• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট

দ্রব্যমূল্য কমিয়ে লক্ষ্য বড় প্রবৃদ্ধি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৭, ২০১৮, ০১:২০ পিএম
দ্রব্যমূল্য কমিয়ে লক্ষ্য বড় প্রবৃদ্ধি

ঢাকা : ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে গড়ে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বাস্তবে অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ করে। বরাবরই লক্ষ্যের সঙ্গে অর্জনের বড় ধরনের পার্থক্য ছিল। তবে প্রথমবারের মতো চলতি অর্থবছর লক্ষ্য অতিক্রম করে যাবে প্রবৃদ্ধি। ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ টার্গেটের বিপরীতে এবার ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসাবে উঠে এসেছে। ফলে অনেকটাই উজ্জীবিত সরকার। এ সফলতা ধরে রাখতে আগামী অর্থবছরের বাজেটেও প্রবৃদ্ধির বড় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের পর এটাই প্রথম বাজেট।

এটি বর্তমান সরকার ও অর্থমন্ত্রীর টানা দশম বাজেট। এ নিয়ে মোট ১২তম বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন মুহিত। এবার অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আট বছরে সরকারি বিনিয়োগ ৪ দশমিক ৬৭ থেকে বেড়ে জিডিপির ৮ দশমিক ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী বড় আট প্রকল্পেই বরাদ্দ দেওয়া হবে ৩০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮০ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য থাকলেও বাজেটে তা ৫ দশমিক ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ছিল।

সর্বশেষ হিসাবে দ্রব্যমূল্য লক্ষ্যের মধ্যে থাকলেও আগামী অর্থবছরের বড় ঘাটতি মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।  

২০১৮-১৯ সালের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। চলতি বাজেট ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার, যা সংশোধন শেষে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায়। এ হিসাবে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৯৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর বাইরে বিদেশি অনুদান থেকে আসবে ৪ হাজার ৫১ কোটি টাকা। যদিও প্রত্যাশিত অনুদান কোনো সময়ই পাওয়া যায় না। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা হয় ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। সর্বশেষ তা সংশোধন করে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।  

২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর বাবদ প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ২ লাখ ৩২ হাজার ২০২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এ হিসেবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় এবার এনবিআরকে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। এবার এনবিআরবহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৮ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। পরে সেটা সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে আনা হয় ৭ হাজার ২০২ কোটি টাকায়। ফলে নতুন বাজেটে এনবিআরবহির্ভূত কর আদায় বাড়বে ৩৫ শতাংশ।  

চলতি অর্থবছরে রাজস্ববহির্ভূত আয় ধরা হয়েছিল ৩১ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ২৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এবার রাজস্ববহির্ভূত আয় ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে নতুন বাজেটে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ কমিয়ে ধরা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি অনুদান ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫১ কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মতো ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে ১০ বছর ধরেই বাজেট দিয়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। জিডিপি দিয়ে অর্থনীতির আকার মাপা হয়। একটি দেশের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়, তার বাজারমূল্যই হচ্ছে জিডিপি।

আগামী অর্থবছরের জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। আর এতে ঘাটতি বরাবরের মতো ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকছে। নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা, যা (জিডিপি) ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। আসন্ন বাজেটের ২৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশই ঘাটতি থাকবে। আর বিদেশি অনুদান না পাওয়া গেলে ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধন শেষে মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বৈদেশিক অনুদান ছাড়া এ ঘাটতি বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ১২ হাজার ৪১ কোটি টাকায়। বাজেট ঘাটতির বড় অংশই মেটানো হবে অভ্যন্তরীণ ঋণের উৎস থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা ঋণের টার্গেট ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি ও অন্যান্য উৎস থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর বাইরে বিদেশি উৎস থেকে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। চলতি বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে ৪৬ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা ৪১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৬ হাজার ১৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। যদিও লক্ষ্য ছিল ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১৯ হাজার ২১৭ কোটি টাকা নেয় সরকার। আর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও নেওয়া হয় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা, যা চলতি সংশোধিত বাজেটে ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৬৮ কোটি, যা সংশোধিত বাজেটে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

আসন্ন বাজেটে পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৪৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ২ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা।

চলতি সংশোধিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় ধরা হয় ৩৭ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ, শেয়ার ও ইকুইটিতে বিনিয়োগকে মূলধন ব্যয় হিসেবে দেখা হয়। আসন্ন বাজেটে মূলধন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৪৭ কোটি, যা চলতি বাজেটে ছিল ২৪ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় ১৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

আসন্ন বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। চলতি সংশোধিত বাজেটে এডিপির বরাদ্দ ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। চলতি মূল বাজেটে এডিপি বাবদ বরাদ্দ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।  

চলতি সংশোধিত বাজেটে এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ১৪০ কোটি, যা নতুন বাজেটে ৪ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। চলতি সংশোধিত বাজেটে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (এডিপিবহির্ভূত) ও স্থানান্তর বাবদ ১ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা নতুন বাজেটে ১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।  

সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ ও সরকারি কর্মচারীদের প্রদেয় ঋণ থেকে পরিশোধ বাবদ প্রাপ্তি বাদ দিয়ে নিট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ হিসাব করা হয়। চলতি বাজেটে এ ধরনের নিট ঋণ ও অগ্রিম বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ৩ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আসন্ন বাজেটে তা ২ হাজার ১২৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!