• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দৈন্যদশায় ফেভারিটদের শুরু


ক্রীড়া প্রতিবেদক জুন ১৯, ২০১৮, ০৫:১৭ পিএম
দৈন্যদশায় ফেভারিটদের শুরু

ঢাকা : না শুরুটা জমল না। কী ম্যাড়মেড়ে ম্যাচ। রাশিয়া বনাম সৌদি আরবের উদ্বোধনী ম্যাচের পর এমন আক্ষেপ ছিল সবার মুখে মুখে। যে ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠল রাশিয়া বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞের, সেখানে নেই বারুদের উত্তাপ। দোর্দণ্ড দাপট দেখাল রাশিয়া, অসহায় সৌদি শিবির। স্কোর লাইন ৫-০।

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের আক্ষেপ ঘুচে গেল দ্বিতীয় দিনেই। মোহাম্মদ সালাহবিহীন মিসরের সঙ্গে কষ্টেসৃষ্টে জিতল দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে (১-০)। নিখাদ দর্শকের মুখ উজ্জ্বল। বিশ্বকাপের আসল আমেজ শুরু হলো বলে। এই না হলো খেলা! নামে-ধারে কম হলেও মরক্কো-ইরান ম্যাচেও থাকল তুঙ্গস্পর্শী উত্তেজনা। পুরো ম্যাচে দাপট দেখিয়েও ইরানের কাছে ১-০ গোলে হারল মরক্কো। ফুটবলপ্রেমীরা সন্তুষ্ট ফুটবলের লড়াই দেখে। আসল মজা ছড়াল দ্বিতীয় দিনের শেষ ম্যাচ। মুখোমুখি সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেন ও বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। রুদ্ধশ্বাস লড়াই, রোনালদোর হ্যাটট্রিক। তারপরও ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র।

উত্তেজনায় কাঁপছে বিশ্ব। বিশ্বকাপের একেকটি ম্যাচ যেন আগুনের ফুলকি। সেই আগুনে পুড়ল অনেক ফেভারিট দল। শুরুটা হলো ভীষণ বাজে। উল্টো আন্ডারডগ দলগুলো দেখাল চমক। নবাগত আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করল দুইবারের চ্যাম্পিয়ন মেসির আর্জেন্টিনা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি তো হেরেই গেল মেক্সিকোর কাছে ১-০ গোলে। আশা ছিল দারুণ জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে হট ফেভারিট নেইমারের ব্রাজিল। কিন্তু দৃশ্য একই। শেষ পর্যন্ত সুইজারলান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে হতাশার ড্র।

সব মিলিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে টপ ফেভারিটদের শুরুটা ছন্নছাড়া, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কথা উঠতে পারে ফ্রান্সকে নিয়ে। তারা তো ২-১ গোলে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মিশন শুরু করেছে। কিন্তু এখানেও থাকছে খাদ। পল পগবা জয়সূচক গোল করেছিলেন দলের হয়ে। দিন দুয়েক পর সেটি আর পগবার গোল থাকল না। হয়ে গেল আজিজ বেহিচের আÍঘাতী গোল। তার মানে ওই গোলটি না হলে ফ্রান্সও ড্র করত। সব মিলিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেভারিট তত্ত্বে যেন বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে নান্দনিক ফুটবল। যেখানে বলা হচ্ছে, কেউই ফেভারিট নয়, আবার প্রায় সব দলই ফেভারিট।

বাজে শুরুর ধারাটা শুরু আর্জেন্টিনার হাত ধরে। নবাগত আইসল্যান্ডের সঙ্গে অ্যাগুয়েরোর গোলে (১৯ মিনিট) লিড নিয়েও ধরে রাখতে পারেনি সাম্পাওলি শিবির। চার মিনিট পর ফিনবোগাসনের গোল, স্কোর ১-১। এর পরের অধ্যায় আর্জেন্টাইন ভক্তদের জন্য বেদনাদায়ক। অনেক চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি গোল নামক সোনার হরিণ। আফসোস বাড়িয়েছে মেসির পেনাল্টি মিস। সমালোচনার তীর মেসির দিকে ধেয়ে আসছে এখনো। তবে ম্যারাডোনা পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমি ধারাবাহিকভাবে পাঁচটি পেনাল্টি মিস করেও এখনো ম্যারাডোনাই আছি।’ আর্জেন্টিনার হয়ে ১৬টি পেনাল্টি নিয়েছেন মেসি, গোল ১৩টিতে। বিশ্বকাপ বলেই হয়তো চাপে আছেন বার্সা জাদুকর।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির শুরুটা তো হলো হারের যন্ত্রণা দিয়ে। আকস্মিক হতাশায় বিহ্বল জার্মান সমর্থকরা। কোচ জোয়াকিম লো ফুটছেন রাগে। বিশ্বমানের টিম নয় জার্মানি, অপবাদ শুরু হয়ে গেছে। ৩৫ মিনিটে মেক্সিকোর হয়ে জয়সূচক একমাত্র গোল করে নায়ক বনে গেছেন লোজানো। যাদের ফুটবল শৈলী মুগ্ধ করছে দর্শকদেরও। কিন্তু কোথায় জার্মানির অ্যাটাকিং ফুটবল, খুঁজে পাচ্ছেন না দর্শকরা। আর্জেন্টিনার ড্র, জার্মানির হার, ব্রাজিল কেমন করবে? সবার চোখ ছিল রোস্তভ অ্যারেনায়। শুরুটাও বেশ ভালো, ২০ মিনিটে কুতিনহোর দুর্দান্ত গোল। লিড ব্রাজিলের। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ৫০ মিনিটে সুইজারল্যান্ডের জুবারের হেড শেল হয়ে বিঁধল ব্রাজিলিয়ানদের বুকে। স্কোর লাইন ১-১। এরপর মুহুর্মুহু আক্রমণের পসরা সাজিয়েও গোল পায়নি তিতের দল। উল্টো ১০ বার ফাউলের শিকার নেইমার ঢুকে পড়েছেন রেকর্ড বুকে। ২০ বছর পর বিশ্বকাপের কোনো একটি ম্যাচে এত ফাউলের ঘটনা ঘটল। সর্বশেষ এমন ঘটনা ছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপে। তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে একাই ১১ বার ফাউলের শিকার হয়েছিলেন ইংল্যান্ড তারকা অ্যালান শিয়ারার।

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি শুরুর ম্যাচে পয়েন্ট হারাল। একই সঙ্গে তিন দলের এমন চিত্র বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম। তবে বাজে শুরুর মধ্যেও খুব কাছের ইতিহাস আশ্বস্ত করছে তিন দলকে। ২০১০ বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে মিশন শুরু করা স্পেন জিতেছিল বিশ্বকাপের ট্রফি। গত ইউরোতে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করা রোনালদোর পর্তুগালও কী করেছিল তা সবার জানা, চ্যাম্পিয়ন।

বাজে শুরুর মধ্যেও আছে শুভ ইঙ্গিত। গ্রুপ পর্বে বাকি দুটি ম্যাচে তা প্রমাণ করার পালা এই তিন দলের। দেখা যাক কী হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!