• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘নিখোঁজ’ তালিকা স্থান পায়নি ইন্টারপোলের রেড নোটিসে


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৮, ২০১৭, ১২:৩৫ পিএম
‘নিখোঁজ’ তালিকা স্থান পায়নি ইন্টারপোলের রেড নোটিসে

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে দেশে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত ও পুলিশের সন্দেহভাজন নিখোঁজ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির নাম আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থার (ইন্টারপোল) রেড নোটিসে নেই। পুলিশি তদন্তে এদের নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বলা হয়েছিল পুলিশ এদের খুঁজে বের করবে। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের মাধ্যমে এদের খোঁজ করা হবে। কিন্তু নিখোঁজের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর তিন মাস কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের নামের তালিকা ইন্টারপোলের রেড নেটিশে স্থান পায়নি। এই নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায় আছে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের কাছেও কোনো তথ্য নেই। তবে দেশীয় গোয়েন্দারা নিখোঁজদের  সন্ধানে রয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করছেন।  

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ইন্টারপোল ডেস্কের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত এআইজি মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া এ ব্যাপারে বলেন, ইন্টারপোলের রেড নোটিশে হালনাগাদ তালিকাধারীদের নাম ও পরিচিতি রয়েছে। এতে মোস্ট ওয়ান্টেডদের ব্যাপারে ইন্টারপোলের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। নিখোঁজদের কোনো তালিকা সেখানে দেয়া হয়নি বা তাদের ব্যাপারে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি। 
তিনি আরো বলেন, ইন্টারপোলের রেড নোটিসধারীদের ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। তবে কয়েকজন নিখোঁজ ব্যক্তির নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিসের তালিকায় রয়েছে। তারা কেউ জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত নয়।

জানা গেছে, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনেক নিখোঁজ ব্যক্তির জঙ্গি তৎপরতায় সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর সারাদেশের নিখোঁজদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার জন্য পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। বছরের শেষ দিকে অর্ধশত ব্যক্তির নিখোঁজের ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়। তখন আইজিপি একেএম শহীদুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা কাজ করছে। এরপরেও খুঁজে পাওয়া না গেলে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হবে। ইন্টারপোলের রেড নেটিশে তাদের নামের তালিকা ঝুলিয়ে দেয়া হবে।’ কিন্তু এখন পর্যন্ত এই নিখোঁজ ব্যক্তিদের নামের তালিকা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেখা যায়নি।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একটি সূত্র জানায়, অর্ধশত নিখোঁজ ব্যক্তির মধ্যে বেশ কয়েকজন পরে ফিরে এসেছে। তারা দেশের ভেতরেই ছিল। পরিবারের সঙ্গে মনোমালিন্য ও অভিমান করে তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। আরো যারা এখনো নিখোঁজ রয়েছে তারাও ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ইন্টারপোলে এই তালিকা দেয়া হয়নি। প্রয়োজন হলে তালিকা দেয়া হবে। বর্তমানে আহমেদ শাহেদ, মোস্তাক আহমেদ, আশিক, মঈন ও শাহানুর আক্তার হ্যাপীর নাম রয়েছে, যারা বিভিন্ন সময়ে দেশেই নিখোঁজ হয়েছেন। 

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ইন্টারপোল ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হয়, তারা সবাই শীর্ষ অপরাধী ও পলাতক। এদের অবস্থান ও গ্রেফতারে ইন্টারপোল চেষ্টা চালায়। সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। প্রায় অর্ধশত এই নিখোঁজ ব্যক্তি শীর্ষ অপরাধী নয়, তারা নিখোঁজ। এ কারণেই ইন্টারপোলে এদের নাম নেই।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিসের তালিকায় বাংলাদেশের মোট ৮১ জনের নাম রয়েছে। ওই তালিকায় বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও পলাতক জঙ্গিরা রয়েছে। 

ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, সংস্থার বাংলাদেশ শাখায় এখন ৮১ জনের নামে রেড নোটিস জারি রয়েছে। এরা হলেন- ত্রিমতি সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী, আহমেদ হারিস, মোল্লা মাসুদ, কালা জাহাঙ্গীর ওরফে ফেরদৌস, খন্দকার তানভিরুল ইসলাম জয়, ওমর ফারুক কচি, আলম তাওফিক, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মিন্টু, আতাউর রহমান, জাফর আহমেদ ওরফে মানিক, জিসান, নবীর হোসেন, নাসির উদ্দিন রতন, শামীম আহমেদ ওরফে আগা শামীম, নজরুল দিপু, প্রশান্ত সরদার, আহমেদ মজনু, আবদুল জব্বার, ইউসুফ, আমিন রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর, চান মিয়া, শাহাদাত হোসাইন, খোরশেদ আলম, মনোতোষ বসাক, সুজিদ সুলতান, মোবারক হোসেন, ইকরাম নাইম খান, আহমদ কবির ওরফে সুরত আলম, জিসান, সালাহউদ্দিন মিন্টু, নবীর হোসেন, আতাউর রহমান, মাহমুদ চৌধুরী, মুসলেম উদ্দিন খান, মকবুল হোসেন, আমান উল্লাহ শফিক, আহমেদ শরফুল হোসেন, আমিনুর রহমান, পেয়ার আহমেদ আকাশ, আবদুল মাজেদ, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন, রফিকুল ইসলাম (মুন্সীগঞ্জ), অশোক কুমার দাস, সাজ্জাদ হোসেন খান, রফিকুল ইসলাম (বগুড়া) ও শেখ হারুন। এরা সবাই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের শীর্ষ সন্ত্রাসী। 

পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রেড নোটিসে এদের নাম ঝুলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইন্টারপোল এদের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য বাংলাদেশকে জানাতে পারেনি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে টোকাই সাগর যুক্তরাষ্ট্রে, সুব্রত বাইন, নবীর, তানভীরুল ইসলাম জয় ও মোল্লা মাসুদ ভারতে ও শাহাদাত ফ্রান্সে অবস্থান করছে। 

ইন্টারপোলের রেড নোটিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরী, এইচবিএম নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খানের নাম রয়েছে। এদের ব্যাপারেও ইন্টারপোল বাংলাদেশকে তথ্য দিতে বা গ্রেফতার করতে পারেনি। জানা গেছে, মোসলেহ উদ্দিন জার্মানিতে, নুর চৌধুরী কানাডায়, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, আবদুর রশিদ পাকিস্তানে, ডালিম লিবিয়ায় ও মাজেদ পাকিস্তানে অবস্থান করছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য আছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার চার্জশিটভুক্ত অন্যতম আসামি আলহাজ মাওলানা মো. তাইজউদ্দিন পাকিস্তানে ও ভারতের তিহার জেলে বন্দি দুই ভাই মোরসালেহীন ও মুত্তাকীনের নাম রেড নোটিসে রয়েছে, কিন্তু ইন্টারপোল তা জানে না। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে আছে ফরিদপুরের আবুল কালাম আজাদ, জাহিদ হোসেন, গোপালগঞ্জের আশরাফুজ্জামান খান, ফেনীর মুইন উদ্দিন চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ মো. হাসান আলী ও সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন এবং মঠবাড়িয়ার আবদুল জব্বারের নাম। এছাড়া মডেল তিন্নি হত্যা মামলার আসামি সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি, বিএনপি নেতা আবুল হারিস চৌধুরী ও কাজী শাহ মোফাজ্জাল হোসেন কায়কোবাদের নামও রেড নোটিসে ঝুলছে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!