• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
‘ভিশন-২০৩০’তে খালেদার ঘোষণা

দুর্নীতি গুম খুনের অবসান হবে


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১১, ২০১৭, ১১:৩৮ এএম
দুর্নীতি গুম খুনের অবসান হবে

ঢাকা : রাজনীতিতে নতুন ধারা ও অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি সম্বলিত রূপকল্প তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

গতকাল বুধবার (১০ মে) বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ভিশন-২০৩০’ তুলে ধরেন তিনি। এ সময় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদায় বিশ্বাসী এবং আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করবে। নিষ্ঠুর আচারণ থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত রাখবে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন এবং অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটাবে।

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী কী করবে, তার একটি দলীয় কর্মপরিকল্পনা নিয়েই ‘ভিশন-২০৩০’। এতে ৩৭টি বিষয়ে ২৫৬টি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি। এর আগে গত সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দুপুরে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘ভিশন-২০৩০’ রূপকল্পের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীর কাছে তা তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপরসন। জানা গেছে, আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি ‘ভিশন-২০৩০’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রণয়ন করবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার। অনেকে মনে করছেন, এই ভিশন হলো আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার একটি সবুজ সংকেত।

‘ভিশন-২০৩০’ নামের এই রূপকল্পে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ, বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও ডেপুটি স্পিকার পদ, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার, প্রবৃদ্ধি দুই অংকে নেয়া, দেশীয় বিনিয়োগে নানা সুযোগ-সুবিধাসহ আড়াই শতাধিক দফা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বন্দি অবস্থায় অমানবিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো, আটক অবস্থায় মৃত্যুর তদন্ত, উচ্চআদালতে বিচারক নিয়োগে আইন, ন্যায়পাল গঠন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা ও তদারকি বাড়ানো, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা, প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, পুলিশের এএসআই ও কনস্টেবলদের ওভারটাইম ও রেশনের মাধ্যমে খাদ্যপণ্য দেয়ার পাশাপাশি সমমূল্যের অর্থ দেয়াসহ সার্বিক সুবিধা দেয়ার বিষয়গুলো ‘ভিশন-২০৩০’-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ‘একক নির্বাহী ক্ষমতা’ দেশে ‘একনায়কতান্ত্রিক শাসনের’ জন্ম দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবে। গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে। জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ব্যবস্থা বাতিল, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, জাতীয় সংসদ বহাল রেখে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন, সংবিধানের কিছু নির্ধারিত বিষয় সংযোজন, পরিবর্তন, রহিতকরণ, কিংবা অন্য কোনও পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য করার বিধান প্রবর্তন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্তকরণের বিধানসহ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করেছে। আগামীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে বিএনপি এসব বিতর্কিত অগণতান্ত্রিক বিধান পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনের বলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় ২৫ মিনিট দেরিতে। বেশ কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীকে এ সময় হুড়োহুড়ি করে বলরুমে ঢুকতে দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া আরো বলেন, গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন শ্রেয় এই ধারণা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ‘বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধান’ যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো সংস্কার করার অঙ্গীকারের কথাও বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে গণভোট ব্যবস্থা পুনপ্রবর্তন করবে এবং জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি জণগণের হাতেই রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায়। আমরা ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী নই। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল ভোট দেয়ার দিনে আবদ্ধ রাখতে চাই না।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া প্রতিশ্রুতি দেন, তার দল রাষ্ট্রক্ষমতা পেলে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও কারা ব্যবস্থানায় সংস্কার আনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংবিধান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠা করা হবে ন্যায়পালের পদ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে যখন আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তখন ক্ষমতাসীনদের দেয়া হচ্ছে দায়মুক্তি। বিএনপির সময়েই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল বলে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে এলেও খালেদা জিয়া দাবি করেন, তার দল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ বিশ্বে স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকি।

বিএনপি চেয়ারপারসন আরো প্রতিশ্রুতি দেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে ওই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করবেন এবং জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করবে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ধর্মের শিক্ষার প্রচার এবং শান্তি ও সম্প্রীতির চেতনাকে সুসংহত করার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাস দমনের একটি কর্মকৌশল প্রণয়ন করবে বিএনপি। খালেদা জিয়া বলেন, দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে তার দল সালিশী আদালত পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখবে। সুপ্রিম কোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় করবে। বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ সকল কালা কানুন বাতিল করবে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অবসান ঘটাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবদুল মান্নান, খন্দুকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, হারুন উর রশিদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন- আমানউল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, এ জেড মোহাম্মদ আলী, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়েল ভূইয়া প্রমুখ। এছাড়া প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবউল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, লেবার পার্টি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে কূটনীতিকদের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পলিটিক্যাল, ট্রেড, প্রেস অ্যান্ড ইনফরমেশন মিনিস্টার কাউন্সিলর কোনস্টানটিনস ভারদাকিস, ব্রিটিশ হাইকমিশনের হেড অব পলিটিক্যাল সেকশন আদ্রিয়ান জনস, জার্মান দূতাবাসের পলিটিক্যাল, কালচার অ্যান্ড  প্রেস সেকশনের থার্ড সেক্রেটারি ক্রিস্টিন জুরপ্যাল, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিক্যান সিটির সেকেন্ড সেক্রেটারি অ্যান্ড ডিএইচএম লুকা, মারাবেসে, তুরস্কের ডেপুটি হেড অব মিশন ওরহান আইয্যাক, চীনের পলিটিক্যাল সেকশনের থার্ড সেকেটোরি লি জুআংইউ রেড ক্রসের বাংলাদেশ শাকলা ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন বোরিস কেলেসেভিক, ডেনমার্কের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যাকব হাউগ্যার্ড, সুইডেনের হেডভিগ সোদারলিন্ড, ইউএনডিপির প্রতিনিধি চ্যারলেস ডেনহেজ, ইন্দোনেশিয়ার ইনফরমেশন, সোস্যাল অ্যান্ড কালচার সেকেন্ড সেক্রেটারি ফিতরি টিজ্যানদ্রা প্রিজান্তি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!