• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
মাদকবিরোধী অভিযান

ধরাছোঁয়ার বাইরে রাঘববোয়ালরা


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৩, ২০১৮, ০১:৪৬ পিএম
ধরাছোঁয়ার বাইরে রাঘববোয়ালরা

ঢাকা : ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে শুরু হওয়া চলমান এ অভিযান বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোতে পরিণত হয়েছে। অভিযানে মাদক কারবারিদের চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে বড়সড় এ অভিযানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন অনেকে। তাদের মতে, এ ধরনের অভিযানে মাদক আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও সরকারের উদ্দেশ্য ‘মাদক নির্মূল’ কার্যক্রম ব্যর্থ হবে।

মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ আছে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বদির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে মাদকে যুক্ত থাকার অভিযোগ আছে। আরো অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন দলের শতাধিক থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার বিরুদ্ধে।
এসব নেতা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। কেউ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আবার কেউ পরোক্ষভাবে।

গত ৪ জুন থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে এসব রাঘব বোয়াল ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলনেতা এসব মাদক ব্যবসায়ী অধরা থাকায় জনমনে এই অভিযান নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও সংশয় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ যে ডেরায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। নির্দিষ্ট সময়ের ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে অভিযানের খবর পৌঁছে যায় ওই ডেরায়।

ফলে অভিযানের আগেই ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে সটকে পড়ে। যারা ওই সময় ওই এলাকায় থাকে পুলিশ যাকে পায় গণহারে ধরে নিয়ে যায়। ফলে অভিযানে অনেক নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়।  

মাদক কারবারিদের মদতদাতা পুলিশ কর্মকর্তারা এখনো স্বপদে বহাল। পদে থেকেই তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করছে। ঘরের শত্রু বিভীষণখ্যাত এই কর্মকর্তারা মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে অন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করাসহ নানা কৌশল অবলম্বন করছে। তারা কখন অভিযান পরিচালনা হবে এবং অভিযানের ইত্যকার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেয় ব্যবসায়ীদের।

অবশ্য পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক ইন্টেলিজেন্স অন্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স মনিরুজ্জামান কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে আবারো বললেন, এদের খোঁজা হচ্ছে, যারা মাদকে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। যারা যুক্ত আছে তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে আইনের আওতায় আনার জন্য।

সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত দেশব্যাপী পরিচালিত গত ১৮ দিনের অভিযানে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে দেড় শতাধিক।  

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আটক এই ১৫ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ১৫০ ব্যক্তির রাঘব বোয়াল নেই। সব চুনোপুঁটি। যারা আসক্ত তাদের ধরেও বলা হচ্ছে কারবারি।

সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, হিসেব দেওয়া যাবে- কিন্তু কাজের কাজ হবে না। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের মাদকবিরোধী অভিযানে কাজের কাজ কিছু হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কাগুজে বাঘ হয়ে থাকবে, সমস্যার সমাধান হবে না।

বিশ্লেষকদের মতে অভিযান হতে হবে ক্লিন ও সমন্বিত। দলীয় লোকদের ছাড় দেওয়া যাবে না। মাদকে যুক্ত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমান্তে যারা দায়িত্বে আছে তাদের বাধ্য ও শপথ করতে হবে তারা যেন দেশে একটি মাদকও ঢুকতে না দেয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!