• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘দুদক তদন্তের মান পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে’


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭, ১০:৫১ এএম
‘দুদক তদন্তের মান পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে’

ঢাকা: জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন এ্যান্ড ডেভালপমেন্ট (বিএমজেড)এর উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কমিশনের চার সদস্যের টিমের নেতৃত্ব দেন। এ টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ, এএফএম আমিনুল ইসলাম ও সচিব ড. মোঃ শামসুল আরেফিন, অপর পক্ষে সাত সদস্যের বিএমজেড প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন বিএমজেড এর প্রতিনিধি Dr. Angelika Stauder।

এই বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, জার্মান সরকার জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড’র মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দীর্ঘ দিনের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। কমিশনের কার্যক্রমে জিআইজেড এর অংশীদারিত্ব কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সত্যিই ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমে কিছু পলিসিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে কমিশনের কার্যক্রমে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালের শেষ দিকে কমিশনের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের দায়বদ্ধতা, সাক্ষী ও আলামত উপস্থাপনসহ  কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই কমিশনের প্রসিকিউসন অধিকতর কার্যকর হয়েছে। এ কারণেই কমিশনের মামলায় সাজার হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমিশনের মামলায় একসময় সাজার হার মাত্র ২০ শতাংশে নেমে এসেছিল, যা ২০১৬ সনে ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয় এবং ২০১৭ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত সাজার হার প্রায় ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যদিও কমিশন এতেও সন্তুষ্ট নয়। কমিশন চায় শতভাগ মামলায় সাজা।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্তেও গুণগত মান পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। অনুসন্ধান ও তদন্তে আইন ও বিধি অনুসারে টাইম লাইন অনুসরণের জন্য কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্কেচ ম্যাপ এবং ফৌজদারি দায়বদ্ধতা নির্ধারণের বিষয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলার তদন্তে গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষেই কমিশন এসকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসকল পদক্ষেপের কারণে কমিশনের মামলার সংখ্যা কমে যেতে পারে , তবে কোনো অবস্থাতেই মামলার গুণগত মানের সাথে আপোস করবে না কমিশন।

ইকবাল মাহমুদ আরো জানান, ঘুষ নির্মূলে কমিশন বছরের শুরু থেকেই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। এবছরের আজ পর্যন্ত ১৭টি ফাঁদ মামলা পরিচালনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে ঘুষ গ্রহণকারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। ঘুষ গ্রহণকারী সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের জন্য কমিশনের কর্মকর্তারা তাদের অফিস, বাসা, এমনকি হোটেলেও অভিযান চালিয়েছে। ঘুষ গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের ন্যূনতম কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। তাদের  নিজেদের এবং পরিবারে মর্যাদা রক্ষা করতে হলে অবশ্যই তাদেরকে ঘুষ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।

দুদক অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন , হট লাইনের অভিযোগের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই কয়েকটি  ফাঁদ মামলা সফলভাবে পরিচালনা করা হয়েছে। দুর্নীতির খবর  জানানোর জন্য কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন ১০৬ একটি প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধ কার্যক্রমে গৃহীত  বিভিন্ন  পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, সমন্বিত উদ্যোগ ব্যাতীত দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই কমিশন দুর্নীতি প্রদিরোধ কমিটি, সততা সংঘ এবং সর্বোপরি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

ইকবাল মাহমুদ জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন এ যাবৎ ৬৪ টি গণশুনানি করেছে। কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং অর্থায়নে ইতোমধ্যেই ৬৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর স্থাপন করা হয়েছে। এজাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করা।

ইকবাল মাহমুদ আরো জানান- দুদকের নিজস্ব আর্মড ইউনিট গঠন করা হয়েছে এবং নিজস্ব হাজতখানা নির্মাণ এবং তা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়  নীতিমালা প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা চাই দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে। দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই কমিশন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধেই দুদক ভুটানের দুর্নীতি দমন কমিশনের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা কেপিকেসহ বেশকয়েকটি দুর্নীতিবিরোধী বিদেশি সংস্থার সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বিএমজেড এর প্রতিনিধি Dr. Angelika Stauder তার বক্তব্যে দুর্নীতি কমিশনের বিভিন্ন কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে জানিয়ে, জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার ড.নাসিরউদ্দীন আহমেদ, এএফএম আমিনুল ইসলাম, দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন, জিআইজেড এর এভি রুল অফ ল’ প্রমিতা সেনগুপ্ত, জিআইজেড’র আন্তর্জাতিক কনসাল্ট্যান্ট রিচার্ডস মাইলস, জেআরসিপি প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর কৃষ্ণা চন্দ, পার্টনারশীপ ম্যানেজার মো. আলী রেজা প্রমুখ।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!