• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বিবিএসের জরিপ

দেশের ৮২.৪% শিশু নির্যাতিত


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮, ০২:৩০ পিএম
দেশের ৮২.৪% শিশু নির্যাতিত

ঢাকা : দেশের এক থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতি ১০ শিশুর ৮ জনই মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি বাইরের মানুষ দ্বারাও নির্যাতিত এসব শিশু। বস্তি এলাকায় শিশু নির্যাতনের হার আরো বেশি। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ শিশুই নির্যাতিত। সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের বেঁধে দেওয়া নিয়ম উপেক্ষা করায় শিশু নির্যাতন বাড়ছে।

ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত এ সংক্রান্ত জরিপের ফলাফল ‘চাইল্ডওয়েলবিং সার্ভে ইন আরবান এরিয়াস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বিবিএসের মহাপরিচালক আমীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কিশোর দাস, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিব কাজী আশরাফ উদ্দিন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার। বক্তব্য রাখেন জরিপের ফোকাল পয়েন্ট একেএম আশরাফুল হক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরের ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশুর মধ্যে ১৩ শতাংশ শিশুশ্রমে যুক্ত। তাদের মধ্যে ৯৩ শতাংশের বাস শহরের বস্তিতে। ধনী পরিবারের চেয়ে গরিব পরিবারের শিশুরা পাঁচ গুণ বেশি শিশুশ্রমে জড়িত।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তিতে সবেচেয়ে পিছিয়ে ঢাকা বিভাগ। এখানকার ৫৯ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণ করছে। অন্যদিকে সবচেয়ে এগিয়ে বরিশাল। এ বিভাগের ৭৪ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষা নিচ্ছে। এছাড়া শহরাঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম পরিবারের ৫ শিশুর মধ্যে ৪ জনই মাধ্যমিক স্কুলে পড়লেও গরিব পরিবারে এ হার ৫ জনে মাত্র ২ জন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,  নানা উদ্যোগ নিয়েও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে খুলনায় এখনো বাল্যবিয়ের হার ৬৬ শতাংশ, যা অন্য বিভাগগুলোর চেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম সিলেটে, ৪০ শতাংশ। শহরবাসী ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫ জন নারীর ২ জন এবং ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৫ জনের ৩ জনেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগেই। বলা হয়েছে, বস্তি এলাকার ২০-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার শহুরে নারীদের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। শহরের প্রতি তিন শিশুর মাত্র একজনের জন্মনিবন্ধন সনদ রয়েছে। এ হার বস্তিতে আরো কম, তবে সেখানে বাল্যবিয়ের হার বেশি।

অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের আবাসিক প্রধান বলেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে সাড়ে ৫ কোটি মানুষ ছিল। ২০২৯ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৮ কোটি ১০ লাখে। শহর ও বস্তির মধ্যে ব্যবধান রয়েছে উলে­খ করে তিনি বলেন, শহরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সামষ্টিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। এসডিজি বাস্তবায়নে শিশু অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রধান অতিথি সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, সরকার শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এসডিজি বাস্তবায়নে এ প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।

প্রতিবেদনে শিশুর পুষ্টি বিষয়ে বলা হয়েছে, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সিলেটে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মধ্যে প্রতি ৪ জনে ১ জন খর্বাকৃতির শিকার। এছাড়া প্রতি ৫ জনে ১ জন ওজনহীনতায় ভুগছে। বস্তি এলাকার শিশুদের খর্বাকৃতির ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় তিন গুণ বেশি। প্রতি ৫ জনে ৩ জন শিশু জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধপানের সুযোগ পায়। তবে জন্মের পরপর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে বস্তির মায়েরা এগিয়ে।

শিশুস্বাস্থ্য ও টিকা : প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১২ থেকে ২৩ মাস বয়সী প্রতি ১০ শিশুর ৯ জনেই জীবন রক্ষাকারী টিকার আওতায় এসেছে। তবে বস্তি এলাকায় এ হার ১০ জনে ৭ জন।

প্রজনন স্বাস্থ্য : জরিপ এলাকায় প্রতি ৫ শিশুর ৩ জন দক্ষ দাইয়ের সহযোগিতায় জন্ম নেয়। তবে দরিদ্র পরিবারগুলোতে প্রতি ১০ জনে মাত্র ৪ জন শিশু এ সেবা পেয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।

হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী বিভাগ। বিভাগের ৬২ শতাংশ পরিবারে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার সুবিধা রয়েছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে বরিশাল, মাত্র ৪৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে দেশের শহরাঞ্চলে ৫৫ শতাংশ পরিবারে হাত ধোয়ার সুবিধা রয়েছে। হাত ধোয়ার সুবিধা বলতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সাবান ও পানি ব্যবস্থা বুঝানো হয়েছে। সার্বিকভাবে শহরাঞ্চলের উন্নত স্যানিটেশনের হার ৫৭ শতাংশ। তবে বস্তি এলাকার এ হার মাত্র ১৯ শতাংশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!