• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
ফিরে দেখা ২০১৬

দেশে-বিদেশে সুসংহত অবস্থানে আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১, ২০১৭, ১২:২২ পিএম
দেশে-বিদেশে সুসংহত অবস্থানে আ.লীগ

বড় কোনো সংঘর্ষ বা রাজনৈতিক কোন্দলে জড়ানো থেকে বেশ ভালোভাবেই নিজেকে সামলেছে ঐতিহ্যবাহী দলটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য ২০১৬ সালটি ছিল বেশ নিরুপদ্রব। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে টানাপড়েন ছিল, সেটি অনেকটাই কেটে গেছে বিদায়ী বছরে। দেশ-বিদেশে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে আরো সুসংহত হয়েছে দলটির অবস্থান। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পরাশক্তিসমূহের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সুসম্পর্ক। যা এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি তৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। 

বিদায়ী বছরে দলটির একটি বড় আলোচনার বিষয় ছিল জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান। এর মধ্য দিয়ে নতুন সাধারণ সম্পাদক পেয়েছে দলটি। দেশে রাজনীতির মাঠে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন, ২০তম জাতীয় সম্মেলন, জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলনের মতো কর্মকাণ্ডে সাজানো ছিল আওয়ামী লীগের ২০১৬ সাল। তবে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলা করতে না হলেও ভোটের মাঠে বিএনপি ও নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে।

২০তম জাতীয় সম্মেলন : বছরের শুরু থেকেই জাতীয় সম্মেলনের বিষয়টি আলোচনায় ছিল। প্রথমে ২৮ মার্চ দলটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সেটা বাতিল হয়ে নতুন তারিখ ঘোষণা হয় ১০-১১ জুলাই। পৌরসভা নির্বাচনের কারণে সেই তারিখও পিছিয়ে যায়। অবশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২২-২৩ অক্টোবর। এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নতুন কমিটি নির্বাচন করা হয়।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এ অধিবেশনকে ঘিরে সপ্তাহব্যাপী চলে জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে এর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সাধারণ সম্পাদকের পদটি। প্রথম থেকে এ পদে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল দুবারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের। তার পাশাপাশি ছিলেন ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজনের নাম। শেষ পর্যন্ত অনেক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের তেমন বড় কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলেও ফেব্র“য়ারি মাসেই তফসিল ঘোষণা করা হয় প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইউনিয় পরিষদ নির্বাচন (ইউপির)। তখন থেকে শুরু হয় নির্বাচনের প্রস্তুতি। মোট ছয় ধাপে চার হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির ভোট হয় ২২ মার্চ। এরপর ৩১ মার্চ ৭১০টি ইউপি, ২৩ এপ্রিল ৭১১টির, ৭ মে ৭২৮টি ইউপি, ২৮ মে ৭১৪টি ইউপি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হয়। এ নির্বাচন নিয়ে সারা বছর ছিল বিতর্ক। জালভোট, মারামারি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীন দলের লোক নির্বাচিত হওয়া। পাশাপাশি নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে বশে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে।

ছয় ধাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ২৬৭২টি ইউপিতে জয় পায়। বিএনপি পায় ৩৭২ ও জাতীয় পার্টি ৫৭টি। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৮৮০টি ইউপিতে, যার বেশির ভাগই আবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন : বছরের শেষভাগে তুমুল উত্তেজনা নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করে রাখে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় দেশের বহুল আলোচিত এ নির্বাচন। নানা শঙ্কা, আশঙ্কা, আর নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।

জেলা পরিষদ নির্বাচন : ২০১৬ সালের প্রথম থেকেই শুরু হয়ে একেবারে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী ব্যস্ততা ছিল আওয়ামী লীগের ঘরে। ২৮ ডিসেম্বর ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত না হলেও এ নির্বাচনে দল থেকে প্রার্থীদের সমর্থন দেয়া ও নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড একাধিক বৈঠক করে ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দলটি। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে ২১টি জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। বাকি জেলাগুলোরও বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের দখলে যায়। বিদ্রোহী প্রার্থী যারা জিতেছেন তারাও এই দলেরই নেতা। 

জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মসূচি : ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ দল ও সরকার হিসেবে বেশি বিপদে ও আলোচনা ছিল জঙ্গি তৎপরতার ঘটনায়। বছরের মাঝামাঝিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি অর্ধশত নারী-পুরুষকে জিম্মি করে পাঁচজনের একটি জঙ্গি দল। এ হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়। এই ঘটনায় চাপ বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর। এর ছয় দিন পরে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা হয়। এতে দুই পুলিশ, এক হামলাকারী এবং একজন নারী নিহত হয়। জঙ্গি হামলার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জঙ্গিবিরোধী সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ এবং মানববন্ধন করে দলটি। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মানববন্ধন হয় ঢাকায়। রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানববন্ধন করে ১৪ দল।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত এমপি বদি : ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে। তার মধ্যে অন্যতম একটি ঘটনা হল দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হন আওয়ামী লীগের কক্সবাজার-৪ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি।

গত ২ নভেম্বর সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বদিকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩। তবে গত ১৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন লাভ করেন বদি। ২০ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান এই আলোচিত-সমালোচিত সংসদ সদস্য। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই
 

Wordbridge School
Link copied!