• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই মন্ত্রণালয়ের বিরোধে অনিশ্চিত সরকারের একাধিক প্


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২১, ২০১৬, ১২:২৩ পিএম
দুই মন্ত্রণালয়ের বিরোধে অনিশ্চিত সরকারের একাধিক প্

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

রাজধানীর দক্ষিণখান মৌজার ৭৮ একর জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মুখোমুখি অবস্থানে বিমান ও রেল মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও জমি নিয়ে বিরোধ জটিলতার নিরসন হয়নি। এই বিরোধের ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি অগ্রাধিকার প্রকল্প।

একপর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব দ্রুত সমস্যার সমাধানের কথা বলেন। কিন্তু বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়য় দুই মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই টাগ অব ওয়ার অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীপর্যায়ে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিমান ও রেল মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলওয়ে এবং বেসামরিক বিমানের মধ্যে ৫৫ বছর আগে জমি নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়। ১৯৬১ সালে তেজগাঁও বিমানবন্দর কুর্মিটোলায় স্থানান্তর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়। ঢাকা-টঙ্গী রেললাইন তখন তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর ও কুর্মিটোলা হয়ে টঙ্গী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ওই সময় প্রায় ৫০ একর রেলভূমি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের মধ্যে পড়ে। 

ওই জমি তৎকালীন এয়ারপোর্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (এডিএ) প্রয়োজন হয়। বিমানবন্দরের জন্য তখন রেলের জমি দিয়ে দেয়া হয়। তার বিকল্প হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়েকে ডাইভারশন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জোয়ারসাহারা ও দক্ষিণখান মৌজায় ১৭৫ একর জমি দেয়া হয়।

কিন্তু কয়েক বছর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নামে দক্ষিণখান মৌজার ৭৮ একর জমি রেকর্ড করা হয়। তার ফলে সমস্যা নতুনভাবে ঘনীভূত হয়। জমির মালিকানা বিরোধ নিরসনে ২০১১ সাল থেকেই দফায় দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। 

এমনকি দুই মন্ত্রণালয়ের ৩ জন করে সদস্য নিয়ে ৬ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। জমির যাবতীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা সাপেক্ষে পজেশন নকশাসহ পেপার প্রস্তুত করে ওই কমিটিভুক্ত রেল ও বেবিচক সদস্যদের পৃথকভাবে দুটি প্রতিবেদন দেয়ার কথা। কিন্তু রেলের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেয়া হলেও বেবিচক এখনো তা জমা দেয়নি।

সূত্র জানায়, বিরোধপূর্ণ জমির ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয় দাবি- বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কয়েক কর্মকর্তা তথ্য গোপন করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি কওে রেলের জমি দখল করে রেখেছেন। যেজন্য রেলওয়ে ওই জমি ফেরত পাচ্ছে না। বরং বিরোধপূর্ণ রেলওয়ের জমির ওপর বেবিচক বিভিন্ন সময় দখল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। 

তবে ইতিমধ্যে রেল কর্তৃপক্ষ ওই জমি থেকে জোর করে নির্মাণ করা দেয়ালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উচ্ছেদ করেছে। এর বিপরীতে কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করে বেবিচকের কিছু কর্মকর্তা গোপনে ও রাতের আঁধারে ওই জমিতে আবারো অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। বিরোধপূর্ণ জমিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। 

পাকিস্তান আমলেই ইস্টার্ন রেলওয়ে ও ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত এয়ারপোর্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মধ্যে জমির দখল গ্রহণ ও হস্তান্তরের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।

তারপরও সঠিক তথ্য গোপন করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বর্তমান সিটি জরিপে ৭৮ দশমিক ১৮ একর রেলভূমি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নামে খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। এ খতিয়ান ভুল ও ভিত্তিহীন। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে সরকারি এই জমির প্রকৃত মালিক বিমান মন্ত্রণালয়।

সূত্র আরো জানায়, জমি নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের জটিলতায় সরকারের অগ্রাধিকার কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রেলের ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন ইয়ার্ড রি-মডেলিং ও বিমানের জন্য জেট-১ ডুয়েল সাইডিং লাইন নির্মাণ, এমআরটি-৬, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-জয়দেবপুর সেকশনে ডিজি ডাবল লাইন নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যই জমি প্রয়োজন।

এমনকি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন তিনটি প্রকল্পের আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের লক্ষ্যেও ন্যূনতম সাড়ে ৮ একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু বিরোধের কারণে বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, পাইপলাইনের মাধ্যমে বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেসসহ অবকাঠামো নির্মাণের কাজও এগোচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধ মেটাতে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। 

তাতে বলা হয়, দুই মন্ত্রণালয়ের জমির বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দ্রুত সমাধান সম্ভব নয়। তবে সমাধানের সময় ভারতের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রাখতে হবে। বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাইডিং লাইন তৈরির জন্যও প্রয়োজনীয় স্থান রাখতে হবে। বিরোধপূর্ণ এলাকায় র‌্যাবকে দেয়া জায়গা থেকে তাদের স্থানান্তর করতে হবে।

এদিকে জমি নিয়ে বিরোধ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। সমাধানের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠক হয়েছে। সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।

অন্যদিকে একই বিষয়ে রেল সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বলেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে বিমান রেলের জমি নিজেদের বলে দাবি করছে। তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। এজন্য শিগগিরই বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে অনেক ছাড় দিয়েছে। কিন্তু এখন বেবিচকের কিছু কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনায় রেলের অগ্রাধিকার প্রকল্প আটকে গেছে।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!