• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
‘ফোক ফেস্ট’

দ্বিতীয় দিনে নুরান সিস্টার্সের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা


বিনোদন প্রতিবেদক নভেম্বর ১১, ২০১৭, ০৩:৫৭ পিএম
দ্বিতীয় দিনে নুরান সিস্টার্সের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা

ঢাকা: ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট’ ২০১৭ এর দ্বিতীয় দিন ছিল ১০ নভেম্বর। বিশ্বের আটটি দেশের গান নিয়ে তৃতীয়বারের মত দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে বড় লোকসংগীত উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইরান, ব্রাজিল, মালি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও জাপানের প্রায় ১৪০ শিল্পী অংশ নিচ্ছেন।

এ উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পীদের  মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের শিল্পীরা শুনিয়েছেন তাদের প্রাণের সুর।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শ্রোতাদের ভিড় একটু বেশিই থাকবে, সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাও টের পাওয়া গেল। আর ধীরে ধীরে লোক সঙ্গীত পিপাসুদের আগমনে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হতে থাকল আর্মি স্টেডিয়াম। সঙ্গীতের নজর কাড়া সব ধুনে নিজেদের মনোরথের সুধা মিটিয়ে চলেছিলেন উপস্থিত শ্রোতারা। 

ছুটির দিনের সন্ধ্যার প্রথম পরিবেশনায় ছিল বাংলাদেশের তরুণ লোকগানের দল ‘বাউলা’। পাঁচ বছর আগে চারুকলা অনুষদে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান দিয়ে যাত্রা শুরু করা এ লোকগানের দলটি ‘আমারে ছাড়িয়ারে বন্ধু’ গানটি পরিবেশনার শুরুতেই গেয়েছেন। এর পর একে একে গেয়ে শোনান ‘তোমারে আমি পাইতে পারি’, ‘রবে না এ ধন জীবন যৌবনে’, ‘এত যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিল না’ আর সবশেষে গেয়ে শোনান, ‘কেমনে রাখ গো ফেলিয়া’ গানটি।

বাংলাদেশের আরেক শিল্পী আরিফ দেওয়ান বাউলার পরিবেশনা শেষ হতেই মঞ্চে আসেন। পাঁচ শতাধিক লোকগানের রচয়িতা এ শিল্পীর কণ্ঠে শোনা গেল তার নিজেরই লেখা গান। তিনি গেয়ে শোনান দেহতত্ত্বের ভজন। এরপর একে একে তিনি পরিবেশন করেন ‘ঘুড্ডি কে বানাইলো রে’, মারফতি গান শেষে তিনি ও তার দল গেয়ে শোনান ভক্তিমূলক গান ‘শত জনমে বিরহ গাথা’।

রাতের তৃতীয় পরিবেশনা ছিল নেপালের লোকগানের দল ‘কুটুম্বা’র। কোক স্টুডিওর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পাওয়া এ লোকগানের দলটি নিজেদের পরিবেশনায় ব্যবহার করে দেশটির ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র-বাঁশের বাঁশি, সারেঙ্গী, মাদল, ঝামটা, আরবাজো, ভুসায়া, চাল, চাবরাঙ, টুঙ্গা, ঢোল,  ও চাসায়া।

ছয় সদস্যের ‘কুটম্বা’রা নিজেদের পরিবেশনার শুরুতেই বাদ্রযন্ত্রের তালে পুরো স্টেডিয়াম মাতিয়ে তোলেন। দলটির প্রধান অরুন মানাধর আধো ভাঙা বাংলায় জানতে চাইলেন- ‘ঢাকা কেমন আছো?’।  তাদের শেষের পরিবেশনায় নেপালের স্থানীয় যন্ত্রে সুর উঠে বাংলার জনপ্রিয় গান ‘আমি তো মরেই যাব, চলেই যাব, রেখে যাব সবই’র যন্ত্রসুর। শ্রোতারাও তাদের পরিচিত এ গানের সুরে অপার আনন্দে সুর মিলিয়েছেন।
 
এরপরই মঞ্চে পাকিস্তানের মিকাল হাসান। ভারত আর পাকিস্তানের শিল্পীদের সমন্বয়ে তৈরি এ ব্যান্ডটির সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের আরমিন মূসা ও তার দল ‘ঘাষফড়িং’। শুরুতেই দলটির কণ্ঠশিল্পী শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় গেয়ে শোনান ‘কিনারে কিনারে’ গানটি।  সুরের বিরুদ্ধে অসুরের যাত্রাকে রুখে দিয়ে সুরে সুরে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয় শিল্পীরা। সেটিও তারা জানালেন।

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী হত্যার ঘটনায় যখন পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় চলছে তখন বাংলাদেশে বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আসা শিল্পীরা গেয়ে চলেছেন মাটির গান। আর দৃষ্টিহীন শিল্পী শাহজাহান মুন্সির পরিবেশনায় পুরো স্টেডিয়াম মেতে উঠেছিল বেশ খানিকটা সময়ের জন্য। ‘তুমি আছো বলে দয়াল’, ‘একি প্রেমের প্রতিদান’, ‘একবার এসে প্রাণবন্ধু দেখা দাও মোরে’সহ মারফতি ও বাউল গান পরিবেশন করেন তিনি।

সবশেষে মঞ্চে আসেন ভারতের পাঞ্জাবের ছোট্ট শহর জালানধরের নুরান সিস্টার্স জ্যোতি নুরান ও সুলতানা নুরান। ওস্তাদ গুলশান মীরের এ দুই কন্যা গতবারই এ উৎসব মঞ্চে জয় করে নিয়েছিলেন দর্শক-শ্রোতাদের। দর্শকদের অভিবাদন জানিয়ে শুরুতেই তারা গেয়ে শোনান ‘ভারি যায়ু রে/ মারি যায়ু রে’ গানটি।

 নিজেদের শাম চৌরাসিয়া ঘরানায় এরপর তাদের পরিবেশনা ছিল ‘ইশকে আওয়াল্লা’। এরপর তারা ‘কুল্লিনি ফাকিরদি’ গেয়ে শোনান। তারপর তাদের কণ্ঠে শোনা গেলো ‘পাটাকা ঘুড্ডি’ গানটি। ঘন্টাব্যাপী পরিবেশনার পুরোটা সময় জুড়েই এ দুই বোন মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন।

শনিবার (১১ নভেম্বর) ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবের বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠবে। সন্ধ্যা ৬টায় শুরুতেই বাংলাদেশের প্রখ্যাত দুই লোকশিল্পী শাহ আলম সরকার ও আলেয়া বেগম সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। তাদের পরিবেশনার পরই রয়েছে দেশের আরেক শিল্পী শাহনাজ বেলীর পরিবেশনা। রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ইরানের লোকগানের দল রাস্তাকের পরিবেশনা।

তারপর মঞ্চে আসবেন ভারতের শান্তিনিকেতনের শিল্পী বাসুদেব দাস বাউল। সর্বশেষ গান নিয়ে মঞ্চে আসবেন আফ্রিকার দেশ মালির তিনারিওয়েনের।বাংলার শেকড়ে ছড়িয়ে থাকা এই গানকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করতেই তৃতীয় পর্বের এ আয়োজন। 

বাংলার এই জনপ্রিয় লোকসংগীত উৎসবের ডাক উঠেছে পশ্চিমা দেশগুলোতেও। দেশজুড়ে সাড়া জাগানো নিজেকে চেনার উৎসব ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট ২০১৬ এর সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতেই তৃতীয়বারের মত সান কমিউনিকেশনস আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব।

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!