• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন সাড়ে ৩ হলে পুরনো গাড়ির দাম ২০ লাখ!


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ৩, ২০১৭, ০৬:৩৮ পিএম
নতুন সাড়ে ৩ হলে পুরনো গাড়ির দাম ২০ লাখ!

ঢাকা: নতুন গাড়ির চেয়ে পুরনো গাড়ির দাম ৬ গুণেরও বেশি। শো-রুম থেকে নতুন গাড়ির দাম পড়বে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু এটি পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা হলে এর দাম পড়বে ২০ লাখ। অবিশ্বাস্য হলেও এমনটি ঘটছে সিএনজি অটোরিকশার বেলায়। এই ব্যবধানের কারণ রাজধানীতে চলাচলের নিবন্ধন থাকা, না থাকা।

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন বন্ধ। তাই বর্তমানে চলাচলরত একেকটি পুরনো গাড়ি কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। ৯ বছর চলাচলের জন্য আমদানি করা গাড়ি চলছে ১৫ বছর। এ বাস্তবতায় প্রায় অকেজো অটোরিকশার মেয়াদ ২১ বছর করার প্রস্তুতি চলছে। বিআরটিএর পক্ষ থেকে এসংক্রান্ত মতামত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। এর পর গাড়ির ইঞ্জিন ও সিলিন্ডার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মেয়াদ বাড়ানোর মতামত চাওয়া হয় বুয়েটের কাছে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে বুয়েটের মতামত চাইতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাজারে নতুন সিএনজি অটোর (বাজাজ) দাম সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৩ লাখ ৬৫ হাজারের কোঠায়। আর ঢাকা মহানগরীতে নিবন্ধিত গাড়ির দাম ২০ লাখ করে কিনতে হবে মালিকানা পরিবর্তনের মাধ্যমে। তবে এ ক্ষেত্রে কয়েক দফা হাত বদলের কারণে দামের এই ফারাক বলে ধারণা দিয়েছে পরিবহনকর্মীরা। 

তাদের মন্তব্য এ নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ছাড়া পুরনো গাড়িও কেনার সুযোগ কম। অথচ একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন খরচ মাত্র ১৩ হাজার ২০০ টাকা। আর ১৬৭০ টাকা মালিকানা বদলির ফি। এ ছাড়া বাড়তি খরচ ধরলে এক বছরের ফিটনেস ফি ১১০০ টাকা, ট্যাক্সটোকেন ফি ২৭০০ টাকা। আর গাড়ি থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স ফি খরচ বড়জোর ৫৫০ টাকা। আরেকটি খরচ যোগ করা হয়, তা হলো মালিকের আয়কর বাবদ ২৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা। কিন্তু গাড়ির দাম দাঁড়াচ্ছে ১৮ লাখ থেকে ২০ লাখ; যা অকল্পনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য। অথচ যাত্রীসেবার আশা করাই এখন দুঃসাহস। সরকারনির্ধারিত ভাড়ায় গাড়ি না চলা, মিটার না মানা আর যাত্রীর চাহিদামতো গন্তব্যে যাওয়ার শর্ত কখনই মানেনি অটোরিকশার মালিক-শ্রমিকরা। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে পরিবহন নেতাদের চাপে এখন চলাচলের অনুপযুক্ত অটোর মেয়াদ বাড়ানোতেই মন দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ।

সূত্রমতে, ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে ১২ হাজার ৭১৫টি নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। এ ছাড়া আরও ৯৩৬টি রয়েছে মিশুকের প্রতিস্থাপন। সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৬৫২টি অটোরিকশা চলছে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ হাজার ৫৬১টির। বাকিগুলোর মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর। আর চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত ১৩ হাজার সিএনজি অটোর মধ্যে ৭ হাজার ৪৫৯টির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছর। এ অবস্থায় আরও ৬ বছর মানে মোট ২১ বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে মতামত চাইছে বিআরটিএ। অথচ বুয়েট আগেই বলেছিল দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের বিবেচনায় ৬ শর্তে তখন মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। যদিও ওই শর্তগুলো যথাযথভাবে মানেনি অটোরিকশা কর্মীরা।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদে ব্যানারে ১৮ ও ১৯ অক্টোবর ধর্মঘট ডাকা হয়। তাদের দাবি ছিল পুরনো অটোর মেয়াদ ৬ বছর বাড়ানো। অটো-মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাড়ির মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু।

পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, লক্কড়-ঝক্কড় এসব যানবাহন প্রায়ই রাস্তায় অকেজো হয়ে যায়। এগুলোর পরিবর্তে নতুন করে গাড়ি নামানো ঠেকাতে সক্রিয় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা পুরনো গাড়ির মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলে মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে। একই তালিকায় আগেও চাঁদাবাজি হয়েছে। এভাবে ৯ বছর মেয়াদ ধরে আনা গাড়ি ২০১১ সালে প্রথম ১ বছর, ২০১২ সালে আবার ১ বছর এবং ২০১৪ সালে আরও ৪ বছরের জন্য সময় বাড়ানো হয়। ফলে বয়স দাঁড়ায় ১৫-এ। এবার তা ২১ বছরে উন্নীত করার তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। মিলছে সফল হওয়ার আভাস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে দুটি পদক্ষেপ নেওয়া যায় ১. ইকোনমিক লাইফ অতিক্রম করা গাড়ি রাজধানী থেকে বেবি ট্যাক্সি বা টেম্পোর মতো চলাচল নিষিদ্ধ করা। ২. এগুলোর প্রতিস্থাপনের সুযোগ দেওয়া। প্রথমটির ব্যাপারে বিআরটিএ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে রেজিস্ট্রেশন দিতে গেলে তদবির থেকে তা খুনোখুনি পর্যায়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে তা এড়ানো হচ্ছে। আর দ্বিতীয় পদক্ষেপ মানে প্রয়োজনে প্রতিস্থাপনের সুযোগ। সে ব্যাপারেও তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না পরিবহন নেতাদের চাপে। যদিও এ কথাটি উদ্ধৃত হয়ে দায়িত্বশীল কেউ মানতে নারাজ। তবে তাদের কাজকর্মে স্পষ্ট তা প্রতীয়মান। যেমন মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে বিআরটিএ থেকে পাঠানো চিঠিতে অটোরিকশার মেয়াদ বৃদ্ধির চিঠিতে পরিবহন নেতাদের কর্মসূচির বিবরণ রয়েছে। এসব গাড়ি সত্যিই চলাচলের উপযুক্ত কিনা তা যাচাই করতে বিআরটিএর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বুয়েটের সহায়তা নিতেই পারে। তবে ইঞ্জিন-সিলিন্ডার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মেয়াদ বাড়ানোর যুক্তিটিও দেখিয়ে দিতে হচ্ছে পরিবহন নেতাদের। বর্তমানে চলাচলরত অটো ১৭৫ সিসি। প্রায় ৩-৪ বছর ধরে এ গাড়ির ইঞ্জিন বাজারে নেই। বর্তমানে চলে ২০০ সিসির। পুরনো গাড়িতে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা যাবে না তাই আমদানির নামে নতুন করে চাঁদাবাজির ক্ষেত্র তৈরি হয় কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।-আমাদের সময়

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!