• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘নিখোঁজ’ চার তরুণকে ঘিরে রহস্য ঘণীভূত!


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৬, ২০১৬, ১২:৩১ পিএম
‘নিখোঁজ’ চার তরুণকে ঘিরে রহস্য ঘণীভূত!

নিখোঁজ সুজন, পাভেল, মেহেদী ও সাফায়েত

ঢাকা: ‘নিখোঁজ’ চার তরুণকে ঘিরে রহস্য আরও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তারা স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বেরিয়েছে, নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সংস্থা তাদের তুলে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি তাদের অপহরণ করা হয়েছে কিনা, তাও জানাতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

পুলিশ বলছে, চার তরুণের মধ্যে সাফায়েতের কর্মকাণ্ড দেখে তাকে ‘র‌্যাডিক্যাল’ মনে হয়েছে। তার মাধ্যমে অন্যরা ‘র‌্যাডিক্যালাইজড’ হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে বনানীর কাঁচাবাজার এলাকার নর্দান ক্যাফে থেকে খাবার খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর একসঙ্গে ‘নিখোঁজ’ হয় সাফায়েত হোসেন, জায়েন হাসান খান পাভেল, সুজন ও মেহেদী নামের চার তরুণ। তাদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সাফায়েত সম্প্রতি লেখাপড়া স্থগিত রাখলেও পাভেল ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের শেষ সেমিস্টারের ছাত্র ছিল।

নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা ব্শ্বিাসই করতে পারছেন না, তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে যেতে পারে কিংবা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে তারা কেউ কোনও ধারণাও করতে পারছেন না। নিখোঁজের ঘটনায় পরিবারের পক্ষে বনানী থানায় পৃথক জিডি হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, ‘আমরা চার তরুণের অবস্থান জানার চেষ্টা করছি। তারা কেন, কিভাবে নিখোঁজ হলো, তা জানার চেষ্টা চলছে।’

পুলিশ সন্দেহ করছে, এই চার যুবক জঙ্গিবাদে ঢুকে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেলে তা সাফায়েতের মাধ্যমে হয়েছে। অথবা যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সংস্থা তুলে নিয়ে থাকে, তাহলেও সাফায়েতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্মকাণ্ডের কারণে সন্দেহভাজন হিসেবে তুলে নিয়ে গেছে। তার সঙ্গে থাকার কারণে অন্য তিনজনকেও তুলে নেয়া হয়েছে। তবে ওই সূত্রটি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, র‌্যাব এই নামে কাউকে আটক করেনি। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন বলে জানান তিনি।

নিখোঁজ পাভেলের বাবা ইসমাইল হোসেন খান রাসেল বলেন, ‘পাভেলের সঙ্গে সাফায়েত ও সুজনের বন্ধুত্ব ছিল। সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাফেতে গিয়ে স্যুপ খেয়েছে। এর পর থেকে পাভেলের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, তার ছেলে খুব বেশি ধার্মিকও নয়। উল্টো তিনি নিজে শুক্রবার জুমার নামাজে জোর করে নিয়ে যেতেন। ‘র‌্যাডিক্যাল’ হওয়ার কোনও লক্ষ্মণও তিনি কখনো বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘পাভেল বাসার বাইরে কখনও থাকত না। কারণ সে খাবার-দাবার ও থাকা নিয়ে একটু খুঁতখুঁতে স্বভাবের ছিল। ফলে তিনি ধারণা করতে পারছেন না, তার ছেলে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকতে পারে কিনা। 

নিখোঁজ সুজনের বড় ভাই সুমন বলেন, ‘সুজন ছোটবেলা থেকেই আলী যাকেরের পরিবারের সঙ্গে বনানীর গলফ হাইটস ভবনে থাকতো। ওই বাসাতেই সে বড় হয়েছে। উত্তরায় ড্যাফোডিলের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আইটি বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছে। কাজ করতো আলী যাকেরের মালিকানাধীন বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক-এ।’ 

সুমন বলেন, ‘সুজন কখনোই নামাজ-কালাম পড়তো না। এমনকি শুক্রবার জুম্মায়ও যেত না। ও সংস্কৃতিমনা। সেই পরিবেশেই বড় হয়েছে। ও কোনোভাবে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকতে পারে না।’ ওকে কেউ তুলে নিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

মেহেদীর চাচা মাহবুব হাওলাদার বলেন, ‘মেহেদী বরিশালের বিএম কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করছিল। গত ২৬ নভেম্বর সে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল ঢাকায় এসেছিল। রায়েরবাজারে ফুপুর বাসায় উঠেছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সে সুজনের সঙ্গে দেখা করতে বনানী গিয়েছিল। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ রয়েছে।’ 

মাহাবুব হাওলাদার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল বন্ধ পাওয়ার পর তিনি পরিচিতদের কাছে খোঁজ-খবর করতে থাকেন। পরদিন শুক্রবার জানতে পারেন তাদের প্রতিবেশী সুজনও নিখোঁজ হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তিনি বনানী থানায় গিয়ে পৃথক একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ২১৫) করেন।

সাফায়েতের এক স্বজন জানান, সাফায়েত ধার্মিক হলেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে তারা বিশ্বাস করেন না। বাবা-মায়ের সঙ্গে বনানীর সি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাসায় থাকতো। সাফায়েতের বাবা আলী হোসেন ও পাভেলের বাবা ইসমাইল হোসেন খান রাসেলের পুরান ঢাকায় পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ছোট বেলা থেকেই সাফায়েত ও পাভেল বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতেও ভর্তি হয়। ওই স্বজন জানান, সাফায়েত কেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিয়েছে, তা তিনি জানেন না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ৪ জনের প্রোফাইল ঘেঁটে সাফায়েতের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে সন্দেহ করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফায়েত বিতর্কিত ও সিরিয়াকেন্দ্রিক বিভিন্ন ইসলামি নেতার নানা রকম বয়ান ফেসবুকে শেয়ার করতো।

একই দিনে ‘লাপাত্তা’ বনানীর ৪ তরুণ!

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!