• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দামেও কম বাজে ব্যবহারও নাই, তাই ওপারে যাই


সৌধ ইসলাম জুন ২২, ২০১৭, ০৮:৫৮ পিএম
দামেও কম বাজে ব্যবহারও নাই, তাই ওপারে যাই

ঢাকা: অভিযোগ আমলে নেয়ার মতোই। মফস্বল থেকে ঢাকায় আসা ক্রেতারা মার্কেটে গেলে আতঙ্কেই থাকেন। চোখ ঝলমলে মার্কেটে ঢুকে কোনো জামা ভালো লেগে গেল, তো সমস্যায় পড়তে হবে। আপনার ভালোলাগা যদি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেন দোকানি- তাহলে ‘জানপ্রাণ’ (সম্মান!) নিয়ে ফেরাই মুশকিল!

পছন্দের জিনিসটির দাম জানতে চাইলে, দোকানি পেয়ে যান মওকা। ৫০০ টাকার জিনিসের দাম হাঁকবেন ২৫০০ টাকা! আপনি তো চমকে যাবেন। সরলতার কারণেই আপনার ক্রম ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বলবেন না। কিন্তু দোকানি ছাড়বে না। টানা হেঁচড়া চলতেই থাকবে।

শেষ অবধি আপনার পছন্দের জিনিস আপনাকে নিতেই হবে- তা সে ৬০০ টাকা দিয়ে হলেও। মাঝখানের ঝক্কিতে আপনার মার্কেটে আসার সঞ্চিত সব ক্যালরি শেষ। এমন যখন মার্কেট আর বিক্রেতাদের চরিত্র, তখন ক্রেতারাও বুঝে গেছেন সবকিছু। বেশি দাম হাঁকার ফালপাড়া আর পাত্তা দেননি ক্রেতারা।

দেখা যায়, মফস্বল থেকে আসা ক্রেতারা দোকানিদের চালাকির ওপর চালাকি করেন। বিক্রেতারা যে দাম হাঁকান ক্রেতারা তা পাঁচ ভাগে ভাগ করেন। শুরু করেন নিচ থেকে। এভাবে চলতেই থাকে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাণিজ্যিক ‘চরিত্র’ এভাবে নষ্ট হওয়ার ফল ভোগ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ঢাকার ‘বিক্রেতারা ক্রেতাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন’- এমন অভিযোগ ভুড়ি ভুড়ি। আর এসব কারণেই মার্কেটগুলোতে ফিক্সড প্রাইস নোটিশ ঝুলানো দেখা যায়। কিন্তু সেখানেও বড় রকমের ফাঁক খুঁজে পান ‘চালক’ ক্রেতারা।

‘চতুর’ দোকানিদের কারণেই মার্কেটে বেড়েছে ‘চালাক’ ক্রেতারা। তারা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারে না যে ফিক্সড প্রাইসে কোনো ‘চাতুরতা’ নেই। সততার সঙ্গেই এসব নোটিশ ঝুলানো হয় তাও বুঝতে চান না।

ক্রেতাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের কুফল বুঝতে পারছেন ঢাকার মিডল ক্লাস মার্কেটের দোকানি ও ব্যবসায়ীরা। তাই ফিক্সড প্রাইস নোটিশ ঝুলিয়েও বিক্রিবাট্টা বাড়ানো যাচ্ছে না। শেষ অবধি আগের স্টাইলেই ফিরতে হচ্ছে।

তবে এবার দেখা যাচ্ছে ঢাকার মার্কেট ছেড়ে অনেক ক্রেতা যাচ্ছেন দেশের বাইরে ভারতের মার্কেটে। বিশেষ করে ঈদ মৌসুম ঘিরে। তাহলে কি ধনীরাই যাচ্ছেন ওপারের মার্কেটে কেনাকাটা করতে? না, তা নয়, ধনীদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও যাচ্ছেন দল বেঁধে।

কেন যাচ্ছেন তারা ওপারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে দাম কমসহ অনেক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেসব কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ওপারের দোকানি বা বিক্রেতারা ক্রেতাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন না; যেটা করেন ঢাকার বিক্রেতারা।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসির প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গেল এগারো মাসেই টুরিস্ট ভিসায় ভারতে যাওয়ার জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়েছে, যা গেল সময়ের চেয়ে এক কোটি টাকা বেশি। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই বহু মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান নানা কারণে। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা এবং ভ্রমণ। তবে এর মধ্যে সবচে বেশি লোক যান ভ্রমণ ভিসা নিয়ে। যা প্রতিবছরই বাড়ছে।

ঢাকায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভ্রমণ ভিসা নিয়ে যারা ভারতে যাচ্ছেন তাদের সিংহভাগই ঈদের আগে যান। মূল উদ্দেশ্য থাকে ভারতের মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলা। এ কারণে ঢাকার ব্যবসায়ীরা হারিয়ে ফেলছেন ক্রেতাদের বড় একটা অংশ।

ঈদে কেনাকাটা করতে কয়েকবার ভারতে যাওয়া ধানমন্ডি এলাকার ফাহমিদা মাহবুব ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিবিসির সাংবাদিকের কাছে। তিনি বলছেন, দাম আর মান ছাড়াও আরেকটা বড় ব্যাপার হচ্ছে বিক্রেতাদের ব্যবহার। ভারতে যেকোনো দোকানে আপনি দুশো টাকার শাড়ি কিনতে চাইলে আপনাকে একশোটা শাড়ি দেখাতে বিরক্ত হবে না। কিন্তু বাংলাদেশের দোকানিদের মধ্যে সেটা নেই।

ফাহমিদা মাহবুব ক্ষোভ নিয়ে বললেন, ঢাকায় অনেকসময় পোশাক পছন্দ না হওয়ায় ক্রেতারা ফিরে গেলে অনেক আজে-বাজে কথা বলেন বিক্রেতারা। আমি নিজে দেখেছি।

কদিন আগে রেশমি নাহার (ছদ্মনাম) নামে এক সিরিয়র সাংবাদিক এলিফেন্ট রোডের এক দোকানে গিয়ে নাজেহাল হন। অনেক পোশাক দেখার পরও পছন্দ করতে না পারা আর বিক্রেতাদের বিরক্ত করার জন্যই তাকে নাজেহাল করা হয়। পরে বিষয়টি থানায় জানানো হলে- পুলিশ কর্মকর্তা গিয়ে দোকানিকে সতর্ক করে এসেছেন।

বিক্রেতাদের এমন বাজে ব্যবহারের শিকার হন এমন ক্রেতার সংখ্যা চারপাশে বহু রয়েছন। দেশের ক্রেতা আর বিক্রেতাদের মাঝে বিশ্বাসের জায়গা এভাবে নষ্ট হতে থাকলে ওপারে বাজার খুলে যাবেই- তা সে যেকোনো ভাবেই। তখন বাজে ব্যবহারকারী বিক্রেতাদের রাস্তা থেকে ক্রেতাদের ছিনতাই করে দোকানে আনা ছাড়াই আর কোনো বিকল্প থাকবে না।

সোনালীনিউজ/এন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!