• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন ইসির অধীনেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি!


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭, ০২:১৬ পিএম
নতুন ইসির অধীনেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি!

ঢাকা : সিইসি কে এম নুরুল হুদার ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি থাকলেও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কর্তৃক নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে কার্যত মেনে নিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি চার কমিশনারের মধ্যে দু-একজনকে নিয়ে মৃদু আপত্তি থাকলেও নতুন এই নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে কড়া বিরোধিতা করবে না দলটি।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দলটির প্রভাবশালী একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এ প্রসঙ্গে বলেন, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের পর ওই কমিটি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে বিএনপি যেমন কৌশল নিয়েছিল, তেমনি নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেও একই ধরনের কৌশল নেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য আরো বলেন, গত সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠকে নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বিশদ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। যেহেতু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, তাই আমরা এখন নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ব্যবস্থাকেও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।     

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট বা প্রতিহত করার অতীত সিদ্ধান্তকে বিএনপি ‘আত্মঘাতী’ বলে মনে করছে। তাই একই ধরনের সিদ্ধান্তে বিএনপি আর যাবে না বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতা। তাদের মতে, ঘটনা যা-ই ঘটুক, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নানা ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখার কৌশল অবলম্বন করতে পারে দলটি।

নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে. জে. মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো নির্বাচন কমিশন, এই প্রতিষ্ঠানের ওপরই নির্ভর করে দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র। দেশের গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে নির্বাচন কমিশন বড় ভূমিকা রেখে থাকে। বর্তমানে দেশের গণতন্ত্র চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাই এমন পরিস্থিতিতে আমি মনে করি, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ‘একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন’।  

মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনকে আমরা পুরোপুরি বিরোধিতা করছি না। তবে নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদার ব্যাপারে, ওনার বিগত দিনের ভূমিকার জন্য আমাদের আপত্তি আছে। কিন্তু আগামীতে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা তিনি (নতুন সিইসি) যদি করতে পারেন, সেটা তো ভালো কথা। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকার যেমন সুযোগ হবে, তেমনি সব রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীসহ আমরাও তাকে সাধুবাদ জানাব। 

এ ছাড়া নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ‘জনতার মঞ্চ’-এর লোক হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি করা হলো, তিনি ‘জনতার মঞ্চ’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জনতার মঞ্চের সঙ্গে সে সময় যারা জড়িত ছিল, তারা একটি দলীয় প্ল্যাটফর্মে ছিলেন। সেই দলীয় প্ল্যাটফর্মে থাকা মানুষ কতটা স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে, সেটি নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। তার পরও তারা কতটা গ্রহণযোগ্য তাদের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই প্রমাণ পাবে। তবে নির্বাচন কমিশনের চেয়েও নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ কেমন হবে, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা। নতুন ইসি ভালো অথবা মন্দ, যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচনকালীন একটি ‘সহায়ক সরকার’ দরকার। কারণ দলীয় সরকার হলে নির্বাচন কেমন হয় তা চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে বলেও মন্তব্য করেন শামসুজ্জামান দুদু।

এদিকে গত সোমবার রাতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী ‘রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন’-এ অংশ নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বৃহত্তর স্বার্থে সব রকম প্রতিকূল পরিস্থিতি মেনে নিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন সিনিয়র নেতারা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নিতে এখন থেকেই সব রকম প্রস্তুতি নিতে তারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দিয়েছেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই বৈঠকে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ব্যবস্থা প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।  

বৈঠক সূত্রে আরো জানা গেছে, নতুন সিইসি এবং বাকি নির্বাচন কমিশনারদের দলীয় আনুগত্য ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ করে নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে খোঁজ-খবর নিতে বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বৈঠকে সিনিয়র এক নেতা বলেন, বিষয়টি নিয়ে ২০ দলীয় জোটের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। সিনিয়র এ নেতার এমন প্রস্তাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এ সময় কিছুটা সায় দেন।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে গত সোমবার রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা চলা ওই বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার নির্বাচন কমিশন গঠনের পর রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস‌্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়া বসলেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি তারা।  

মঙ্গলবার রাতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

রাত ৯টায় গুলশানে নিজের কার্যালয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে এলডিপির অলি আহমেদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, জমিয়তে উলামে ইসলামের মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমী, মুফতি আবদুর রব ইউসুফী, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের সৈয়দ মজিবুর রহমান, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ভাসানী ন্যাপের আজহারুল ইসলাম, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম চৌধুরী, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি প্রমুখ ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ছাড়াও মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!