• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দাতাদের টাকা ফেরত দিচ্ছে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬, ০১:১৬ পিএম
দাতাদের টাকা ফেরত দিচ্ছে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চলমান একটি প্রকল্পের ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। ওই প্রকল্পে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুতত পদক্ষেপ গ্রহণসহ দাতা সংস্থাটি অবিলম্বে দুর্নীতির অর্থ ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। পাশাপাশি বারবার সংশোধনী আনায় ওই প্রকল্প থেকে ১৪০ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে অপর দাতা দেশ নেদারল্যান্ডস। অর্থ প্রত্যাহারের ঘটনায় নতুন করে ওই প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি চলছে অর্থ ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়াও। পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাংক ও নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় ৯৭৫ কোটি টাকা ব্যয়সংবলিত পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে তার আগে দু’বার সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু শিগগিরিই প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও নেদারল্যান্ডস অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্তকরণ এবং ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে যৌথভাবে প্রকল্পটিতে ৬৮৪ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর বাইরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) থেকে ২৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১১ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৪ সালের জুন নাগাদ মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী আনা হয়। ওই সময় জিওবি অর্থায়নের ব্যয় কমলেও দাতা সংস্থা দুটি ১০৯ কোটি টাকা বাড়তি সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারপর প্রকল্পেও মোট ব্যয় আরো বাড়িয়ে বিশেষ সংশোধনী আনা হয়। ওই সময় প্রকল্পের নতুন অঙ্গ হিসেবে কৌশলগত সমীক্ষা, অডিট ও রিভিও এবং কন্টিনজেন্সি ও বন্যা পুনর্বাসন কম্পোনেন্ট বাতিল করা হয়। কিন্তু বাড়ানো হয় পরামর্শক ব্যয়। ফলে প্রকল্পের অঙ্গ বা কম্পোনেন্টের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। তখন যথাযথ সমন্বয়ে নতুন করে প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে সংশোধনী আনা হয়। কিন্তু তাতেও প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয়বার সংশোধন করা হয়। এর ফলে দাতা সংস্থাগুলোর ব্যয় বেড়ে ৮৮৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ওই প্রকল্পটির কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সূত্র জানায়, বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে বার বার সংশোধনী আনার প্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডস সরকার প্রতিশ্রুত ২ কোটি ডলারের মধ্যে ১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪০ কোটি টাকা। এখন নতুন করে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনায় ব্যয় কমলেও চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু দাতাদের পক্ষ থেকে প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের আলোকে দায়িদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সূত্র আরো জানায়, পাউবোর প্রকল্পের অধীনে বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যাকেজে বিশ্বব্যাংকের ক্রয় প্রক্রিয়ার অনিয়ম হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এই প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি থেকে ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা ফেরত চেয়েছে বিশ্বব্যাংক। একই সাথে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে দাতা সংস্থাটি। এখন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা প্যাকেজের ৩ কোটি ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বিশ্বব্যাংককে ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অর্থ মন্ত্রণালয় দুটি হিসাবের মাধ্যমে অর্থ ফেরত দিতে ইআরডির পক্ষ থেকে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ওই অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে মেটানো হবে। ইতিপূর্বে গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ১০টি প্রকল্পে অনিয়ম ধরা পড়ে এবং অর্থও ফেরত দিতে বাধ্য হয় সরকার।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এএইচএম ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মূল অর্থায়নকারী বিশ্বব্যাংকের তদন্তে ক্রয় প্রক্রিয়ার অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই অর্থ পরিশোধে প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীতে (ডিপিপি) বরাদ্দ রাখা হবে। তাছাড়া প্রকল্পে অঙ্গ পরিবর্তন হওয়ার কারণে নেদারল্যান্ডস তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে ১৪০ কোটি টাকা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এজন্য প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী এনে ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করা যায় আগামী ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!