• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘদিনেও আইসিটি ল্যাব স্থাপন হয়নি কলেজগুলোতে


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৬, ২০১৬, ০৯:১১ পিএম
দীর্ঘদিনেও আইসিটি ল্যাব স্থাপন হয়নি কলেজগুলোতে

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য দেড় হাজার বেসরকারি কলেজকে প্রকল্পভুক্ত করা হলেও এখনো কোনো কলেজেই আইসিটি ল্যাব স্থাপন হয়নি। অথচ তা-ই ছিল ওই প্রকল্পের অন্যতম কাজ।

পাশাপাশি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত বেসরকারি কলেজগুলোর উন্নয়নেও ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। সেক্ষেত্রে ছিল ডিজাইন প্রণয়নে বিলম্ব, নির্মাণ সামগ্রী ল্যাবরেটরি পরীক্ষা না করা, নিম্নমানের মোজাইক ও দরজার কাঠ ব্যবহার, নকশা অনুযায়ী একাডেমিক ভবন নির্মাণ না করা, শ্রেণীকক্ষ নির্মাণে নকশার তোয়াক্কা না করা, জলছাদ ও চিলেকোঠা নির্মাণে অর্থের অপচয়, খেয়ালখুশি মতো পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন, ঠিকদারের গাফিলতিসহ নানা অনিয়ম। অথচ প্রকল্পটির পেছনে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এই পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যে অর্জনের লক্ষ্যে বেসরকারি নির্বাচিত কলেজগুলোর বর্ধিত ভৌত অবকাঠামো এবং আইসিটি শিক্ষা সামগ্রী সরবরাহের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন করার সরকারের উদ্দেশ্য পূরণেও সংশয় দেখা দিয়েছে সংশয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি কলেজে একটি করে আইসিটি ল্যাব স্থাপন করাই এই প্রকল্পের একটি অন্যতম কাজ। কিন্তু প্রকল্প মেয়াদের প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি কলেজেও এখন পর্যন্ত আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হয়নি। যদিও ইতিমধ্যে ৩৬৬টি কলেজের নির্মাণ কাজ পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। তাছাড়া সদ্যসমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০টি কলেজে আইসিটি ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হলেও গত মে মাস পর্যন্ত যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রক্রিয়াকরণের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি। তাছাড়া আইএমইডির পক্ষ থেকে মূল্যায়ন করতে ৫০টি কলেজ নমুনা হিসাবে নেয়া হলেও সেখানে মাত্র ২টি কলেজে কংক্রিটের টেস্ট, ৪টি কলেজে ইটের বিভিন্ন পরীক্ষা এবং ২টি কলেজে স্থানীয় ও বাইওে থেকে আনা বালুর ল্যাবরেটরি টেস্ট না করেই নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। যা নির্মাণ বিধিমালার পরিপন্থী। তাছাড়া নমুনাভুক্ত ৫০টি কলেজের মধ্যে ৩৪টি কলেজের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়নি। যেসব কারণে তা করা যায়নি তার অন্যতম হচ্ছে ঠিকাদারের গাফিলতি। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের অনেকে জানিয়েছেন- ঠিকাদারের গাফিলতি বা অবহেলার কারণে নির্মাণ কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন হয় না।

সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পে প্রতিটি কলেজে ভবিষ্যতে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের সংস্থান রেখে ৪তলা, ৫তলা ও ৮তলার ভিত দিয়ে ১ম তলা ও ২য় তলা নির্মাণ করার সংস্থান ছিল। ওই ভাবেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে নির্মাণ কাজ চলাকালে প্রকল্পভুক্ত প্রতিটি কলেজে ভিত অনুযায়ী ৪, ৫ ও ৮তলা নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে বহু কলেজে দোতলার ছাদে জলছাদ এবং চিলেকোঠা নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ওসব জলছাদ ও চিলেকোঠা ভাঙতে হচ্ছে। ফলে ওসব তৈরি করতে লাখ লাখ টাকা এবং ভাঙতে বাড়তি টাকা অপচয় হচ্ছে। তাছাড়া মূল প্রকল্পে প্রতিটি কলেজে ২ হাজার গ্যালন পানির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আরসিসি পানির ট্যাংক নির্মাণ করার কথা। কিন্তু আরসিসি পানির ট্যাংকের পরিবর্তে প্রতিটি কলেজে দেড় হাজার লিটার ধারণক্ষমতার প্লাস্টিকের পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে। পাশাপাশি ইতিমধ্যে নির্মিত একাডেমিক ভবনে শিক্ষার্থীদের বসার বা শ্রেণীকক্ষের জন্য ৬টি করে শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু কলেজে কক্ষগুলো অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অফিস এবং কলেজের দাফতরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া আইসিটি ব্যবহারিক পাঠদানের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানেই ডেমোনেস্ট্রেটর নিয়োগ দেয়া হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেয়। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু পরবর্তী কার্যক্রম বাড়িয়ে দেড় বছর সময় বৃদ্ধি করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় ১৩২ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৫৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের ৭৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ নির্মাণ কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর।

এ বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন (সংশোধিত) প্রকল্পের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম কিছু বলতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান কয়েকদিন আগে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!