• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ষণের পর নারীর করণীয়


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ১৮, ২০১৮, ১১:০৬ এএম
ধর্ষণের পর নারীর করণীয়

ঢাকা: ধর্ষণ অথবা যৌন আক্রমনের পর একজন নারী মানসিক এবং শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে ঘটনার পর পর অথবা কয়েক দিনের মধ্যে একজন নারী কেমন অনুভব করছেন তার ভিত্তিতে ঠিক করতে পারেন, পরবর্তী কি সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন।

তবে আমরা কিছু পরামর্শ দিতে পারি, যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার জানা থাকে এবং আপনি প্রয়োজনীয় সাহায্য খুঁজে পান।

প্রথমেই নিরাপত্তা-
যদি আপনি ধর্ষিত অথবা যৌন আক্রমনের শিকার হন, আপনার জন্য প্রথম পরামর্শ হল এমন কোথাও যান যেখানে আপনি নিরাপদ অনুভব করবেন, যেমন বাসা অথবা কোন বন্ধু অথবা আত্নীয়ের বাসা।

এরপর আপনি ঘটনার কথা বিশ্বস্ত কাউকে জানানোর কথা ভাবুন। আপনার সাথে যা হয়েছে তার জন্য লজ্জিত বোধ করবেন না।

আপনার কথা বলা উচিত-
একজন বন্ধু অথবা একজন পরিবারের সদস্যর সাথে প্রথমেই কথা বলতে হবে। এরপর বিশেষজ্ঞ সংস্থা যেমন আইন ও সালিশ কেন্দ্রর সঙ্গে আলাপ করতে হবে। পুলিশকে ঘটনা জানাবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নিজেকে এবং পরনের কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন, সেক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধীর পরিচয় সণাক্তকরণ ও সফল বিচারিক মামলা প্রস্তুত করতে পারবে যদি ডিএনএ প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারে।

এই প্রমাণাদি সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক আপনার লালা, মুত্র, রক্ত ও যৌনাংগের চুল এবং আপনার মুখ, যোনী ও পায়ু থেকে তুলার মাধ্যমে শ্লেষা সংগ্রহ করে রাখবেন। যদি আপনি পুলিশ স্টেশনে যান, তাহলে পুলিশ বিশেষ পরীক্ষাগারে একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে এসব প্রমানাদি সংগ্রহ করার ব্যাবস্থা করবেন।

চিকিৎসা-
পুলিশে রিপোর্ট কারার বিষয়ে অনিশ্চিত থাকলেও ধর্ষণ কিংবা যৌন আক্রমনের পর চিকিৎসা সহায়তা নেয়া উচিৎ। আপনি আহত হতে পারেন যার চিকিৎসা প্রয়োজন। জরুরী অবস্থার গর্ভনিরোধক বা ইমারজেন্সী পিল এবং যৌন বাহিত সংক্রমণ ব্যাপারে এসময় পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।

চিকিৎসা নিতে যেসব স্থানে যেতে পারেন-

  • হাসপাতাল অথবা ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট
  • পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক
  • আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক
  • সকল চিকিৎসক এবং নার্স গোপনীয়তার সঙ্গে আপনার চিকিৎসা সহায়তা দিবেন, তারা পুলিশকে জানাবে না।
  • আপনি পুলিশকে জানাতে চাইলে চিকিৎসক অথবা নার্সকে বলুন যেন তারা কিছু ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ করার ব্যাবস্থা করে। এগুলি আপনি পরবর্তীতে প্রমান হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

জরুরি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি-
যদি জোরপূর্বক কোনো ধরনের জন্মনিরোধ (যেমন কনডম) ছাড়া আপনার সাথে যৌনমিলন করা হয়, তাহলে আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  জরুরি জন্মনিয়ন্ত্রণ যদি সময়মত ব্যবহার করা হয় তাহলে গর্ভধারন এড়ানো যায়।

জরুরি পিল একটি ট্যাবলেট হিসেবে দেয়া হয়, এটি অরক্ষিত যৌনমিলনের (জন্মনিরোধ ছাড়া যৌনমিলন) পর যত দ্রুত সম্ভব খেতে হয়। তবে জরুরি পিল অরক্ষিত যৌনমিলনের ৭২ ঘন্টা পর আর দেয়া হয়না, কারণ তখন এর কার্যকারিতা ব্যাপক হারে কমে যায়।

