• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দীনেশচন্দ্র সেন স্বর্ণপদক পেলেন মাজহারুল ইসলাম ও সমরেশ দেবনাথ


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬, ০৫:৩২ পিএম
দীনেশচন্দ্র সেন স্বর্ণপদক পেলেন মাজহারুল ইসলাম ও সমরেশ দেবনাথ

বিশ্বখ্যাত পূর্ববঙ্গ গীতিকা ও ময়মনসিংহ গীতিকার মহান সংগ্রাহক আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের দুজন কৃতি সন্তানকে ‘আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন স্বর্ণপদক’-এ ভূষিত করা হয়েছে।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির শহীদ মুনীর চৌধুরী হলে মানিকগঞ্জের কৃতি সন্তান যুগস্রষ্টা লেখক, সংগ্রাহক, গবেষক ও আবিষ্কারক আচার্য ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেনের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। 

স্বর্ণপদক প্রাপ্তরা হলেন- বিশিষ্ট চিকিৎসক ও ভাষা সৈনিক প্রফেসর মির্জা মাজাহারুল ইসলাম এবং বিশিষ্ট কবি ও বিশ্বকল্যাণ রাষ্ট্র আন্দোলনের চেয়ারম্যান সমরেশ দেবনাথ। বাংলাভাষার উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁদের এ পদকে ভূষিত করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, বিশ্ববিখ্যাত গবেষক ও লোকসাহিত্যের সংগ্রাহক আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনকে এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। কালজয়ী এই মনীষীকে নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে আমাদের। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। 

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। পূর্ববঙ্গ গীতিকা ও ময়মনসিংহ গীতিকা সংগ্রহের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা লোক সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। সাধারণ বাঙালির জীবনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তাঁর সাহিত্যকর্মে।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুণীজনদের যথার্থ সম্মান দিতে জানেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগ রয়েছে। সাহিত্যিক ও শিক্ষকদের প্রতি রয়েছে তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা।

বক্তৃতায় তিনি দীনেশচন্দ্র সেনের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দীনেশচন্দ্র সেনের জন্মস্থান মানিকগঞ্জে দীনেশচন্দ্র সেনের নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য তাঁর সরকারে প্রতি অনুরোধ জানান।

বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন-এর অবদানের কথা তুলে ধরে ডেপুটি স্পিকার বলেন, অামাদের যেসব সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে সেসব প্রতিষ্ঠানের উচিৎ হবে এই মহান গবেষক, সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ-এর স্মৃতিকে স্মরণ করে প্রশংসনীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।

দীনেশচন্দ্র সেনের সাহিত্যকর্মকে চিরঞ্জীব করে রাখার জন্য দুই বাংলার পক্ষ থেকে বিশেষ সরকারি উদ্যেগ গ্রহণ করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন ডেপুটি স্পিকার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা ওয়াসার সাবেক চেয়ারম্যান ড. গোলাম মোস্তফা, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী কামরুল হুদা সেলিম, মানিকগঞ্জ সিঙ্গাইর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহম্মদ নুরুদ্দিন, ড. ঈশা মোহাম্মদ, কার্তিক বিশ্বাস ও কবি কামাল বারি।

এর আগে কলকাতা প্রেসক্লাবে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াকে সমাজসেবা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে অবদান এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি বিশেষ অনুরাগের জন্য দীনেশচন্দ্র সেন স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি, ভারত-এর সাধারণ সম্পাদক দেবকন্যা সেন ও ড. দীনেশচন্দ্র সেন গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চিন্ময় হালদার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আচার্য ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী একজন সাহিত্যিক, পল্লি ও লোকসাহিত্যের কালজয়ী আবিষ্কারক, গবেষক ও সংগ্রাহক। তিনি খেয়ে না খেয়ে, পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বহু পুঁথি সংগ্রহ করেন।

অনিদ্রা অনাহারে ক্লান্ত হয়ে তিনি বার বার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবু তাঁর কাজগুলো নিষ্ঠার সাথে করে যান। তিনি পূর্ববঙ্গ গীতিকা, ময়মনসিংহ গীতিকা, বৃহৎবঙ্গ, প্রাচীন বাংলার মুসলিম সাহিত্য-এর মতো অমর গ্রন্থ রেখে গেছেন আমাদের জন্য। তাঁর মতো বিরল প্রতিভার পক্ষেই সম্ভব ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর শিক্ষালাভের পর বাংলার উচ্চতর শ্রেণিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়া। 

উপাচার্য আরও বলেন, ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেনকে নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন- ‘ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলার পল্লি হৃদয়ের গভীর স্তর থেকে স্বত উচ্ছ্বসিত উৎস, অকৃত্রিম বেদনার স্বচ্ছ ধারা। বাংলা সাহিত্যে এমন আত্মবিস্মৃত রসসৃষ্টি আর কখনো হয়নি। এই আবিষ্কারের জন্য আপনি ধন্য।’

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে কবিতা আবৃত্তি করেন ভূমিপুত্র আবৃত্তি পরিষদের শিল্পী- ডা. তূর্ণা ত্রিবেণী মিথিলা, প্রবীর গোপাল রায়, জাকারিয়া তুষার, মিজানুল হক ও ড. সাঈদা শায়লা তাইফ। 

এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যৌথভাবে আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি, ভারত ও ড. দীনেশচন্দ্র সেন গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানটি সুন্দর ও সাবলিল উপস্থাপনা করেন সাঈদা শায়লা তাইফ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!