• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘নিখোঁজ’ ১০ তরুণের খোঁজে সীমান্তে তল্লাশি


নিউজ ডেস্ক  জুলাই ১০, ২০১৬, ০৫:৩৯ পিএম
‘নিখোঁজ’ ১০ তরুণের খোঁজে সীমান্তে তল্লাশি

বাংলাদেশে নিখোঁজ সন্দেহভাজন তরুণদের খোঁজে বাংলাদেশ লাগোয়া মালদহ সীমান্ত এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। সঙ্গেই যোগ দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। 

এদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীও (বিজিবি) সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি বহাল রাখছে। বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে বিএসএফকে। আনন্দবাজার পত্রিকাসহ ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্র সূত্রে এমন খবর জানা গেছে।

জানা গেছে, সীমান্ত লাগোয়া ভারতের গ্রামগুলিতে শুরু হয়েছে চিরুনি তল্লাশি। নিখোঁজ তরুণদের পাসপোর্ট ও ছবি দিয়ে লাগানো হয়েছে পোস্টার। বড় সড় কোনও নাশকতার আগে এদের আটক করাই এখন দু’দেশের গোয়েন্দাদের প্রধান লক্ষ্য। দুটি উদ্দেশ্যে ওই জঙ্গিরা ভারতে অবস্থান করতে পারে। এর একটি হচ্ছে-ভারতে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ানো। অন্যটি বাংলাদেশে জঙ্গি বিরোধী কঠোর অভিযানে গ্রেফতার এড়ানো।

গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি ২২ জন নিহত হয়। একই ঘটনায় সেনা অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি, যাদের চার জন দীর্ঘদিন ধরে বাড়িছাড়া ছিল। ওই ঘটনার পর ১০ তরুণের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জানানো হয় তাদের সন্তান নিখোঁজ থাকার কথা। এর বাইরে আরও প্রায় দুইশ তরুণ দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ বলে জানা গেছে। 

ধারণা করা হচ্ছে, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়ে এদের বড় অংশই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে নাম লিখিয়েছে। তাদের অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। এদের কেউ কেউ ভারতের বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা ও সমর্থকের বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে পারে। আবার অন্য দেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসা জঙ্গিদের অনেকেরও ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, দুটি উদ্দেশ্যে ওই জঙ্গিরা ভারতে অবস্থান করতে পারে। এর একটি হচ্ছে-ভারতে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ানো, সেখানকার সমর্থক-সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। অন্যটি বাংলাদেশে জঙ্গি বিরোধী কঠোর অভিযানে গ্রেফতার এড়ানো।

এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ভারত। গুলশান হত্যাকাণ্ড, শ’দুয়েক তরুণের রহস্যজনক নিখোