• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দলে গতি ফেরাতে ব্যর্থ বিএনপি


সোনালী বিশেষ সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭, ১১:৪৯ এএম
দলে গতি ফেরাতে ব্যর্থ বিএনপি

ঢাকা : দল ঢেলে সাজানোর নতুন নতুন লক্ষ্য পূরণে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বেঁধে দেয়া সময়েও কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কোনো কমিটিই পুনর্গঠন করতে পারছে না দলটি।

 

বিএনপির সাংগঠনিক ভিত মজবুত, তৃণমূলের ঐক্য, গতিশীল নেতৃত্ব বাছাই ও কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নেয়া হয়েছিল পুনর্গঠনের উদ্যোগ। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনে প্রশাসনের বাধা। নেতাদের মামলা জটিলতা, দলের জাতীয় কাউন্সিলসহ নানা কারণে বারবার পিছিয়েছে ওই সময়সীমা।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যেখানে যা প্রয়োজন ম্যাডাম নির্দেশ দিচ্ছেন। সেই মোতাবেক আমাদের দলের মহাসচিব দলীয় কার্য্ক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দল পুনর্গঠনের কিছু কাজ বাকি আছে, চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে ম্যাডাম তা সম্পূর্ণ করবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের শেষের দিকে আবারো সারাদেশে বিএনপির ৭৫ জেলায় তৃণমূলে কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে কয়েকটি জেলায় কাউন্সিল কাউন্সিলের মাধ্যমে আংশিক কমিটি গঠন এবং বেশ কয়েকটি জেলায় কমিটি কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়। তবে কোনো কমিটিই এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

এদিকে গত ১৮ এপ্রিল রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়। দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিএনপির ৭০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হন হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। আর ৬৬ সদস্যবিশিষ্ট ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি হন এমএ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। কিন্তু সময় পার হলেও এখন পযন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেতে পারেনি বিএনপির নগরীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

এ প্রসঙ্গে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, নতুন কমিটি হওয়ার পর আমরা সংগঠনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ইউনুস মৃধা একই প্রসঙ্গে বলেন, দ্রুতই আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই জন্য যাচাই-বাছাই করতে একটু দেরি হচ্ছে।

বিএনপির ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে অধিকাংশ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এর তালিকায় রয়েছে- ছাত্রদল, শ্রমিকদল, মুক্তিযোদ্ধা কৃষকদল, মৎসজীবী দল। বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল। রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে ২০১ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেদিন ওই কমিটিতে ১৫৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে কমিটির আকার গিয়ে দাঁড়ায় ৭৩৬-এ। শুধু কেন্দ্র নয়, বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনেও একই পথ অনুসরণ করা হয়েছে। ঢাকা কলেজ শাখার কমিটি ৬৮৭ সদস্যের। ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি ৬৪০, তিতুমীর সরকারি কলেজ ৬৬৯, সরকারি বাঙলা কলেজে ৪৪৪ সদস্যের কমিটি।

সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, টোটাল সাংগঠনিক কার্যক্রমের এক ভাগও সম্পূর্ণ হয়নি। তাহলে সফলতা আসবে কি করে?

জানা গেছে, চলতি বছরের দুটি অঙ্গ দলও পুনর্গঠন করে বিএনপি। এর মধ্যে ১৭ জানুয়ারি গঠন করা হয় যুবদলের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি। নতুন কমিটিতে সাইফুল আলম নিরব সভাপতি, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সাধারণ সম্পাদক এবং মামুন হাসান সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। একই সঙ্গে এসএম জাহাঙ্গীরকে সভাপতি ও সফিকুল ইসলাম মিল্টনকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর এবং রফিকুল ইসলাম মজনুকে সভাপতি ও গোলাম মওলা শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে যুবদলও তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি।

এছাড়া চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মামুন আহমেদকে সভাপতি ও অভিনেতা হেলাল খানকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা- জাসাসের ৩০ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক) কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

গত বছর ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৭৩ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এখনো স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ ফাঁকা। ছাত্র ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং যুব বিষয়ক সম্পাদক এখনো ঠিক হয়নি।

এছাড়া জাতীয় কাউন্সিলের এক বছরেও দলীয় গঠনতন্ত্র বই আকারে প্রকাশ করতে পারেনি বিএনপি। ফলে বিএনপির নির্বাহী কমিটি কত সদস্যের, নতুন কী সংশোধনী এলো এসব ব্যাপারে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অন্ধকারে। কাউন্সিলে বিষয়ভিত্তিক ২৬টি উপ-কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল। এসব কমিটির প্রতিটিতে ১২ জন সদস্য রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখনো এ কমিটি হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!