• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুই ফরমুলায় এগুচ্ছে বিএনপি


সুজন আকন ও মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর  নভেম্বর ৩, ২০১৬, ০৪:২৪ পিএম
দুই ফরমুলায় এগুচ্ছে বিএনপি

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। তৃণমূল নেতাদের এ ব্যাপারে মেসেজ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি সরকারের দমন-পীড়ন, হামলা-মামলায় ঘরছাড়া-ক্ষতিগ্রস্ত নেতাদের সহায়তা করতে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। মাঠ পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন করে সক্রিয় করার কাজ চলছে আগে থেকেই। একই সঙ্গে চেষ্টা চলছে সরকারের ‘অগণতান্ত্রিক’ আচরণ তুলে ধরে সাধারণ মানুষের সমর্থন পক্ষে নেয়ার। আর এসবই করা হচ্ছে নির্বাচনকে সামনে রেখে।

গেল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেয়ার মতো কোনো ভুল দ্বিতীয়বার করতে চায় না দলটি। তাই নির্বাচনী প্রস্তুতি ছাড়া অন্যকোনো এজেন্ডা নিয়ে আর সময় ব্যয় করবে না হাইকমান্ড।

সূত্রমতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও যোগ্যদেরই আগামী নির্বাচনের জন্য বেছে নেয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা সরকারি দলের প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবে। তাছাড়া যারা সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হবে।

সূত্রমতে, প্রার্থী বাছাইয়ে চূড়ান্ত রূপ দিতে দুটি ফরমুলাকে সামনে রেখে এগুচ্ছে বিএনপি। প্রথমত, সম্ভাব্য যেসব প্রার্থীকে সরকার নানাভাবে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার চেষ্টা করবে, আগে থেকেই সেখানে কয়েকটি ধাপে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হবে। দ্বিতীয়ত, যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে সেখানে বিকল্প শক্তিশালী প্রার্থী বাছাই করা হবে। তবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এ সংক্রান্ত তালিকা দলের ভেতরেই কঠোরভাবে গোপন রাখা হবে। একমাত্র হাইকমান্ডের তত্ত্বাবধান ও সংরক্ষণে থাকবে এটি। 

সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে দলটিতে অনেক নতুন মুখও দেখা যাবে। রাজনীতি করেন না অথচ সমাজের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হিসেবে সুপরিচিত; এমন ব্যক্তির হাতে ধানের শীষের প্রতীক তুলে দেয়া হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থীর চেয়ে দলীয় প্রতীক বেশি প্রাধান্য পাবে। গত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলা হচ্ছে, সে সময় বিএনপি ও ওয়ান-ইলেভেন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ চরম ক্ষুব্ধ ছিল। যার প্রভাব পড়েছিল নির্বাচনে। সাধারণ জনগণের ক্ষোভের ভোটে আওয়ামী লীগের অনেক সাধারণ প্রার্থীও বিপুল সমর্থনে জয়লাভ করেছিলেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত করতে সেনা সমর্থিত সরকার যেভাবে ব্লুপ্রিন্ট করেছিল তা শেষ পর্যন্ত আর প্রয়োজন হয়নি। একই ভাবে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা আশা করছেন, পরবর্তী নির্বাচনেও এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সূত্রমতে, বিএনপি এখন চায় সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন করতে। আর দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নির্বাচন পর্যন্ত চুপচাপ থাকতে। এক্ষেত্রে তারা দুটো লাভের দিক বিবেচনা করছে। প্রথমত, দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী ভিত পাবে। আর দ্বিতীয়ত, বিএনপিও সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। আর যদি সরকারের দমনপীড়ন ও বিভিন্ন অপশক্তির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় চেপেও বসে তাতে বিএনপির বড় কোনো ক্ষতি হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে তারা।

দলের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, হাইকমান্ড মনে করে, সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনমনে যে ধারণা জন্ম নিয়েছে এবং যেভাবে ভেতরে ভেতরে বিএনপির ভোটব্যাংক তৈরি হয়েছে তাতে নির্বাচন নিয়ে দলটি খুবই আশাবাদী। এখন শুধু জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করার বিএনপি সেদিকেই এগোবে। সেক্ষেত্রে ভোটের আগে দলটি শুধু নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে জোরালো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবে। তারপরও শেষ পর্যন্ত যে কমিশনই আসুক বিএনপি নির্বাচনের মাঠে থাকবে। কেননা, হাইকমান্ড মনে করছে, নির্বাচনী প্রচারণাকালে ‘সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির’ বর্তমান চেহারা থাকবে না। অনেক কিছুই তখন পাল্টে যাবে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি দল। আগামীকালও যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই নির্বাচনে অংশ নিতে আপত্তি নেই বিএনপির। আগামী নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল নয়। নিরপেক্ষ নির্বাচনেই দেখা যাবে বিএনপির জনভিত্তি আছে কিনা। 

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!