• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন বীমা কোম্পানিগুলোতে হুমকির মুখে গ্রাহক সঞ্চয়


সোনালীনিউজ রিপোর্ট এপ্রিল ২৮, ২০১৬, ১১:৩৭ এএম
নতুন বীমা কোম্পানিগুলোতে হুমকির মুখে গ্রাহক সঞ্চয়

দেশে কর্মরত নতুন বীমা কোম্পানিগুলোতে গ্রাহক সঞ্চয় এখন হুমকির মুখে। কারণ কোম্পানিগুলো পরিচালন ব্যয় মেটাতে গিয়ে গ্রাহক সঞ্চয়ও নিঃশেষ করে ফেলছে। আর কোম্পানির জন্য গাড়ি কেনা, অফিস ভাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটাতে অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে প্রারম্ভিক মূলধনও।

বীমা খাতের ওই নতুন কোম্পানিগুলো হচ্ছে─ জেনিথ ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ ও প্রটেক্টিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। নতুন ওই বীমা কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারছে না। ব্যয় অনুযায়ী আয় না হওয়ায় টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে।

বর্তমানে পরিচালন বাবদ গ্রাহক সঞ্চয় থেকে ব্যয়ের কারণে কোম্পানিগুলোর জীবন বীমা তহবিল (লাইফ ফান্ড) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ফলে বীমা কোম্পানিগুলোর লাইফ ফান্ড শেষ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে গ্রাহকদের সঞ্চিত অর্থ আদায়ও। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আইডিআরএ জমা দেয়া অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী-২০১৫ সালে মোট ১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার ব্যবসা করেছে নতুন বীমা কোম্পানি জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ওই টাকার পুরোটাই ব্যয় হয়েছে কোম্পানির পরিচালন বাবদ। এমনকি পরিশোধিত মূলধন থেকেও ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে।

ফলে গ্রাহকের পুরো সঞ্চয় ও পরিশোধিত মূলধন খরচ হয়ে যাওয়ায় ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ড। তবে ওই কোম্পানির কর্তৃপক্ষের দাবি- নতুন কোম্পানির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বর্তমানে কোম্পানির পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। তবে আগামীতে এই দুর্বল অবস্থা কাটিয়ে উঠা যাবে। যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স গতবছর মোট ব্যবসায়িক আয়ের ৮ কোটি ৫২ লাখ টাকাই খরচ হয়ে ফেলেছে।

এমনকি ব্যয় হয়ে গেছে পরিশোধিত মূলধনের ৪ কোটি ১২ লাখ টাকাও। ফলে ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে ওই কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের দাবি- অধিকাংশ নতুন বীমা কোম্পানিরই ঘুরে দাঁড়াতে চার-পাঁচ বছর সময় লাগে। আর এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। তাই হঠাৎ করে বীমা দাবি পরিশোধের প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসায়িক আয় হয় ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। তার পুরোটাই খরচ হয়ে গেছে অফিস পরিচালন বাবদ। আর কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন থেকেও ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এর পাশাপাশি ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া বীমা কোম্পানি বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সও গতবছর ব্যবসায়িক আয়ের ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকার পাশাপাশি পরিশোধিত মূলধনের ২ কোটি ২৮ লাখ টাকাও শেষ করে ফেলেছে।

আর ২০১৫ সালে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা করেছে ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কিন্তু ওই টাকা পরিচালন ব্যয় বাবদ খরচ হয়ে গেছে। একই সাথে খরচ হয়ে গেছে পরিশোধিত মূলধনের ১ কোটি ৭১ লাখ টাকাও। এতে ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড। তাছাড়া নতুন অনুমোদন পাওয়া স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০১৫ সালে ব্যবসায়িক আয় হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। তার পুরোটাই শেষ হয়ে গেছে পরিচালন ব্যয় বাবদ।

কোম্পানিটি খরচ করে ফেলেছে পরিশোধিত মূলধনের ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকাও। আর নতুন বীমা কোম্পানি প্রটেক্টিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সও। গতবছর ব্যবসা থেকে আয় করে ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কিন্তু পরিচালন ব্যয় মেটাতে ওই অর্থের পাশাপাশি কোম্পানিটি খরচ করে ফেলেছে পরিশোধিত মূলধনের ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকাও। ব্যবসা ভালো না হলেও ওই কোম্পানিটির গাড়ি রয়েছে ১২টি। আর অফিস ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে ৬ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য জুবের আহমেদ খান বলেন, লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ হলো কোম্পানির গ্রাহকরা ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইতিমধ্যে আইডিআরএর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে। কারণ আইন অনুযায়ী নতুন কোম্পানিগুলো প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা বাবদ ব্যয় করতে পারে। এর পর থেকে ১৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করার সুযোগ নেই।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!