• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশে মাদকসেবী ৭৫ লাখ, ব্যবসায় জড়িত লক্ষাধিক


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৭, ২০১৬, ১২:৩৭ পিএম
দেশে মাদকসেবী ৭৫ লাখ, ব্যবসায় জড়িত লক্ষাধিক

দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা ৬৫ থেকে ৭৫ লাখ। আর দেশে এক লাখেরও বেশি লোক সরাসরি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নারী এবং শিশুকিশোররাও মাদক ব্যবসা ও বহনের সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ মাদক ব্যবসা। মাদকাসক্তদের ৪৫ শতাংশই বেকার। মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই ঘটছে খুনের ঘটনা। বর্তমানে মাদকসেবীদের মধ্যে ইয়াবা ও ফেনসিডিল গ্রহণকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে মাদকাসক্তদের প্রায় ২০ শতাংশই ইয়াবায় আসক্ত। 

মাদকাসক্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। ইয়াবা আসক্তদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। এদিকে, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে যে প্রায় ৬৫ থেকে ৭৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত রয়েছে তার মধ্যে শুধু হেরোইনে আসক্তের সংখ্যা কমপক্ষে ২০/২১ লাখ। 

তাদের এ মাদক সেবনে প্রতিবছর খরচ হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। আর ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা আনুমানিক ১৪/১৫ লাখ। মাদক গ্রহণকারী অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। বেশির ভাগ মাদকাসক্তই বন্ধুদের প্ররোচনায় মাদকে আসক্ত হয়। বন্ধুর প্ররোচনায় পড়ে প্রথম মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেছে প্রায় ৭৭ শতাংশ মানুষ। বাড়ছে শিশু মাদকাসক্তের সংখ্যাও। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বাড়ছে মাদকাসক্তের হার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০১৫) এসব তথ্য জানা গেছে। 

এদিকে, ডিএনসির তৈরি করা বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছর মাদকাসক্ত রোগীদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নিয়েছে তাদের ১৯.১৪ শতাংশ শুধু ইয়াবায় আসক্ত। ২০১৪ সালে এই হার ছিল ১৭.৯৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়াবায় আসক্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি কমছে ফেনসিডিলের রোগী। গত বছর ছিল ৪৪.৩ শতাংশ, যা ২০১৪ সালে ছিল ৪৩.১৮ শতাংশ। 

এছাড়া প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর ১৩.৩৭ শতাংশ মাদকাসক্ত ছিল শিক্ষর্থী, যা ২০১৪ সালে ছিল ৯.৭২ শতাংশ। গত বছর মানসিক অশান্তির কারণে শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ মাদকে আসক্ত হয়। আর পারিবারিক কারণে ১.৪৭ শতাংশ। পেশাগত অবস্থানের দিক থেকে মাদকাসক্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো বেকার। 

গত বছর এই হার ছিল ৪১.৮৪ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৫১.৪২ শতাংশ। ডিএনসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছর দেশের সরকারি চারটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ৯ হাজার ৪৭৪ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে সাত হাজার ২৬৬ জন এবং ভর্তি করা হয় দুই হাজার আটজনকে। 

এক বছরে দেশের শতাধিক অনুমোদিত বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছে ছয় হাজার ৯১২ জন মাদকাসক্ত রোগী। এই হিসাবে বছরে ১৬ হাজার ৩৮৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থাগুলো যে পরিসংখ্যানের কথা জানায় তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে মেলে না। 

এনজিওগুলোর সরবরাহ করা পরিসংখ্যান অনেক ক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণ। আর মাদকের এ বিশাল চাহিদার কারণে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ কোনো মারাত্মক মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র এ দেশকে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের করিডর হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কমপক্ষে ৩০টি রুট দিয়ে স্থল ও নৌপথে এ দেশে মাদক ঢুকে উন্নত বিশ্বে যাচ্ছে বিমান ও জাহাজে করে। 

সূত্রানুযায়ী, দেশে চলতি বছরের শুরু থেকে গত মাস পর্যন্ত রাজধানীতেই গোয়েন্দা পুলিশ ও অপরাধ তথ্য বিভাগ এবং র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ৩ শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতা। এর মধ্যে র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রায় ১০০ তরুণ-তরুণীকে শুধু ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। 

মাদক নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মতে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইয়াবা সিন্ডিকেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, অভিজাত হোটেলের লবি-বারসহ অনেক জায়গায় চলছে ইয়াবা বিক্রি ও সেবন। 

এক সময় ইয়াবা সেবন অভিজাত নেশাখোরদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালে চলে এসেছে নেশার এই দ্রব্যটি। সে কারণে প্রতিনিয়তই ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে বিক্রিও। ইয়াবা আমদানি ও বিক্রির কাজে রাজধানীর কমপক্ষে ৫০টি সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে। এতে রোহিঙ্গারাও আছে বলে প্রমাণ মিলেছে। ডিলারদের নির্ধারিত এজেন্টরা গাড়িতে করে নির্ধারিত স্থান বা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয় ইয়াবা।

মাঝে-মধ্যে দু’তিনজন ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে ফের সক্রিয় হয় ব্যবসায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হেরোইন-ফেনসিডিলের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় নেশাখোরদের মধ্যে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ইয়াবা। সহজলভ্য হওয়ায় এই নেশা দ্রব্যটির দামও পড়ে গেছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, রাজধানীতে সক্রিয় ৪০/৪৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী মোবাইল ফোনে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অভিযানে তাদের অনেকেই গ্রেফতার হচ্ছে। মনোচিকিৎসক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ইয়াবা নামের এই মাদকদ্রব্যটি দেহের মারাত্মক ক্ষতি করে। 

এ মাদক সেবন করলে দেহের রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। অনিদ্রা হতে পারে এবং এ থেকে নানা দৈহিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইয়াবা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি ও ক্ষুধামন্দা হতে পারে। সেবনকারীর ব্রেইন স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর ইনজেকশন ফর্মে বেশি ডোজ নিলে আকস্মিক খিঁচুনিতে মৃত্যুও হতে পারে।

সোনালিনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!