• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিরনগর তাণ্ডবের মাসপূর্তি, কেটেছে আতঙ্ক


আল মামুন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নভেম্বর ৩০, ২০১৬, ০১:৩৬ পিএম
নাসিরনগর তাণ্ডবের মাসপূর্তি, কেটেছে আতঙ্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হিন্দু পল্লীতে হামলার এক মাস পার হয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক কেটে গেছে। বাড়ি ফিরে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এদিকে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় নাসিরনগর থানায় ক্ষতিগ্রস্তরা পৃথক পৃথক বাদী হয়ে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি অজ্ঞাত লোকজনকে আসামি করে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে হামলার অন্যতম হোতাসহ ১০২ জনকে বিভিন্ন সময়ে প্রেপ্তার করেছে।

সর্বশেষ নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় বাজারের সাইবার পয়েন্টের মালিক ও বিএনপি নেতা জাহাঙ্গিরকে গ্রেপ্তার করে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী মাধবপুর থানা এলাকা থেকে একটি কম্পিউটারের সিপিও জব্দ করেছে ডিবি পুলিশ।

২৯ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রসরাজ দাশ নামের এক যুবকের আইডি ব্যবহার করে পবিত্র কাবা শরিফকে ব্যঙ্গ করে একটি পোস্ট করা হয়। সেদিনই রসরাজকে এলাকবাসী আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তার বিরুদ্ধে সেদিনই তথ্য প্রযুক্তি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় তাকে পরদিন (৩০ অক্টোবর) সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

৩০ অক্টোবর সকাল থেকেই রসরাজের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে নাসিরনগর। দুপুরে নাসিরনগর আশুতোষ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ও কলেজ মাঠে হেফাজতে ইসলাম ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত রসরাজের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সভা ডাকে। সভা শেষে নাসিরনগর সদরের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে অতর্কিত হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। হামলার সময় হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় হামলাকারীরা।

ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটে হিন্দু পরিবারের লোকজনের মাঝে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে যান অন্যত্র। এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হিন্দু মুসলিম সবাই একসঙ্গে কাজ করার জন্য মাঠে নামে। পাশপাশি পুলিশ, র‌্যাব বিজিবি ছিল মাঠেই। পর্যায়ক্রমে একটি পক্ষ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সময়ে আগুন দিতে থাকে হিন্দু পরিবারের পরিত্যক্ত ঘরে। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে এলাকায় বসানো হয় প্রায় ২৭টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।

পাশাপাশি হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করে নাসিরনগরে। এদের মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ টিম আসে নাসিরনগরে। তারা কাজ করে নাসিরনগরের বিভিন্ন এলাকায়। তদন্তে বেরিয়ে আসে অনেকের নাম। হামলার ঘটনার মূল কয়েকজনের নামের তালিকা পাঠানো হয় পুলিশের বিশেষ শাখায়। দেশ থেকে যেন পালিয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে সতর্কতা বাড়ানো হয় সীমান্ত এলাকায়।

এদিকে হামলা ও বিভিন্ন্ সময়ে হিন্দু পরিবারের ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় থানায় বিভিন্ন সময়ে ৮টি মামলা করে ক্ষতিগ্রস্তরা। এসব মামলায় মোট ১০২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৩৩ জনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। তাদের মধ্য থেকে নাম বেরিয়ে আসে বেশ কয়েকজনের। এদের মধ্যে হামলায় উসকানিদাতা হিসাবে নাম উঠে আসে বেশ কয়েকজনের। গ্রেপ্তারও করা হয় অনেককেই।

সর্বশেষ নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় বাজারের সাইবার পয়েন্টের মালিক ও বিএনপি নেতা জাহাঙ্গিরকে গ্রেপ্তার করে চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পার্শবর্তী মাধবপুর থানা এলাকা থেকে একটি কম্পিউটারের সিপিও জব্দ করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা এই সিপিও থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, এক মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা তদন্ত ও এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তৎপর রয়েছি। এখনো এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল রয়েছে। নাসিরনগরে হওয়া ৮টি মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ১০২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি জানান, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে সেই কারণে বিভিন্ন সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!