• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী ভোটার কম কেন, জানে না ইসি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩, ২০১৭, ০৯:৫৮ পিএম
নারী ভোটার কম কেন, জানে না ইসি

ঢাকা: সর্বশেষ আদমশুমারিতে বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা কয়েক লাখ বেশি হলেও ভোটার নিবন্ধনে তারা অনেক পিছিয়ে। বিদ্যমান ভোটার তালিকার সঙ্গে নতুন ভোটারদের মিলিয়ে এ ব্যবধান প্রায় ১৩ লাখের বেশি বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার অস্বাভাবিক হারে কম হওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নারী-পুরুষ ভোটারের পার্থক্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কমিশন। মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা  দেয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন খোদ নির্বাচন কমিশনাররা।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, এবার হালনাগাদে ৯ লাখ ২ হাজার ৮১২ জন পুরুষ এবং ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬০ জন নারী ভোটার হতে নিবন্ধিত হয়েছেন। শতকরা হিসাবে পুরুষ ৬০ এবং নারী ৪০ জন।

তিনি বলেন, আদমশুমারিতে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হলেও ভোটার তালিকায় উল্টো, ব্যবধান কমানো যায়নি। এ নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। অনেক প্রচার-প্রচারণার পরও নারীদের ভোটার হতে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে হালনাগাদে নারীদের পুরুষের চেয়ে কম ভোটার হওয়ার প্রবণতা সাধারণত প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় দেখা গেছে। আগামীতে প্রচারণা আরো বাড়াতে হবে।

ইসি সচিব বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। যারা এখনো ভোটার হতে পারেননি তারা স্ব স্ব উপজেলার নির্বাচন অফিসে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন।

গত সোমবার দেশজুড়ে হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করেছে স্থানীয় নির্বাচন অফিসগুলো। হালনাগাদে সব মিলিয়ে এবার ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২ জন ভোটার হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ২ হাজার ৮১২ জন এবং নারী ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬০ জন। সারাদেশে বিদ্যমান ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ জন। তবে সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন ২০১১ অনুযায়ী ১৫ ও তার বেশি বয়সীদের সংখ্যা (বয়স, লিঙ্গ ও আবাসন) ৯ কোটি ১৭ লাখ ৫ হাজার ৯৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার ৩০৮ এবং নারী ৪  কোটি ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৪। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারী প্রায় ১১ লাখ বেশি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নারীদের ভোটার করতে ব্যাপক প্রচারণা নেয় না নির্বাচন কমিশন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ভোটার করতেও কিছুটা উদাসীনতা রয়েছে। ফলে নারী ভোটার কম হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, ২০১৫ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ হওয়ায় সোয়া ১১ লাখ ভোটার হয়েছে। সেখানে এবার তা করা হয়েছে মাত্র তিন সপ্তাহের জন্য, ভোটার হয়েছেন মাত্র ৩ লাখ ৭১ হাজার জন। এবার বাড়ি বাড়ি যায়নি তথ্য সংগ্রহকারীরা। আগ্রহীদেরই আসতে হয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিসে। এ কারণে নারী ভোটারও কম হয়েছে।

ইতোপূর্বে কমিশন বৈঠকে ভোটারে নারী-পুরুষের অস্বাভাবিক ব্যবধান নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। বারবার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তাগাদা দেয়ার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং দিন দিন নারী-পুরুষ ভোটারের ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে। মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার হালনাগাদে পুরুষের চেয়ে নারীদের আগ্রহ বরাবরই কম। সামাজিক কারণে অবিবাহিত, যাদের বয়স ১৮ পার হয়েছে তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ভোটার হননি। কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার হলে তার বয়স বেশি প্রকাশ পাবে আশঙ্কা আছে নারীদের মধ্যে।

কমিশন সচিবালয়-সংশ্লিষ্টদের ধারণা, কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও মূলত তথ্য সংগ্রহকারীদের গাফিলতির কারণেই ভোটার তালিকা থেকে নারী ভোটারদের অনেকেই বাদ পড়েছেন। নারী ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হলেও ছবি তুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নারীদের ভোটার করার জন্য আলাদা কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি। অন্যদিকে হালনাগাদ সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন, প্রচার-প্রচারণার অভাবেই নারীরা ভোটার কম হয়েছে। এলাকাভিত্তিক মাইকিংয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও অনেক স্থানে মাইকিং করা হয়নি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!