• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা নেই জেলা পরিষদ সদস্যদের!


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬, ০৩:৩৬ পিএম
দায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা নেই জেলা পরিষদ সদস্যদের!

জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ওয়ার্ড সদস্যরা জানেন না তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী বা কতটুকু। তাদের মর্যাদা কী হতে পারে সেই বিষয়েও ওয়াকিবহাল নন তারা। স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই কাজকর্ম হতে পারে, এমনটি মনে করেই তারা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাদের মতে, সরকার যেহেতু নির্বাচন দিয়েছে, সেহেতু  কোনো না কোনো দায়িত্বও তাদের দেয়া হবে। আইনে জেলা পরিষদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে কিছু ব্যাখ্যা দেয়া থাকলেও পরিষদ সদস্যদের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া নেই। আইনে এ বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়নের কথা থাকলেও আইন প্রণয়নের পর গত ১৬ বছরে সরকার কোনো বিধিমালা তৈরি করতে পারেনি।

বুধবার পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিষদের চেয়ারম্যান ছাড়া সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে নির্বাচন হয়।

নির্বাচনে বিজয়ী ও বিজিত ওয়ার্ড সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বেশির ভাগ প্রার্থীই পদমর্যাদা ও দায়িত্ব-কর্তব্য না জেনে ও না বুঝেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনী সীমানার আয়তন বেশি মনে করে ক্ষমতা বেশি থাকবে, এমনটা মনে করে তারা আগ্রহী হয়ে নির্বাচনে এসেছেন।

এদিকে, এখতিয়ার না জানলেও বিজয়ী হতে মরিয়া ছিলেন সদস্যপদের প্রার্থীরা। গড়ে ৬৯ জন ভোটারের এই নির্বাচনে কেউ কেউ কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকে ভোটার-প্রতি এক থেকে দুই লাখ টাকা খরচ করেছেন বলে নির্বাচনের পর জানা যাচ্ছে।

জেলা পরিষদ আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০১৬) পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর কয়েকটি ধারায় জেলা পরিষদের কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে। পরিষদের বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক এ দুই ধরনের কাজ রয়েছে। বাধ্যতামূলক কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে- ১. জেলার সব উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা ২. উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা ৩. সাধারণ পাঠাগারের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ ৪. উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা বা সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত নয়, এমন জনপথ, কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন ৫. রাস্তার পাশে ও জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ ৬. জনসাধারণের ব্যবহারার্থে উদ্যান, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ ৭. সরকারি, উপজেলা পরিষদ বা পৌরসভার রক্ষণাবেক্ষণে নয় এমন খেয়াঘাটের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ ৮. সরাইখানা, ডাকবাংলো এবং বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ ৯. জেলা পরিষদের অনুরূপ কার্যাবলি সম্পাদনরত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা ১০. উপজেলা ও পৌরসভাকে সহায়তা, সহযোগিতা এবং উৎসাহ দেয়া ১১. সরকার কর্তৃক জেলা পরিষদের ওপর অর্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও ১২. সরকার কর্তৃক আরোপিত অন্যান্য কাজ।

আর ঐচ্ছিক কাজের মধ্যে রয়েছে- শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, অর্থনৈতিক কল্যাণ, জনস্বাস্থ্য, গণপূর্ত ইত্যাদি। এ ছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্রে টোল আদায়ের কাজও পরিষদের রয়েছে।

প্রসঙ্গত, আইনে জেলা পরিষদের কার্যক্রম সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়া থাকলেও এর সদস্যদের কাজের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা নেই। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণের জন্য আইনে বিধি প্রণয়নের বিধান রাখা হয়েছে। তবে ২০০০ সালে আইন প্রণয়ন করা হলেও এখন পর্যন্ত বিধি তৈরি করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘এই নির্বাচন প্রথমবারের মতো হয়েছে। দায়িত্বের বিষয়টি আমরা সেভাবে ওয়াকিবহাল নই। এই পদের কাজ কী, তা-ও জানি না। এ নিয়ে সরকার হয়তো প্রজ্ঞাপন জারি করে আমাদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব-কর্তব্য ঠিক করে দেবে। সরকার যখন নির্বাচন দিয়েছে, নিশ্চয়ই দায়িত্বও স্পষ্ট করবে।’

একই জেলার ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত সদস্য ফারুকুজ্জামান ফারুকও একই ধরনের মন্তব্য করেন। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমাদের পদের অধিক্ষেত্র কী, মর্যাদা বা ক্ষমতা কী, সেটা এখনো জানি না। আগে থেকে জানার চেষ্টাও করিনি। নির্বাচন সামনে এসেছে। তাই অংশ নিয়েছি। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কাজ আমাদের থাকবে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!