• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
দাঁতের যত্ন

দাঁতের সুস্থতায় মিষ্টি খাব, না খাব না


ডা. আওরঙ্গজেব আরু জুলাই ১, ২০১৭, ১০:৫৭ এএম
দাঁতের সুস্থতায় মিষ্টি খাব, না খাব না

ঢাকা : মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার আমাদের সকলেরই প্রয়। প্রতিদিন কম-বেশি কিছু না কিছু মিষ্টিজাতীয় খাদ্য আমরা খেয়ে থাকি। মিষ্টি মানেই কিন্তু রসগোল্লা, চমচম নয়, এটি হতে পারে কেক, পেস্ট্রি, পিঠা, পায়েস ইত্যাদিসহ যেকোনো ধরনের মিষ্টি তরল পানীয়। এসব মিষ্টি খাবার যেমন মজা, এর কার্যকরী ভূমিকাও তেমনি অনেক দ্রুত ও শক্তিশালী। মিষ্টি ও দাঁতের সুস্থতা কথাটি এখন আর অপরিচিত নয়। অনেককেই আমরা বলতে শুনি, মিষ্টি খেলে দাঁত ব্যথা করে, শিরশির করে, তাই মিষ্টি খাই না। কিন্তু এটাই কি সমাধান ? মিষ্টি তো ইতোমধ্যে দাঁতের ক্ষতি করেই ফেলেছে, এখন শুরু হবে ঠান্ডা-গরম খাবারে সমস্যাসহ নানা ধরনের জটিলতা।

আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, মিষ্টিজাতীয় খাদ্যদ্রব্যে দাঁতের সংবেদনশীলতা একটি স্বাভাবিক অবস্থা আর চিকিৎসার অভাবে এটি একসময় ঘটাবে দাঁতের সুস্থতার মারাত্মক বিপর্যয়। মিষ্টিজাতীয় খাবার কিভাবে দাঁতের ক্ষতি করে তা জানাটা একান্তই প্রয়োজন। মিষ্টিজাতীয় খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয় উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট দিয়ে। এসব কার্বোহাইড্রেট মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিলে তৈরি করে ক্ষতিকারক এসিড। এই মারাত্মক এসিড দাঁতের এনামেলের ভিতরে থাকা খনিজ উপাদানকে নষ্ট করে। এটি ক্রমশ দাঁতের ক্ষতি করতে থাকে, সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং এক পর্যায়ে দাঁতের ক্ষয় বা টুথ ডিকে তৈরি করে। আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, মিষ্টিজাতীয় খাদ্যদ্রব্যে দাঁতের সংবেদনশীলতা মানেই গাম ডিজিজ বা দাঁতের মাঢ়ির সমস্যা, যা পরবর্তীসময়ে রূপ নেয় ডেন্টাল ক্যাভিটি বা টুথ ডিকে নামক দাঁতের মারাত্মক সমস্যায়।

মিষ্টিজাতীয় খাদ্যদ্রব্য কিংবা তরল পানীয় কোনোটাই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ কিংবা চিকিৎসা করে পরিত্রাণ পাওয়া এখন শুধু সদিচ্ছার ব্যাপার। আপনি যদি আপনার দাঁতের ব্যাপারে সচেতন হোন তবে অবশ্যই অজ্ঞতার পরিচয় না দিয়ে দাঁতের যত্বের ব্যাপারে আগ্রহী ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন। প্রথমে যা করবেন তা হলো, দাঁতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পালন। নিয়ম করে সকালে খাওয়ার পরে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দিনে অন্তত একবার ফ্লসিং অর্থাৎ সুতা দিয়ে দাঁতের ফাঁকগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ডেন্টাল ফ্লসের প্যাকেট পাওয়া যায়, প্রয়োজনে দাঁতের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেও কিনে নিতে পারেন। বাসায় সুতার মাধ্যমেও করা সম্ভব, তবে সেক্ষেত্রে তা জীবাণুমুক্ত কিনা তা জেনে নিতে হবে। টুথ সেনসিটিভিটির জন্য বিশেষ ধরনের টুথপেস্ট বাজারে পাওয়া যায়। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তা ব্যবহার করতে হবে। দাঁত ব্রাশ করার সময় অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে। জোরে জোরে ব্রাশ করা যাবে না, আড়াআড়িভাবে দাঁত কোনোভাবেই ব্রাশ করা যাবে না, ৪৫ ডিগ্রি অর্থাৎ লম্বালম্বি উপর-নিচ করে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। যেকোনো মিষ্টি খাবার বা তরল মিষ্টি পানীয় গ্রহণে মুখ ভালোভাবে কুলকুচি করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে, বাইরে স্ন্যাকস হিসেবে কফি, ড্রিংকস না নিয়ে ফলমূল বা সালাদজাতীয় খাদ্যে অভ্যস্ত হতে হবে।

মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের কারণে দাঁতের শিরশির ভাব বা ব্যথা কারোরই কাম্য নয়। এ ধরনের সংবেদনশীলতা শুধু অস্বস্তিকরই নয়, পীড়াদায়কও। তাই অবহেলা না করে সচেতন ব্যক্তির মতো ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত এর সমাধান করে নিতে হবে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডেন্টাল হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। চিফ কনসালটেন্ট, ইলাহী ডেন্টাল কেয়ার। মেরুল বাড্ডা প্রধান সড়ক, ঢাকা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!