• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণে শীর্ষে ৭ জেলা!


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৩, ২০১৭, ০৫:৪৯ পিএম
ধর্ষণে শীর্ষে ৭ জেলা!

ঢাকা: রাজধানীসহ সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, গৃহবধূ এমনকি অবুঝ শিশুও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। পরিচিত-অপরিচিতসহ পরিবারের আপনজনদের হাতে ধর্ষিত হচ্ছে এসব নারী-শিশু। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছে না, ধর্ষিতাকে মেরেও ফেলা হচ্ছে। এতে কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। একের পর এক এমন ঘটনায় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় সারা দেশের নারী ও শিশু ধর্ষণ পরিস্থিত তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ৭ জেলায় সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হয়েছে। জেলাগুলো হলো- ময়মনসিংহ, বরগুনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, গাজীপুর, রংপুর ও নীলফামারী।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এর জন্য সামাজিক অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি, সামাজিক অস্থিরতা, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, অশ্লীলতা, মাদকের বিস্তার, ঠিকমতো বিচার না হওয়া এবং বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতাকে দায়ী করছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের যেসব সন্তান সঠিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেনি, তারা এবং নিম্নশ্রেণির মানুষের মধ্যে ধর্ষণের প্রবণতা বেশি। সমাজবিজ্ঞানের একটা সংজ্ঞা আছে, যার যার বেড়ে ওঠার ওপর তার আচার-আচরণ প্রতিফলিত হবে।

তিনি বলেন, সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি আছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতি প্রভাব রয়েছে অপরাধীদের। যারা ধর্ষণ করছে তারা হয়তো ভাবেন, আমার তো ওয়ার্ড কাউন্সিলর আছে, ওমুক আছে, তমুক আছে; তারা আমাকে বাঁচাবে। আইনের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল নয় বলে সমাজে যত ধরনের অন্যায়, অসামাজিক কাজ ঘটছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারযান বলেন, ট্রাডিশনাল সমাজব্যবস্থা থেকে তথাকথিত আধুনিক সমাজব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি আমরা। তখন সমাজে কিছু পরিবর্তন আসে। মানুষের যৌন চাহিদাসহ সবকিছুতেই এক ধরনের পরিবর্তন আসে। এসব কারণে অনেক সময় ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ে।

৩০ জুলাই পুলিশ সদর দপ্তরে ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সারা দেশের অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা আলোচনায় আসে। সভায় সারা দেশের নারী ও শিশু ধর্ষণ পরিস্থিত তুলে ধরা হয়। এতে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ময়মনসিংহ, বরগুনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, গাজীপুর, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৩টি, বরগুনায় ৩০টি, সিরাজগঞ্জে ২৬টি, গাইবান্ধায় ২৬টি, গাজীপুরে ২৫টি, রংপুরে ২১টি এবং নীলফামারীতে ২১টি ধর্ষণের মামলা রেকর্ড হয়।

অন্যদিকে এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৭ জেলায় ধর্ষণের মামলা সবচেয়ে বেশি রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনায় ৫৬টি, টাঙ্গাইলে ৪৫টি, কুমিল্লায় ৪৫টি, গাজীপুরে ৪১টি, হবিগঞ্জে ৩২টি, সিরাজগঞ্জে ৩১টি এবং ময়মনসিংহে ৩০টি ধর্ষণের মামলা রেকর্ড করা হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ ৩ মাসের চেয়ে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে ধর্ষণের মামলা বেশি রেকর্ড হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এসব জেলায় ধর্ষণের মামলা বেশি হচ্ছে মানে ধর্ষণের ঘটনাও বেশি, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সংখ্যাও বেশি।

পুলিশ সদর দপ্তরের এপ্রিল থেকে জুন ৩ মাসের ধর্ষণ মামলা পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে বিচারাধীন মুলতবি ধর্ষণ মামলার সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৬৬টি, তদন্তাধীন মুলতবি মামলার সংখ্যা ১ হাজার ২৬৫টি।

আলোচ্য সময়ে ধর্ষণ মামলার বিচারের ফলাফলে দেখা গেছে, ৩১৮ মামলায় ৪৯১ আসামি খালাস হয়েছে। অন্যদিকে ৫১টি মামলায় ৭০ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে ৭৫৪ মামলায় ১ হাজার ১২৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ১৯৮টি মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। অর্থাৎ ১৯৮ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা গেছে, পূর্বে তদন্তাধীন মুলতবি মামলার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৭টি। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে আরও ১ হাজার ১২০টি নতুন মামলা রুজু হয়। সব মিলিয়ে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা ২ হাজার ২১৭টি।

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে গাইবান্ধা জেলায় ২৬টি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হওয়ায় ওই জেলা পুলিশ সদর দপ্তরের শীর্ষ ৭ জেলার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু এপ্রিল থেকে জুন এই ৩ মাসের শীর্ষ ৭ জেলার তালিকায় গাইবান্ধা জেলা নেই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Wordbridge School
Link copied!