• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধনীদের আয় দ্বিগুন বৃদ্ধি, কমেছে গরিবের


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
ধনীদের আয় দ্বিগুন বৃদ্ধি, কমেছে গরিবের

ঢাকা: দেশে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, অপরদিকে গরিবরা দিন দিন আরও গরিব হচ্ছে। গরিবের টাকা চলে যাচ্ছে ধনীদের পকেটে। ফলে অর্থনৈতিক বৈষমা দিন দিন বাড়ছেই। দেশের মোট সম্পদের ২৮ শতাংশ চলে গিয়েছে পাঁচ শতাংশ ধনীর পকেটে। ধনীদের আয় দ্বিগুণ হলেও কমেছে গরিবের আয় বলে গবেষণার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি)।

‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৭-১৮: প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শনিবার(১৩ জানুয়ারি) ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি।

সিপিডি বলেছে, প্রবৃদ্ধির ‘গুণগত মানের অভাবে’ ধনী-গরিবের সম্পদ বৈষম্য আরও বেড়েছে। কমেছে দারিদ্র্য হ্রাসের হার। ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। ২০১৬ সালে দেশের মানুষের মোট আয়ের ০.২৩ শতাংশ আসে সবচেয়ে দরিদ্রদের পাঁচ ভাগ থেকে, যা ২০১০ সালে ছিল ০.৭৪ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬ সালে মোট আয়ে সবচেয়ে ধনী পাঁচ শতাংশের অবদান ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ ছিল বলে সিপিডির হিসাব।

এ হিসাবে দেখা যায়, ধনীরা ২০১০ সালে যা আয় করতেন, ২০১৬ সালে এসে এরচেয়ে বেশি আয় করছেন, অন্য দিকে আয় কমেছে গরিবদের। এভাবেই গরিব আরও গরিব হচ্ছে, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও ধনী গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমেনি।

সিপিডির হিসাবে, সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ শতাংশের খানা প্রতি আয় (হাউজহোল্ড ইনকাম) ২০০৫ সালে ছিল ১১০৯ টাকা, যা কমে ২০১৬ সালে ৭৩৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ধনী পাঁচ শতাংশের খানা প্রতি আয় ৩৮ হাজার ৭৯৫ থেকে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা।

২০১০ সালে দেশের মোট সম্পদের ৫১ দশমিক ৩২ ভাগ ছিল সর্বোচ্চ ধনী পাঁচ শতাংশের কাছে, অন্যদিকে ০.০৪ ভাগ ছিল সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ ভাগের কাছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছায়নি। গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে, ধনীরা আরও ধনীহচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রার মধ্যে এই বৈষম্য বাড়ার জন্য ‘প্রবৃদ্ধির গুণগত মানের অভাবকে’ দায়ী করেন সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে প্রবৃদ্ধির হারের নিচে যে অন্ধকারটি রয়েছে সেটি হল, দেশের ভেতরে সে তুলনায় কর্মসংস্থান না হচ্ছে না, দারিদ্র্য বিমোচনের হার শ্লথ হয়েছে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বৈষম্য শুধু আয়ে আর ভোগে বৃদ্ধি পায়নি, সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে সম্পদের বৈষম্য।

এর কারণ হিসেবে ব্যাংকে ঋণের টাকা ফেরত না দেয়া, বড় বড় প্রকল্পের ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ ভিন্ন দিকে পরিচালনা করাকে চিহ্নিত করেন তিনি।

দেবপ্রিয় বলেন, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে নেমে হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩ থেকে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৭ সাল শুরু হয়েছিল, সেটা ছিল বিনিয়োগ বাড়ানো। কিন্তু বছর শেষে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়েনি। ২০১৭ সালে সার্বিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিও ছিলেন।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!