নতুন বাড়ি পেলেন সন্তানের ফেলে দেয়া সেই বৃদ্ধা মা

ঢাকা: ছেলের হাতে মারধরের শিকার হয়ে হাতপাতালে ভর্তি ঠাকুরগাঁওয়ের শতবর্ষী বৃদ্ধা তসলিমা খাতুনের জন্য এবার বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পর এবার তার জন্য বাড়ি তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জেলা প্রশাসক।

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গীপাড়া এলাকার নির্যাতিত বৃদ্ধা মা তাসলেমা খাতুন বর্তমানে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খায়রুল কবির জানিয়েছেন।

হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকার স্থানীয় সমাজকর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, ভাত খেতে চাওয়ায় নিজ বড় ছেলে বদিরউদ্দীন বৃদ্ধা মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ওই বৃদ্ধা মাকে জেলা সদর থেকে এসে একটি পরিত্যক্ত ঝুপড়ি ঘর থেকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এখন আবার ওই বৃদ্ধা মায়ের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে ‘বড় ছেলের’দায়িত্ব পালন করলেন আমাদের ডিসি স্যার।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ বেগ বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল স্যারের নির্দেশে ছেলের হাতে নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধা মায়ের জন্য একটি টিনের ঘর ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃদ্ধা মা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলে নতুন বাড়িতে উঠবেন। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতবর্ষী বৃদ্ধা তসলিমা খাতুনকে নতুন বাড়ি তৈরির খবর জানানোর পরে তিনি বলেন, হামার ডিসি মোর বড় ছুয়া (আমার বড় ছেলে)। হাসপাতালত মোর প্রতিদিন খবর নিছে (প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিয়েছে)। শুনিছু এলা নতুন বাড়ি তৈরি করে দিছে (এখন নতুন বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে)। বাড়ি গেলে নতুন বাড়িত থাকিম আর বড় ছেলের তানে দোয়া করিম (বাসায় গিয়ে নতুন বাসায় ডিসির জন্য দোয়া করব)।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, ১৫ আগস্ট গভীর রাতে ওই বৃদ্ধা মাকে মারধরের বিষয়টি জানতে পেরে খুবই ব্যাথিত হয়েছি। তাই পরদিন সকালে বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করি। যেহেতু বৃদ্ধা মায়ের থাকার ঘর নিয়ে সমস্যা তাই মায়ের জন্য সন্তান হিসেবে একটি টিনের ঘর ও বাথরুম তৈরি করে দিয়েছি। তিনি যেন শেষ জীবন পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে পারেন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হলেই বৃদ্ধা মাকে নতুন বাড়িটি উপহার দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট দুপুরে ছেলের বউমার কাছে ভাত চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের শতর্বষী তসলিমা খাতুন। এ কথা ছেলে দবির উদ্দিন জানতে পেরে লাঠি দিয়ে মাকে মারধর করেন। লাঠির আঘাতে তসলিমার বাম চোখ থেঁতলে যায়। পরদিন সকালে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ওই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

মাকে নির্যাতনের অভিযোগে ছেলে দবির উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই রাতে উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বৃদ্ধা মা তার সন্তানের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই জানালে এবং ছেলেকে দেখার আকুতি করলে আদালত নির্যাতনকারী বড় ছেলে দবির উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করেন।

সোনালীনিউজ/জেএ