। ধরা পড়ে গণপিটুনি খেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে নাম বদলে হয়ে যান নাঈম আশরাফ। চাকরি নেন এক মিডিয়া হাউসে।

এরপর থেকেই দীর্ঘদিন তাঁর কোনো খবর ছিল না। হঠাৎ করেই নিজেকে কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পরিচয় দিয়ে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন লাগান। আর এতেই আবার নজরে আসেন হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ। তবে তাঁর রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

বনানীর গণধর্ষণ মামলার আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিমের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে তার নামে লাগানো পোস্টার ও ব্যানার-ফেস্টুন খুলে ফেলেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন এগুলো কাজীপুর উপজেলাসহ লাগানো থাকলেও বনানীর ঘটনার পর সবার টনক নড়ে। কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পরিচয় দিয়ে এসব পোস্টার-ব্যানার লাগিয়েছিলেন তিনি। যদিও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা দাবি করছে, কমিটিতে নাঈম কোনো পদেই ছিল না।

নাঈম ওরফে হালিম

নাঈম ওরফে হালিমের বাড়ি কাজীপুরের গান্ধাইল গ্রামে। কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, ‘দলের সহসভাপতি পদ তো দূরের কথা, তাকে আমি চিনিই না। তার সঙ্গে কোনো দিন সাক্ষাতও হয়নি আমার। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে আব্দুল হালিম নামের একজন সহসভাপতি রয়েছেন। তিনি স্থানীয় একটি কারিগরি কলেজের শিক্ষক। তিনি কালো হালিম হিসেবে পরিচিত।

এলাকায় নাঈমের সহপাঠী সবুজ আহমেদসহ স্থানীয়রা জানায়, ছোট থেকেই হালিম নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। বনানীর মামলার দুই আসামি পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও এখনো কেন হালিমকে পুলিশ আটক করতে পারছে না, সেটাই ভাববার বিষয়। দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা দরকার। নইলে আরো অনেকের ক্ষতি করবে সে।

কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমিত কুমার জানান, নাঈমের ব্যাপারে আরো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে। যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে নাঈম ওরফে এইচ এম হালিম একজন প্রতারক। ছোটবেলা থেকেই সে বিভিন্ন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাকে ধরতে তার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও অভিযান চলছে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!