• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বিচারক হত্যার এক যুগ আজ : শোক আর শ্রদ্ধায় স্মরণ


আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি সংবাদদাতা নভেম্বর ১৪, ২০১৭, ০৫:৩৩ পিএম
দুই বিচারক হত্যার এক যুগ আজ : শোক আর শ্রদ্ধায় স্মরণ

ঝালকাঠি: মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর)। জেএমবির বোমা হামলায় ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যার ১২তম বছর। ২০০৫ সালের এই দিনে জেএমবির বোমা হামলায় ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের দুই বিচারক (সিনিয়র সহকারী জজ) শহিদ সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে নিহত হন। আদালতে যাওয়ার পথে জজশীপের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে দুই বিচারককে নৃশংসভাবে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সৎ এবং নিষ্ঠাবান এ দুই বিচারক হত্যার ঘটনা ঝালকাঠিবাসীকে আজও গভীরভাবে শোকাহত করে। বিচারক হত্যার এক যুগে জেলাবাসী চাইছে দেশ থেকে চিরতরে জেএমবিসহ অপশক্তির বিনাশ হোক। সেদিনের স্মরণে শোক আর শ্রদ্ধায় দিনটি পালন করেছে ঝালকাঠি জেলা জজশীপ ও আইনজীবী সমিতি।

এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে পুষ্পার্ঘ্যসহকারে একটি শোক র‌্যালি ঘটনাস্থল পূর্ব চাঁদকাঠির জজ কোয়াটার সড়কে আসে। সেখানে বিচারকদ্বয়ের স্মরণে নির্মাণাধীন স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। পরে নিহত বিচারকদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়।

জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বজলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সায়েদুজ্জামান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয় আদালত) শামিমা আক্তার, ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম রুবাইয়া আমেনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহসহ জজ জজশীপের বিচারকগণ ও কর্মকর্তা কর্মচারী এবং পুলিশ প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির সদস্যরা এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। ঝালকাঠি আদালতের সরকারি কৌশুলি (পিপি) ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান রসূল কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন। বিকেলে আয়োজন করা হয়েছে দিবসটির আলোচনা সভা।

সেদিনের ঘটনা : সেদিন ছিল রোববার। সকাল ৯টা বাজতে তখনো ৫ মিনিট বাকি। ঝালকাঠি শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকায় জজ কোয়াটারের রাস্তায় দুই বিচারক সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে জজশীপের গাড়িতে অপেক্ষা করেন অপর এক জজ এম আউয়ালের জন্য। ড্রাইভার সুলতান যান তাকে আদালতে যাওয়ার জন্য ডেকে আনতে। আর এ সময় সুযোগ বুঝে জেএমবির আত্মঘাতী সদস্য ইফতেখার হাসন আল মামুন অপেক্ষমান দুই বিচারককে একটি চিরকুট পড়তে দেয়। তারা চিরকুটটি পড়তে থাকলে জজশীপের মাইক্রোবাসের জানালার ফাক দিয়ে জঙ্গি মামুন শক্তিশালী বোমা ছুড়ে মারে। মুহূর্তের মধ্যে বিকট শব্দে গাড়িটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। এতে দুই বিচারকের শরীর কিছু অংশ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনা স্থলেই মারা যান জজ শহীদ সোহেল আহমেদ। বোমার আঘাতে একটি পা উড়ে গিয়ে বরিশাল শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান জজ জগন্নাথ পাঁড়ে।

কোয়াটার থেকে বিলম্বে বের হওয়ায় এবং তাকে ডাকতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান জজ আউয়াল এবং ড্রাইভার সুলতান। এদিন ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় জেএমবির আত্মঘাতি সদস্য মামুন গ্রেপ্তার হয়। নৃশংস হত্যার ঘটনায় জজশীপের ড্রাইভার সুলতান হোসেন বাদী হয়ে ঝালকাঠি থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ঝালকাঠি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০০৬ সালের ২৯ মে জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংলাভাই ও ঘাতক মামুনসহ শীর্ষ ৭ জঙ্গির ফাঁসির রায় ঘোষণা হয়। উচ্চ আদালতও এ রায় বাহাল রাখে এবং ৬ জঙ্গির ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। বিচার চলাকালে পালিয়ে থাকে জেএমবির অপর এক সদস্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসাদুল ইসলাম আরিফ। পরে সে গ্রেফতার হলে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর খুলনা কারাগারে তারও ফাঁসি কার্যকর করা হয়। নিহত বিচারক সোহেল আহম্মেদের বাড়ি ভোলা জেলা শহরে এবং বিচারক জগন্নাথ পাড়ের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!