• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের প্রথম নারী বিচারপতির নাজমুন আরা সুলতানার বিদায়


আদালত প্রতিবেদক জুলাই ৬, ২০১৭, ০১:৫৫ পিএম
দেশের প্রথম নারী বিচারপতির নাজমুন আরা সুলতানার বিদায়

ঢাকা: দেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা আজ বিদায় নিলেন। বিচারপতি হিসেবে তিনি ব্যর্থ নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, বিচারক হিসেবে আমি সফল। তা না হলে বিচার বিভাগে ৪শ’ নারী বিচারক নিয়োগ পেত না। আমি আত্মতৃপ্তি নিয়ে বিদায় নিলাম। আমি অন্যায়ভাবে কোনো বিচার করিনি। ২০১১ সালে এই বিচারপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ১নং আদালতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। দেখতে দেখতে তিনি বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। আজ বৃহস্পতিবারই হচ্ছে তার শেষ কর্মদিবস। আগামীকাল ৭ জুলাই শেষ হচ্ছে তার কর্মজীবন। এদিন তার বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু শেষ দিনটি শুক্রবার হওয়ায় এ কারণে আজ আপিল বিভাগের একনম্বর বেঞ্চে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। এরপর বিকেলে বিচারপতিদের পক্ষ থেকে জাজেস লাউঞ্জে তাকে সংবর্ধনা জানানো হবে।

সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি থাকা যায়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই দেশের প্রথম নারী বিচারপতিকে অবসরে যেতে হচ্ছে। শুধুই উচ্চ আদালতে প্রথম নারী বিচারপতি ছিলেন না তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের বিচার বিভাগে তিনিই ছিলেন প্রথম নারী বিচারক।

শিক্ষা ও কর্মময় জীবন
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ১৯৫০ সালের ৮ জুলাই মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা চৌধুরী আবুল কাশেম মইনুদ্দিন। মা বেগম রাশিদা সুলতানা দ্বীন। পিতা-মাতা দু’জনই প্রয়াত। মা ছিলেন ময়মনসিংহ রাঁধাসুন্দরী গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা। এ কারণে তার শৈশব কেটেছে ময়মনসিংহে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। শিক্ষাজীবনও কেটেছে ময়মনসিংহেই। তিনি ময়মনসিংহ সদরের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬৭ সালে মুমিনুন্নেসা উইমেন্স কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করার পর ময়মনসিংহ ল’ কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ওই বছরের জুলাইয়ে তিনি ময়মনসিংহ জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশায় পা রাখেন। তার স্বামী কাজী নুরুল হক। দুই ছেলে সন্তানের মা তিনি। বড় ছেলে কাজী সানাউল হক উপল থাকেন অস্ট্রেলিয়া। ছোট ছেলে এহসানুল হক সুর্য।

তিনি ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মুনসেফ হিসেবে (সহকারি জজ) নিয়োগ পান। তিনিই দেশের প্রথম নারী বিচারক। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনিই প্রথম নারী জেলা জজ ছিলেন। এরপর কর্মদক্ষতার কারণেই নিম্ন আদালত থেকে ধীরে ধীরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে পা রেখেছেন। ২০০০ সালের ২৮ মে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর ২০০২ সালের ২৮ মে হাইকোর্টে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।

নারী বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ উইমেন জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডব্লিউজেএ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবী সংস্থায় দুইবার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইতালী, জাপান, আমেরিকা, চীন, ইরান, ইরাক, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, পানামা, হংকং সফর করেন।

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ফতোয়া বিষয়ক মামলা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির মামলা, চারদলীয় জোট সরকার আমলে বাদপড়া ১০ বিচারপতির মামলা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্বলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ বিষয়ক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বিচারক ছিলেন। এর বাইরে গত ১৭ বছরে উচ্চ আদালতে অসংখ্য মামলায় রায় দিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!