• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং


অর্থনৈতিক প্রতিবেদন ডিসেম্বর ৪, ২০১৭, ১২:৩৫ পিএম
দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং

ঢাকা : ব্যাংকিং সেবার আওতা বাড়াতে এ খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এজেন্ট ব্যাংকিং। যেসব এলাকায় ব্যাংকের শাখা নেই সেসব জায়গায় ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিতদের সেবা দিচ্ছে এ মাধ্যম। এতে ব্যাংকের ডেবিট কার্ডও ব্যবহার করতে পারছেন গ্রাহক। এজন্য বাড়তি কোন চার্জ দিতে হয় না। প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২টি হিসাব খোলা হয়েছে। যা গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৬টি। সে হিসাবে ৯ মাসের ব্যবধানে হিসাব সংখ্যা বেড়েছে চার লাখ ৯৩ হাজার ৭০৬টি। অর্থাৎ হিসাব বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আর এসব হিসাবে আমানত জমা হয়েছে ৯২২ কোটি আট লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটা বড় সোপান। এর মাধ্যমে অনেক টাকা ব্যয় করে ব্যাংকের শাখা না খুলেই ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠীকে সেবা দেয়া যাচ্ছে।

২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে। পরে ২০১৪ সালে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়ার হাত ধরে যাত্রা হয় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের। এ ব্যবসায় গতিশীলতা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সম্প্রতি একটি সংগঠনও গঠন করা হয়। যার নাম দেয়া হয় বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন (বাবা)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৬৫টি। আর এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৫টি। তবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খোলা হিসাবগুলোর অর্ধেকের বেশি খোলা হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে। এই ব্যাংকে হিসাব খোলা হয় ৬ লাখ ৮২ হাজার ৯৭৯টি। এছাড়া ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৮টি হিসাব খুলে দ্বিতীয় ব্যাংক এশিয়া আর ৬০ হাজার ৫৪২টি হিসাব খুলে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১৮টি তফসিলি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৩টি ব্যাংক মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকগুলো হলো- ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ জীবনে। গ্রাম থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমে আমানত এসেছে ৭৮৩ কোটি ১০ লাখ টাকা আর শহরে আমানত জমা হয়েছে ৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আমানত সংগ্রহের দিক দিয়েও প্রথম অবস্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, এটা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটা সোপান। প্রত্যেক ব্যাংক তো প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা খোলে না। সেসব অঞ্চলে মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতার বাহিরে রয়ে যায়। কিন্তু সেখানে কেউ একজন যেকোন ব্যাংকের আউটলেট খুলে বঞ্চিত মানুষদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে পারে। ব্যাংকগুলোকে এই সুযোগ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো হিসাব খোলা বা পরিচালনা করা ও রেমিট্যান্স আহরণের পাশাপাশি ঋণও বিতরণ করছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি আনতে সক্রিয় ভ‚মিকা রাখছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে এগিয়ে থাকা তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বমোট ৭৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেটগুলোতে নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, অ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন ধরণের ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব ধরণের ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়।

তবে এজেন্টরা কোনো চেকবই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বিদেশসংক্রান্ত কোন লেনদেনও করতে পারে না। এছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোন চেকও ভাঙানো যায় না। এজেন্টরা মোট লেনদেনের ওপর কমিশন পান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!