• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
নাসিক নির্বাচন

‘ধানের শীষে’ ঐক্য হলেও ‘নৌকায়’ কাটেনি ধোঁয়াশা!


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৮, ২০১৬, ১০:৪২ এএম
‘ধানের শীষে’ ঐক্য হলেও ‘নৌকায়’ কাটেনি ধোঁয়াশা!

দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে বহুভাগে বিভক্ত থাকা বিএনপি আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে, এমনটাই অভিমত উভয় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের। 

জানা গেছে, বহু বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে জেলা ও নগর বিএনপির নেতাকর্মীরা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কারণে বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বে জেলা বিএনপিতে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়, যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় নানা কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করে আসছিলেন স্থানীয় নেতারা। বিশেষ করে বিএনপির একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার, একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম, একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ, একটি অংশ নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালসহ প্রত্যেক থানা এলাকার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অন্তদন্দ্বের কারণে তৃণমূল নেতারা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যান।

সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের ১১ নেতা ঠাঁই পাওয়ার পর জেলা বিএনপিতে ঐক্য ফেরাতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেন সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ। কিন্তু তাতে তখন কোনো নেতা সাড়া দেননি। অবস্থা এমন ছিল, আজকে এক নেতা আরেকজনের সম্পর্কে কটূক্তি করছেন, তো আগামীকাল আরেক নেতার কর্মীরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। মূলত এভাবেই চলতে থাকে বিএনপির রাজনীতি। 

অবশেষে নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে জেলার শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার অন্তদন্দ্ব থাকলেও ‘ধানের শীষের’ স্বার্থে প্রার্থীর চেয়ে দলীয় প্রতীককে প্রাধান্য দেন জেলার নেতারা। অতীতের সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কে কোন ভাইয়ের কর্মী তার চেয়ে এখন সবার কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সাখাওয়াত হোসেন খান ‘ধানের শীষের’ প্রার্থী। তাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে এখন দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে একজোট হয়ে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা, যা দেখে অভিভূত তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। তারা প্রত্যাশা করছেন, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘ধানের শীষের’ বিজয়ের জন্য সবাই যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, আগামীতেও এই ঐক্যের ধারা বজায় রাখবেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। 

অপরদিকে নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে উত্তর মেরুতে অবস্থান করছেন বর্তমান এমপি শামীম ওসমান। আর দক্ষিণ মেরুতে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দলটির মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এই দুই নেতার মধ্যে বছরের পর বছর ধরে নানা দ্বন্দ্বের ছন্দ দেখে আসছেন নগরবাসী। 
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সম্প্রতি তৃণমূলের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে শামীম ওসমানের সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে দলের কেন্দ্রীয় ‘মনোনয়ন বোর্ড’ মেয়র প্রার্থী না করে ডা. আইভীকে করেন। এ ঘটনায় আবারো তাদের মধ্যেকার পুরনো দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়ে ওঠে। 

একপর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী আইভীকে নির্বাচিত করতে একত্রে কাজ করতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শামীম ওসমান, ডা. আইভীসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘গণভবনে’ তলব করে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে শামীম ওসমানসহ মহানগর আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের আইভীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।

এর পর থেকেই আইভীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন শামীম ওসমান। এমনকি তিনি নিজেও আইভীকে এসএমএস করেছিলেন সহযোগিতা নেয়ার জন্য। নাসিক নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন আইভীকে পাঠানো খুদে বার্তায় শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘প্রিয় আইভী, আপনার পরিকল্পনা আমাকে জানান। কখন মনোনয়নপত্র জমা দেবেন এবং এই বিষয়ে আমি কোনো সহযোগিতা করতে পারি কি না বলবেন।’ কিন্তু আইভী এর কোনো জবাব দেননি।

তারপরেও শামীম ওসমান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ শিরোধার্য মেনে নাসিক নির্বাচনে আইভীর পক্ষে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু আইভী কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে তার (শামীম ওসমান) প্রয়াত বাবাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন, যে কারণে শামীম ওসমান ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করার কথা জানান। সর্বশেষ নাসিক নির্বাচনে প্রার্থী হিসেব না করে, দলীয় প্রতীক ‘নৌকার’ বিজয় নিশ্চিত করতে জেলা আওয়ামী লীগের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জ এসে নির্দেশনা দিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আইভীর পক্ষে কাজ করতে প্রকাশ্য কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এ কারণে ‘নৌকায়’ কাটেনি ধোঁয়াশা বলে মন্তব্য করেন শামীম ওসমানপন্থি তৃণমূলের নেতারা। 

যদিও বরাবরই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আইভীসহ শামীম ওসমানপন্থি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করছেন, ব্যক্তি নয়, ‘নৌকার’ পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছেন তারা। আর আগামী ২২ ডিসেম্বর ‘নৌকার বিজয়’ শেখ হাসিনাকে উপহার দেবেন তারা। কিন্তু দৃশ্যমান এখনো কিছু দেখতে পায়নি জনসাধারণসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।

এদিকে গত ৫ ডিসেম্বর নাসিক নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর আইভী অনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। কিন্তু সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন না মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই 
 

Wordbridge School
Link copied!