• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাসিকে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে বিএনপির নাটক


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২০, ২০১৬, ১০:৫৭ পিএম
নাসিকে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে বিএনপির নাটক

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেছে। নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। বিএনপি থেকেও ঘোষণা দেয়া নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে। তবে ‘ধানের শীষ’ কার হাতে তুলে দেয়া হবে তা নিশ্চিত হয়নি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পরই বিএনপির প্রার্থী নিয়ে কৌতুহলী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। কারণ এ সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে শেষ মুহূর্তে বিএনপিতে চলছে নাটকের পর নাটক। 

নির্ভরশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, নাসিক নির্বাচনে এবারও তৈমুর আলম খন্দকারকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। গত শুক্রবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের বৈঠকে তৈমুর আলমকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কিন্তু রোববার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তৈমুর আলম নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নন বলে নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচন নিয়ে তার তেমন কোনো আগ্রহই নেই। 

অন্যদিকে গত ১৮ নভেম্বর রাতে দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের বৈঠকে অংশ নেয়া নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম তৈমুর আলম খন্দকারের কথা বলা হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারণ তাদেরও এলাকায় গিয়ে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জের এক নেতা বলেন, তৈমুর আলম নির্বাচন করতে চান না। কেন চান না, সেটাও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। এখন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করা সম্ভব নয় বলেই তৈমুর আলম খন্দকার মনে করেন। এই বিষয়গুলো তিনি দলীয় চেয়ারপারসনকে বারবার বলেছেন। ওই নেতা আরো বলেন, তবে এটা ঠিক, বিএনপি শেষ পর্যন্ত তাকে (তৈমুর) মেয়র প্রার্থী করলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

অপরদিকে রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আমার কোনো আস্থা নেই। অনেক মিডিয়াও বিএনপির পক্ষে কথা বলবে না। এসব কারণে নির্বাচনে আমার অনাগ্রহ। 

তৈমুর আরো বলেন, নেতাকর্মীরা দলে দলে আমার বাসায় এসে আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে অনুরোধ করছেন। এত ফোন আসছে যে, আমি মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রেখেছি। সবাইকে জানিয়েছি, নির্বাচনের ব্যাপারে দলীয় চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। তবে আমি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নই, কারণ বিগত নির্বাচনে প্রার্থী করে নির্বাচনের সাত ঘণ্টা আগে আমাকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ঠিক কী কারণে আমাকে বসানো হয়েছে, আমি এখনো সেই প্রশ্নের উত্তর পাইনি। এ সময় তার বাড়িতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, নাসিক মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বিএনপিতে চারজনের নাম আলোচনায় আছে। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম এবং নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান।

নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এখানে লবিং-গ্রুপিং আছে। তবে দলে কোনো বিভেদ নেই। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।

নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির নেতা সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বিএনপি অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে নিয়েছে। বিএনপি যাকেই মনোনয়ন দেবে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই কাজ করবে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগে একাধিক গ্রুপ। আশা করি এই বিরোধিতার জন্য এখানে বিএনপি ভালো ফল করবে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ায় ১৮ নভেম্বর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করেন এই চার নেতা। এ সময় তাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অন্য নেতারাও ছিলেন। খালেদা জিয়া তাদের বলেন, খুব দ্রুতই মেয়র পদে প্রার্থিতার বিষয় চূড়ান্ত হতে পারে। মনোনয়ন প্রত্যাশী চারজনকেই এলাকায় গিয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এর আগে ১৭ নভেম্বর রাতে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান। সে রাতে খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন সম্ভব বলে আমরা মনে করি। সে কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!