• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে যেভাবে শুরু হলো ‌‘টক শো’


শাহজাহান সরদার সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭, ০১:০৬ পিএম
দেশে যেভাবে শুরু হলো ‌‘টক শো’

ঢাকা: শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের (১৯৯৬) সরকারের শেষ দিকে বাংলাদেশে বেসরকারি টিভি’র দ্বার খোলে। প্রথম বেসরকারি টিভি হিসেবে অনুমতি পায় ইটিভি।

পরে এটিএন এবং চ্যানেল আইকে বাংলাদেশ থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনুষ্ঠান এবং সংবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হয়। এ দুটি স্যাটেলাইট চ্যানেল এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে অনুষ্ঠান প্রচার করে আসছিল। তখন সংবাদ প্রচারের অনুমতি ছিল না। শুধু সিনেমা, নাটক দেখানো হতো।

ইটিভিও প্রথম দিকে ৬ ঘণ্টা পরে ১২ ঘণ্টা এবং পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা অনুষ্ঠান প্রচার করে। এটিএন বাংলা এবং চ্যানেল আই অনুমতি পাওয়ার পর সীমিত আকারে সংবাদ প্রচার শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে কোন টেলিভিশনে টকশো প্রচার করা হতো না।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি’তে বিশেষ বিশেষ দিবসে আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল। ইটিভি আগে থেকে সম্প্রচার শুরু করলেও টকশো চালু করেনি। সে সময় বিবিসি, সিএনএন-এ খুব জনপ্রিয় টকশো হতো।

মনে মনে আমি চিন্তা করলাম টকশো চালু করা সম্ভব কিনা। জানতে পারি ইটিভি নিজেরা টকশোর পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে থাকে। বাকি দুই এটিএন বাংলা এবং চ্যানেল আই। সে সময় এই দুটি চ্যানেল থেকে স্লট (নিদির্ষ্ট সময় ক্রয়) নিয়ে অনেকে নাটকসহ ছোটখাটো অনুষ্ঠান প্রচার করে আসছিল।

আর চ্যানেলগুলোর জন্য নিজস্ব অনুষ্ঠানও ছিল। টকশো চালু করতে হলে হয় স্লট নিতে হবে অথবা মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে উপস্থাপক হিসাবে কাজ করতে হবে। এ সময় আমারই স্নেহভাজন সৈয়দ বোরহান কবীরের বেশ কিছু অনুষ্ঠান এটিএন ও চ্যানেল আই’তে প্রচার হতো। এককালে খুব ভালো সাংবাদিক ছিলেন।

একটি রিপোর্টের কারণে এরশাদ সরকারের আমলে গ্রেফতারও হয়েছিলেন বোরহান। পরে সাংবাদিকতা ছেড়ে মিডিয়া ব্যবসা শুরু করেন। বিটিভিতে ‘পরিপ্রেক্ষিত’ নামে তার অনুসন্ধানী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনচিত্র নিমার্ণসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে স্লট নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করেন।

একদিন বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার দু’তিন দিন পরের ঘটনা এটি। আগেই বলেছি বোরহান আমার খুবই স্নেহভাজন। আমার প্রস্তাবটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিলেন। বললেন, আমরাই করব। আপনি পরিকল্পনা করুন। আমি স্লট ঠিক করছি। কিন্তু সমস্যা হলো স্পন্সর। চ্যানেলের নিজস্ব অনুষ্ঠান হলে দায়-দায়িত্ব তাদের। আর স্লট নিলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিদির্ষ্ট পরিমান অর্থ দিতে হয়। ভালো স্পন্সর ছাড়া এত অর্থ পাওয়া যাবে না।

বোরহান বললেন, আপনি চেষ্টা করলেই পেয়ে যাবেন। তার কথা মতো উদ্যোগ নিয়ে দু’দিনের মধ্যেই স্পন্সর জোগাড় হয়ে যায়। ত্রিশ মিনিটের টকশো। পাঁচ মিনিট বিজ্ঞাপন। তখনকার নামকরা ব্র্যান্ড যমুনা গ্রুপের অ্যারোমেটিক কসমেটিকস্ আর নাভানা গ্রুপের বাজারে নতুন আসা নাভানা ব্যাটারি স্পন্সর হিসেবে পাওয়া গেল।
স্পন্সর জোগাড় হওয়ার পরই শুরু হলো প্রস্তুতি।

মাত্র তিনদিনের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন। তখন যেহেতু নির্বাচনের সময় ছিল। তাই আমরা এই টকশোর নাম দিলাম ‘নির্বাচন ভাবনা’। সৈয়দ বোরহান কবীরের ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার ব্যানারে প্রস্তুতির পরদিন থেকেই শুটিং শুরু হলো। খরচ কমানোর জন্য আমরা কোনো স্টুডিও ভাড়া করলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম যাদের নিয়ে টকশো করা হবে তাদের কারো না কারো বাসায়ই শুটিং হবে।

চতুর্থ দিনের মাথায় প্রথম শুটিং। আমার জানামতে দেশের প্রথম এই টকশো ‘নির্বাচন ভাবনা’ প্রথম দিনের অতিথি ছিলেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, দুই সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও রিয়াজ উদ্দিন আহমদ। উপস্থাপক আমি। শুটিং হয় ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের বাংলামোটর কনকর্ড টাওয়ারের বাসায়।

বড় বড় স্ট্যান্ডসহ তিনটি ক্যামেরা কয়েকটি লাইট, মনিটর ইত্যাদিসহ অনেক যন্ত্রপাতি। তারপর আছেন ক্যামেরা ম্যান, লাইট ম্যান, ম্যাকআপ ম্যানসহ অন্যান্য সহযোগী। বিশাল টিম। বাসা ভর্তি লোক। এরই মধ্যে আমরা শুটিং করলাম প্রায় ৩৫ মিনিট। পরে আবার অন্য স্থানে এডিটিং।

এসব শেষ করে শুক্রবার রাত ৯টায় প্রচার হলো আমার উপস্থাপনায় টকশো ‘নির্বাচন ভাবনা’র প্রথম পর্ব। এরপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার প্রচার হতো ‘নির্বাচন ভাবনা’। যেহেতু স্পন্সরের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল তিন মাস। টকশোটিও ছিল ‘নির্বাচন ভাবনা’ তাই আপনা-আপনিই নির্বাচনের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়।

এখানে বলে রাখি এটিএন-এ নির্বাচন ভাবনা শুরু হওয়ার পর পর চ্যানেল আইতেও একটি নির্বাচনী টকশো চালু করা হয়। সেটি উপস্থাপনা করতেন বর্তমানে ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। টকশো ‘নির্বাচন ভাবনা’র প্রযোজক ছিলেন আমারই আরেক স্নেহাস্পদ সাংবাদিক আহমদ ফারুক হাসান। তিনি সর্বশেষ যুগান্তরের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। ভালো লেখাপড়া জানা কাজ পাগল ফারুক হাসান সে সময় ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ফারুক তখন কোনো সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। পরে যুগান্তরে যোগদান করেন। মাঝে কিছুদিন অন্য কাগজেও কাজ করেছেন। আমি যখন যুগান্তরের উপ-সম্পাদক তখন তিনি ছিলেন বার্তা সম্পাদক। কাজ পাগল এই ফারুক কর্মরত অবস্থায় যুগান্তর অফিসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ‘নির্বাচন ভাবনা’ টকশো করতে গিয়ে তার অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

  • লেখক: সম্পাদক, প্রকাশিতব্য দৈনিক বাংলাদেশ জার্নাল

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!