অরক্ষিত যৌনমিলনের ৫ দিনের মধ্যে অথবা আপনার ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু মুক্ত (অভ্যুলেশন) হবার পর যত দ্রুত সম্ভব একজন চিকিৎসক অথবা নার্স এর মাধ্যমে কপার আইইউডি (IUD) গর্ভে স্থাপন করা হয়। আইইউডি (IUD) এর সাফল্যের হার প্রায় শতভাগ।

পুলিশের কাছে যৌন আক্রমন অথবা ধর্ষণ হিসেবে রিপোর্ট করা-
পুলিশের কাছে ধর্ষণ বা যৌন আক্রমণের রিপোর্ট করবেন কিনা তা একান্তই আপনার ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত। আপনি এটা যেকোন সময় করতে পারেন, উদাহরনস্বরূপ, ঘটনার সাথে সাথেই অথবা কয়েক দিন পর। এটা জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ন যে আপনি ঘটনা ঘটার পর যত দ্রুত রিপোর্ট করবেন, পুলিশের পক্ষে প্রমানাদি সংগ্রহ করার সুযোগ তত বেশি থাকবে।

যদি আপনি দেরিতে রিপোর্ট করেন তবে অনেক প্রমানাদি হারিয়ে যেতে পারে। এমন ঘটনার ক্ষেত্রে ৭২ ঘন্টার মধ্যে মেডিকেল প্রমানাদি সংগ্রহ করা উচিৎ।  আপনার কাপড়ও প্রমাণ হিসেবে নেয়া হতে পারে, তাই মনে করে সাথে অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে যাবেন। যদি না থাকে তবে দুশ্চিন্তার কারন নেই পুলিশ আপনাকে অতিরিক্ত কাপড় সরবারহ করবে।

তাদের কিছু নির্ধারিত প্রক্রিয়া আছে, যার মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় সাহায্য নিশ্চিত করা যায় এবং একই সঙ্গে যেখানে প্রাসংগিক সেখান থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে আক্রমনকারীকে সনাক্তকরন ও তার বিরুদ্ধে আদালতে বিচার কাজ পরিচালনা করা যায়।

প্রক্রিয়া-
আপনি পুলিশকে রিপোর্ট করলে প্রথমে একজন পুলিশ আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহ করবে। যদি ঘটনাটি তাৎক্ষনিক হয়ে থাকে তবে পুলিশ আপনার মেডিকেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। এর মাধ্যমে আপনি যেন চিকিৎসা সহায়তা পান সেটা নিশ্চিত হবে এবং যেকোনো মেডিকেল প্রমাণও সংগ্রহ করা যাবে।

আপনি প্রস্তুত হলে পুলিশ আপনার কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নেবে। এই মামলা কোর্টে গেলে এটাই হবে এই মামলার জন্য প্রধান প্রমান। তবে, আপনার যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, এই বক্তব্যে উল্লেখ করা হবে না।

বিব্রতকর অথবা কষ্টকর হলেও যত বেশী বিস্তারিত তথ্য দেয়া সম্ভব, তা পুলিশকে দিতে হবে। যদি আপনি কোনো ঘটনার অংশ মনে করতে না পারেন, তবে তাদেরকে তাও জানান। এই হামলার ঘটনার পরে আপনি নিজেকে পরিষ্কার করেছেন কি না তা জানান। ধর্ষণ বা যৌন আক্রমণের পূর্বে আপনি কোনো ধরনের ড্রাগ অথবা এলকোহল নিয়েছিলেন কিনা তাও জানান।

পরমর্শ এবং সাহায্য-
ধর্ষিত হওয়া অথবা যৌন আক্রমনের শিকার হওয়া অত্যন্ত বিপর্যয়কর অভিজ্ঞতা। একেকজন একেকভাবে এর প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং সময়ের সাথে সাথে আপনার অনুভূতি/প্রতিক্রিয়ারও পরিবর্তন হতে পারে। আপনার মধ্যে অনেক ধরনের আবেগ কাজ করতে পারে যেমন ভয়, উৎকন্ঠা, অপরাধ বোধ, তীব্র কষ্ট ইত্যাদি। কিন্তু গুরুত্বের সাথে সবসময় মনে রাখবেন যে আপনি ধর্ষণ বা যৌন আক্রমনের শিকার হয়েছেন, এতে আপনার কোনো দোষ নেই। সূত্রঃ মায়া।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!