• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন মিত্রকে নিয়ে বিএনপির মিশন


বিশেষ প্রতিবেদক অক্টোবর ২৩, ২০১৮, ১০:১৭ পিএম
নতুন মিত্রকে নিয়ে বিএনপির মিশন

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে দেশের রাজনীতির অবয়ব ততই পরিবর্তন হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে আগের তুলনায় রাজনীতির মেরুকরণ অনেকটাই স্পষ্ট রূপ পাচ্ছে। পুরনো মিত্র ২০ দলীয় জোটকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে শুরু হচ্ছে বিএনপির নতুন মিশন।

বুধবার (২৪ অক্টোবর) সিলেটে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে বিএনপির পুরনো মিত্রদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নয়া জোটটি একটি রূপ পাওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি। কেননা, এতদিন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে নিয়ে কোনো আন্দোলনই দাঁড় করাতে পারছিল না দুই মেয়াদেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দলটি। তাছাড়া ২০ দলীয় জোটে জামায়াত থাকায় স্বাধীনতা-বিরোধীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের দায়ভারের অভিযোগে মোটামুটি একটা কোণঠাসা অবস্থায় ছিল বিএনপি। আবার ভোটের অঙ্কে সব রকম সমালোচনা সত্ত্বেও জামায়াতকে ত্যাগ করতেও চায় না বিএনপি।

এ অবস্থায় ২০ দলীয় জোটকে বাইরে রেখে যারা একসময় প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরকে নিয়ে একটা ফ্রন্ট গঠন করায় বিএনপির সেই কোণঠাসা অবস্থাটা অনেকটা কেটে গেছে বলে মনে করে দলটির নেতাকর্মীরা। কেননা, জামায়াতও থাকলো, আবার ক্ষমতাসীন দলের বাইরের ‘প্রভাবশালী ক্যাটালিস্টদের’ একতাবদ্ধ করা গেল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে ২০ দলীয় জোটের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ অক্টোবর, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ওই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোট শরিকদের আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, ২০ দলকে বাইরে রেখে কোনো কিছু হবে না। এ নিয়ে অহেতুক ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই।

কিন্তু এই আশ্বাসবাণীর আট দিনের মাথায় ২০ দলকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাউকেই আজ বুধবার সিলেটে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম ব্যবহার না করা, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, সকল রাজবন্দির মুক্তি এবং নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে হয়রানি না করার দাবিতে সিলেটে যে সমাবেশ করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ঠিক একই ইস্যুতে অর্ধযুগ ধরে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করছে ২০ দল।

কিন্তু নির্বাচনের আগে এসে ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর পুরনো শরিকদের বাদ দিয়েই মাঠে গড়াচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। ২০ দলীয় জোটের ১৯টি দল বাদ দিয়ে নতুন জোটের তিনটি দল নিয়ে ৭ দফা দাবি আদায় এবং ১১ দফা লক্ষ্য বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামছে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার দল বিএনপি।

দলটির নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, সংকট উত্তরণে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আর সে লক্ষ্যেই কাজ করছেন তারা।

কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি নেতাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে কাজের খুব একটা মিল নেই। তারা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যর কথা বললেও নতুন মিত্রদের খুশি করতে গিয়ে পুরনো মিত্রদের দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। রাজপথের প্রথম কর্মসূচিতে জোট শরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি- এটা তারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন তারা। সিলেট সমাবেশের ৩৬ ঘণ্টা আগে গত সোমবার রাতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউ সমাবেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ পাননি।

এই মুহূর্তে বিএনপি জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তর দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাকে কেউ সিলেট সমাবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। ব্যক্তিগতভাবেও না, দলীয়ভাবেও না। তবে এ নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। তারা যেটা ভালো মনে করছে, সেটা করুক।’

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘সিলেট সমাবেশের জন্য আমি কোনো আমন্ত্রণ পাইনি। আপাতত এটুকুই আমার বক্তব্য। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।’

ইসিতে নিবন্ধিত বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মোহম্মদ ওয়াক্কাচ বলেন, ‘স্থানীয় জমিয়ত নেতাদের দাওয়াত দিয়েছে কি না, জানি না। তবে আমাকে কেউ দাওয়াত দেয়নি।’

একই কথা বলেন বিএনপি জোটের আরেক শরিক এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদও। তিনি বলেন, ‘জোটের অন্য কেউ পেয়েছে কি না, জানি না; তবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’

এদিকে ২০ দলীয় জোট শরিকদের আমন্ত্রণ করার ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি নেতারা একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। কেউ পরিষ্কার করে বলছেন না ২০ দলীয় জোট নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির অবস্থানটা কী।

২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সবাইকে দাওয়াত দেওয়া যাবে না। বেছে বেছে কয়েকজনকে দেওয়ার কথা ছিল। দিয়েছে কি না, আমি জানি না।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। এটা বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করুন।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের মহাসচিব ভালো বলতে পারবেন। আমি কিছু জানি না।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এগুলো কোঅর্ডিনেট করার জন্য একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই ভালো বলতে পারবেন কাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, আর কাকে হয়নি। কে যাবেন, কে যাবেন না- আমি এ সবের কিছু জানি না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!