• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে আবাসন শিল্প!


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১৫, ২০১৬, ০৩:১৬ পিএম
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে আবাসন শিল্প!

সাত বছর আগেও আবাসন ব্যবসা ছিল লাভজনক এবং চাহিদাপূর্ণ খাত। কিন্তু নানামুখী সংকটে এই আবাসনশিল্প এখন বিপর্যস্ত, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না অপার সম্ভাবনার এ খাতটি। সরকারি নানা প্রতিবন্ধকতায় চরম ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আবাসন খাতটি।

২০১৩ সালে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় তৈরি ফ্ল্যাটের বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। কিন্তু সেই মন্দা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি খাতটি। আর চলতি বছরে সারা দেশে আবাসন খাতের ব্যবসা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। নতুন প্রকল্প গ্রহণের হার কমে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ।

২০০৯ সাল পর্যন্ত এ ব্যবসা চাঙা অবস্থায় ছিল। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের সঙ্গে সঙ্গে বিধ্বস্ত হয় আবাসন খাতও। ওই বছরের জুলাইয়ে হঠাৎ করে আবাসন খাতে সব ধরনের নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালের মে মাসে আবারো এ খাতে গ্যাস সংযোগ চালুর নির্দেশনা জারি করে সরকার।

কিন্তু প্রায় তিন বছর গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় আবাসন কোম্পানিগুলো ক্রেতার কাছে কোনো ফ্ল্যাটই হস্তান্তর করতে পারেনি। ওই সময়ে ফ্ল্যাটের ক্রেতা কমে গিয়েছিল ৪২ শতাংশ। পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবারও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেন।

এর আগে ২০১১ সালে ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রির মন্দায় রীতিমতো দুর্যোগ বয়ে যায়। এ দুর্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। ২০১৩ সাল পুরোটাই গেছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের মতে, সরকার ২০১৩-১৪ জাতীয় বাজেটে ২০ শতাংশ কর হ্রাস এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় আবাসন ব্যবসা কিছুটা চাঙ্গা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা হয়নি।

বর্তমানে জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ১৫ ভাগ। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ ২১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আবাসন ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা ও মূল্য আদায় এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। ক্রেতারাও এখন আর নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। ফলে আবাসন খাত নতুন করে সংকটে পড়েছে।

ভূমির উচ্চমূল্য, নির্মিত ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়া, ক্রেতা পর্যায়ে ঋণ সুবিধার অভাব, ব্যবসায়ীদের অপরিশোধিত ব্যাংক ঋণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আবাসনের সহযোগী বা লিঙ্কেজ ২৬৯টি শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সব ধরনের কাজ শেষ হলেও হাজার হাজার ফ্ল্যাট এখনো অবিক্রিত রয়েছে। সমস্যা সমাধানে সরকারকে বারবার বলার পরও ক্রেতাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সরবরাহের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এক কথায়, সংকট থেকে মহাসংকটে পড়েছে দেশের আবাসন শিল্প।

আবাসন ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, মানুষের মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আবাসন খাত কাজ করলেও এ খাতকে এগিয়ে নিতে তেমন কোনো আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের আবাসন খাতকে সামনের দিনে আরো নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তাদের মতে, এ খাতকে শক্তিশালী করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা। অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগ বন্ধ করার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

২০১৩ সালে একটি সংস্থার জরিপ থেকে পাওয়া যায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার তথ্য। এসব অর্থে আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, মালয়েশিয়ায় বিনা বাধায় ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনেছে বাংলাদেশিরা। তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশীয় আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়া, বিনা শর্তে ১০ বছর অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা বিনিয়োগের সুযোগ, সিঙ্গেল ডিজিটে ৩০ থেকে ৩৫ বছর কিস্তিতে ঋণ সুবিধা চালু, ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানো, ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালুর সুযোগ দেওয়াসহ বাস্তবসম্মত ড্যাপ প্রণয়নে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!