• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
জঙ্গিবাদের লিফলেট প্রকাশ

দেশের ৩৩ ছাপাখানা গোয়েন্দা নজরদারিতে!


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩১, ২০১৭, ০৪:১০ পিএম
দেশের ৩৩ ছাপাখানা গোয়েন্দা নজরদারিতে!

ঢাকা : জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত ও সরকার-রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় সারা দেশে ৩৩টি প্রিন্টিং প্রেস (ছাপাখানা) সক্রিয় রয়েছে। সরকার উৎখাত, রাষ্ট্রকে অকার্যকর করতে গোপনে লিফলেট, পোস্টার, বই ও পুস্তিকা প্রকাশ করে আসছে এসব ছাপাখানা। এতে দেশের যুবসমাজ জঙ্গিবাদে যেমন ধাবিত হচ্ছে, তেমনি সরকার এবং রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছেও নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। 

এর প্রভাব পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর পড়ছে। সারা দেশের ২ হাজার ৭২২টি ছাপাখানা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে এ তথ্য পেয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গত ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সম্পর্কিত ১৮১ পৃষ্ঠার গোপন প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পৌঁছে গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে নিবন্ধিত ছাপাখানার সংখ্যা ১ হাজার ৪৮৭টি। অনিবন্ধিত বা অননুমোদিত রয়েছে ১ হাজার ২৩৫টি। এই নিবন্ধিত/অনিবন্ধিত ২ হাজার ৭২২ ছাপাখানার মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও দলটির ছাত্র সংস্থা ইসলামী ছাত্রশিবির মালিকানাধীন রয়েছে ১২০টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় জড়িত ৩৩টি ছাপাখানার বড় একটি অংশ জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। অনেক মালিক আবার এক সময় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিল। এ ছাড়া জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ১২০ ছাপাখানায়ও সরকারবিরোধী প্রকাশনা বের করার পর দলীয় সংগঠনে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ও এরা সরকার উৎখাতে পোস্টার, লিফলেট প্রকাশের পর জনগণের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করে।

জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ছাপাখানাগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৯, চট্টগ্রামে ৩২, সিলেটে ৯, রাজশাহীতে ১২, রংপুরে ১৪, খুলনায় ২০ এবং বরিশালে রয়েছে ৪টি। রাজধানীতে থাকা জামায়াত-শিবিরের ছাপাখানাগুলোর একটি বড় অংশই পুরান ঢাকা এবং বড় মগবাজারে অবস্থিত।

ছাপাখানায় প্রকাশনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মৌলবাদ ঠেকাতে ৫ দফা সুপারিশও করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে। এগুলো হলো- রাষ্ট্রবিরোধী নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত ছাপাখানা বন্ধসহ মালিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ; এসব ছাপাখানার মধ্যে যেগুলো অনিবন্ধিত অথচ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত সেগুলো যেন চেষ্টা করেও নিবন্ধন না পায়; জেলাভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে অভিযান পরিচালনা;

পরবর্তী ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি; নিবন্ধিতদের কঠোর নির্দেশ ও নীতি মেনে চলারও নির্দেশনা প্রদান। অপরাধে জড়িত ও সন্দেহের তালিকায় থাকা ছাপাখানায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করার কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে নিবন্ধিত ছাপাখানাগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৭৮টি, চট্টগ্রামে ২৫৫, সিলেটে ১৩৬, রাজশাহীতে ২৫৮, রংপুরে ৮০, খুলনায় ৪৩১, বরিশালে ৪৯টি রয়েছে। অনিবন্ধিত তালিকায় সর্বোচ্চ ঢাকায় ৪৫৯, চট্টগ্রামে ২৫৭, সিলেটে ৭২, রাজশাহীতে ২৫৫, রংপুরে ৭১, খুলনায় ৯২ এবং বরিশালে ২৯। 

ঢাকার অনিবন্ধিত ছাপাখানাগুলোর মধ্যে অন্যতম পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার ২য় লেনের জাহিদ প্রিন্টিং প্রেস, চৌধুরী প্রিন্টার্স, জিহাদ প্রিন্টিং প্রেস, অহনা প্রিন্টার্স, স্টার প্রিন্টিং প্রেস, আরিফ অ্যান্ড ব্রাদার্স, আকাশ ট্রেডার্স, আলী অ্যান্ড ব্রাদার্স, এবিএস কম্পিউটার, রাফি প্রিন্টিং সাপ্লাইয়ার, নূর ডাই কাটিং, লিটল বুক বাইন্ডার্স অন্যতম।

আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে যতবার জঙ্গিরা আটক হয়েছে প্রায় ততবারই তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক, অস্ত্রের পাশাপাশি ‘জিহাদি ও ইসলামের অপব্যাখার’ বই উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। র‌্যাব-পুলিশ বলছে, এসব বইয়ে ইসলামের অপব্যাখ্যা বা বেহেশতের টিকিটের প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সের তরুণদের জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করাই মূল টার্গেট। 

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) দুই সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ জঙ্গিবাদী বই উদ্ধার করে র‌্যাব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা জঙ্গিবাদ উসকানিমূলক বই-লিফলেট প্রকাশ করে আসছে তাদের নিয়ন্ত্রণসহ জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ও অনিবন্ধিত ছাপাখানায় নজরদারি রাখা জরুরি। এ ছাড়া অতি লাভের আশায় নিবন্ধিত ছাপাখানাগুলোয় রাষ্ট্রবিরোধী বা জঙ্গিবাদী প্রকাশনা যেন বের করতে না পারে এ বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!