• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন

ধ্বংসস্তূপ অপসারণ চলছে, ফুটেজ জব্দ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৫, ২০১৭, ১০:৫২ এএম
ধ্বংসস্তূপ অপসারণ চলছে, ফুটেজ জব্দ

রাজধানীর গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত নাশকতা নাকি নিছক দুর্ঘটনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগও উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। সবদিক বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার (০৪ জানুয়ারি) একদিকে ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা, ব্যবসায়ীদের আহাজারি এবং তদন্ত কমিটির তদন্ত কাজ চালাতে দেখা গেছে। জোরেশোরে ধ্বংসস্তূপ অপসারণের কাজ করতেও দেখা যায়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটকের বিষয়টি পুলিশ স্বীকার করেনি। মার্কেটের কোনো নিরাপত্তা কর্মীকেও এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ বা আটক করা হয়নি। পুলিশ মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ৩৪টি ভিডিও ক্যামেরা জব্দ করেছে। এগুলো খতিয়ে দেখা হবে। 

গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে আগুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত কাউকে আটকের বিষয়টি আমার জানা নেই। এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। গুলশান থানার ডিউটি অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর নাজমুল হক জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। কোনো মামলা হয়নি। মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা একের পর এক থানায় এসে জিডি করছেন। যারাই আসছেন তাদের জিডি নেয়া হচ্ছে।

ওদিকে আগুনের কারণে গুলশান এলাকার কয়েকটি রাস্তার দেয়া ব্যারিকেড গতকাল পর্যন্ত অপসারণ করা হয়নি। গুলশান থানা পুলিশ জানায়, উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের পরামর্শে রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২-১ দিনের মধ্যেই ব্যারিকেড তুলে দেয়া হবে।  

তদন্ত চলছে : আগুনের ঘটনার তদন্তে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটির প্রধান ও ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেন বলেন, এই ঘটনার তদন্ত চলছে। সব দিক মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। এটা নিছক অগ্নিকাণ্ড, নাকি নাশকতা তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নাশকতার ব্যাপারে দোকান মালিকরা যে অভিযোগ করেছেন আমরা তা উড়িয়ে দিচ্ছি না। পুড়ে যাওয়া দোকানগুলো থেকে আলামত সংগ্রহ করছি। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হবে। কী কারণে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হলো আমরা তা খুঁজে বের করব।

গতকাল বুধবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ওই মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত ব্যবসায়ী ধ্বংসস্তূপের সামনে ভিড় করে আছেন। অনেকেই একে অপরকে জড়িয়ে আহাজারি করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বারবার মার্কেটের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু উদ্ধারকর্মী ও র‌্যাব-পুলিশ তাদের ভেতরে যেতে দিচ্ছেন না। ধসে পড়া ডিসিসি মার্কেট সংলগ্ন গুলশান শপিং সেন্টার গতকালও বন্ধ ছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই গুলশান শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ীরা আগুন আতঙ্কে দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নেন। এ ছাড়া ডিসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও তাদের বেঁচে যাওয়া কিছু মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশে গতকালও বিপুল সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েন ছিল। 

গতকাল বুধবার ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ অপসারণের সময় ভেতর থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। যেখানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে সেখানেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করছে। এর পাশাপাশি দেয়াল ও ছাদ ড্রিল করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্ধার অভিযান এখনো সমাপ্ত করা হয়নি।  

মার্কেট ছেড়ে না যেতে মাইকিং : ডিসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করতে দেখা গেছে। কোনো ব্যবসায়ী যেন মার্কেট ছেড়ে চলে না যায়, সে জন্য মাইকিং করে সবাইকে দোকানের সামনেই থাকতে বলা হচ্ছে। মার্কেটটি আবারও চালুর জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের কাজ চলছে। গতকাল দুপুরে মার্কেট কর্তৃপক্ষ এই মাইকিং করে। আগামী শুক্রবার মার্কেট খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিসিসি পাকা মার্কেটের সভাপতি ব্যবসায়ী তালাল রিজভী।

রিজভী বলেন, ‘আমরা আগামী শুক্রবার মার্কেট খুলে দিচ্ছি। এ জন্য দুদিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) পরিচ্ছন্নতার কাজ চলবে। এরই মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা এই মার্কেটেই ব্যবসা করতে চাই। এই মার্কেটটি ছেড়ে যেতে চাই না। পুনরায় চালু করার ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। নতুন ভবন তৈরি করতেও প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন।

মেয়র কিভাবে বলেন নাশকতা হয়নি : ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন

গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে আগুন লাগার পেছনে কোনো নাশকতা ছিল না বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক যে মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল বুধবার (০৪ জানুয়ারি) ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে ব্যবসায়ীরা বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মার্কেটটিতে আগুন দেয়া হয়েছে। অথচ তদন্ত ছাড়াই মেয়র কিভাবে বলেন এর পেছনে কোনো নাশকতা ছিল না। সমাবেশে ব্যবসায়ীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

গত সোমবার রাতে ডিসিসি মার্কেটে আগুন লেগে কয়েকশ দোকান পুড়ে যায়। পরিকল্পিতভাবে আগুন দেয়া হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও পরদিন (মঙ্গলবার) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র আনিসুল হক বলেন, বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে আগুন লাগতে পারে। এর পেছনে কোনো নাশকতা ছিল না। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা রাজনীতি করি না। ব্যবসা করি। আমরা ভ্যাট, ট্যাক্স সবই দেই। ব্যবসা করার জন্য আমরা মার্কেটটিকে নিরাপদ মনে করেছিলাম। আগুনে কিভাবে মার্কেট ধসে পড়ে ,তা আমাদের বোধগম্য নয়।

বক্তারা আরো বলেন, আগুন লাগার পরপরই তদন্ত ছাড়াই মেয়র কিভাবে বলেন, এটা নাশকতা হয়নি। আগুন লাগার কারণে আমাদের রুটি-রুজির সব ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, আমরা সাহায্য চাই না, আমরা ব্যবসা করার জায়গা চাই।

এদিকে বক্তারা সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেন, তারা ব্যবসা করার জায়গা না পেলে অনশন করবেন। তারা আরো বলেন, শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকা পর্যন্ত আমরা এখান থেকে সরব না। সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সমাবেশে ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেটের চেয়ারম্যান শের মোহাম্মদ বলেন, আমাদের হিসাবে কাঁচা ও সুপার মার্কেটের চারশরও বেশি দোকান ছিল। সবগুলো পুড়ে গেছে। ভবন ধসে যাওয়ায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের মার্কেটের খোলা জায়গায় ও পার্কিং এরিয়ায় অস্থায়ীভাবে দোকান বসানোর বিষয়ে আমরা বৈঠক করে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

উল্লেখ্য, গত সোমবার গভীর রাতে ডিএনসিসি কাঁচা ও পাকা মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ৭০০টি দোকান পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে কাঁচা মাকের্ট সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, মার্কেট থেকে তাদের সরিয়ে দিতে পরিকল্পিতভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রায় সাড়ে সাত বিঘার জমির ওপরে ১৮ তলা মার্কেট নির্মাণ করার কথা। এ নিয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মেট্রো গ্রুপের সঙ্গে দোকান মালিকদের দ্বন্দ্ব চলছে। গতকাল দুপুরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!