• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরের চৌগ্রাম জমিদার বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ


মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, নাটোর ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮, ০৮:৩৫ পিএম
নাটোরের চৌগ্রাম জমিদার বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ

নাটোর : কর্তৃপক্ষের অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ৩০০ বছরের পুরনো প্রাচীন ঐতিহ্য স্থাপত্য কলার অন্যতম নিদর্শন চৌগ্রাম জমিদার বাড়ি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ না করায় চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একমাত্র জমিদার বাড়িটি আগাছা বেষ্টিত আছে। ২০০৮ সালে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চৌগ্রাম জমিদার বাড়ি সংরক্ষণের জন্য একটি চিঠি পাঠান। কিন্তু দশ বছরেও সে চিঠির আজও কোনো উত্তর আসেনি। ইতিহাস ও প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭২০ সালে জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে চলনবিলের উত্তর পূর্ব কোণে প্রায় ৪৮ একর জমির ওপর ৯টি পুকুরসহ রাজা রামজীবনের দান করা এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার রসিক রায়। নাটোর রাজার অধীনে চৌগ্রাম জমিদার বাড়ি ছিল একটি মাত্র পরগণা। এর পেছনে একটি ইতিহাস রয়েছে।

নাটোর রাজস্টেটের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামজীবনের একমাত্র পুত্র রাজ কুমার কালিকা প্রসাদ অকালে মারা যায়। তার কোনো সন্তানাদি না থাকায় রামজীবন একটি পুত্র সন্তান দত্তক নেওয়ার সিদ্বান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু চৌগ্রামের রসিক রায়ের ছিল দুই পুত্র কৃষ্ণকান্ত ও রামকান্ত। রাজা রামজীবন এদের মধ্যে রামকান্তকে দত্তক নেন। পরে রামজীবন কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম এবং রংপুরের ইসলামাবাদ পরগণা রসিক রায়কে দান করেন। জমিদার রসিক রায় মারা যাওয়ার পর জমিদার কৃষ্ণকান্ত ১৭২০ সালে চৌগ্রাম ও ইসলামাবাদে দুটি জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। এই জমিদারির আয়তন ছিল ২৯ হাজার ৪৮৭ একর। জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথেই রয়েছে মূল ফটক। উত্তর কোণে জমিদার ভবনের পাশেই বৈঠকখানা ও তহশীল ভবন। দক্ষিণে জোড়ামঠ পূর্ব উত্তর কোণে হযরত শাহ ইয়ামেনী (রহ.)-এর মাজার। সবাই তাকে বুড়াপীর বলে ডাকতেন।

জমিদার কৃষ্ণকান্তের শাসনামলে অষ্টাদশ শতকে হযরত বুড়াপীর চৌগ্রামে আসে। জমিদার কৃষ্ণকান্ত অসুস্থ হলে অনেক চিকিৎসার পরও তিনি সুস্থ না হলে হযরত বুড়াপীর অসুস্থ জমিদারকে সুস্থ করে তোলেন। অসুস্থ হয়ে মারা গেলে জমিদার বাড়ির পশ্চিম পাশে তাকে কবর দেয়া হয়। কৃষ্ণকান্তের মৃত্যুর পর তার পুত্র রুদ্রকান্ত জমিদারী গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা কবি। উর্দুভাষায় লেখা তার ‘চন্ডির কবিতা’ ভারতবর্ষে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল। জমিদারি প্রথার পরে জমিদার রাজেশকান্ত স্বপরিবারে দেশ ত্যাগ করেন। এর পর জমিদার বাড়িটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। আজও সেই ইতিহাস জড়ানো চৌগ্রাম জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণের কেউ উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। বর্তমানে জমিদার বাড়ির রাজপ্রাসাদে চৌগ্রাম তহশিল অফিস করা হয়েছে। সেখানে ও রাজপ্রাসাদের ছাদের পোলেস্তার ধসে তহশিল অফিসের কর্মকর্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। অনেকেই রাজপ্রাসাদের ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!