• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘দুর্যোগে ৬ বছরে ক্ষতি ১৮ হাজার কোটি টাকা’


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৬, ২০১৬, ০৯:৩৬ পিএম
‘দুর্যোগে ৬ বছরে ক্ষতি ১৮ হাজার কোটি টাকা’

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে ১৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

বিবিএস’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শস্য উৎপাদনে ৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষয়ক্ষতির ৩৬ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপরেই ক্ষতি হয়েছে নদী ভাঙনে, ৪ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। আর বসত বাড়ি ভেঙে ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।

রোববার (২৬ জুন) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশের দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান ২০১৫: প্রেক্ষিত জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শিরোনামে বিবিএসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।  

এই প্রতিবেদন তৈরিতে দুই ধাপে দেশের ৬৪ জেলার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৮০টি খানা থেকে ৩০টি প্রশ্নের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে সমীক্ষার নেতৃত্বদাতা মো. রফিকুল ইসলাম জানান।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ৪৩ লাখ ৬১ হাজার পরিবার রয়েছে। এ সব পরিবারে মানুষ রয়েছে ২ কোটি ২ লাখের বেশি, যা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১২ দশমিক ৬৪ ভাগ।

দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ থাকেন কাঁচা বাড়িতে। সেমি পাকা বাড়িতে থাকেন ১৭ শতাংশ মানুষ। আর পাকা বাড়ি রয়েছে ১০ শতাংশ পরিবারের। ঝুপড়িতে থাকছেন ৮৪ হাজার ৯৮৭টি পরিবার।

এসব এলাকায় ৫০ শতাংশ মানুষ পাকা টয়লেট, ৪৬ শতাংশ কাঁচা টয়লেট ব্যবহার করেন। আর এখনও খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করেন প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ মানুষ।

প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে, সৌর শক্তি ব্যবহার করছে ১০ শতাংশ পরিবার। বাকি প্রায় ৪০ শতাংশ এখনও কেরোসিন জ্বালিয়ে আলো পাচ্ছে।

দুর্যোগপ্রবণ এলাকার প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত, যাদের বড় অংশই (৩২) দিনমজুর। এসব এলাকায় ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ মানুষ। চাকরিতেও প্রায় সোন সংখ্যক মানুষ রয়েছেন। শিল্প খাতে নিয়োজিত মাত্র দশমিক ৩২ শতাংশ মানুষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সাড়ে ৩৮ শতাংশ মানুষের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা রয়েছে সাড়ে ৩২ শতাংশের। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন সাড়ে ১৮ শতাংশ, আর মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন মাত্র ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং ইউএন স্ক্যাপের পরিসংখ্যানবিদ ডেনিয়েল ক্ল্যার্ক ও বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলো যেভাবে পরিবেশ দূষণ করছে তা অব্যাহত থাকলে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে না।

তিনি বলেন, গত এক শতকে ১০০ কোটি থেকে বেড়ে মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪৩ কোটিতে। বিপুল জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে শিল্পের বিকাশ করতে অনেক দেশ জলবায়ুর ক্ষতি করছে। মাত্র পাঁচটি দেশ বিশ্বব্যাপী অর্ধেকের বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে।

“বাংলাদেশে কয়েকটি ইটভাটা ছাড়া পরিবেশ দূষণকারী তেমন কোনো শিল্প নেই। পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের তেমন কিছু করার নেই।”

মন্ত্রী আরও বলেন, বিদ্যুতের ব্যবহার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মোট আয়সহ বেশ কিছু সূচকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার মানুষ পিছিয়ে রয়েছেন। তবে এসব এলাকায়  সুপেয় পানির ‘তেমন কোনো সমস্যা’ নেই।

ভবিষ্যতে হাওর ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকার উন্নয়নে আলাদা প্রকল্প নেয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর আওতায় উপকূলের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ ও শিক্ষার আওতায় আনা হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় এলাকাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের সব উপকূলীয় এলাকা একটি বড় ধরনের বাঁধের ভিতরে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!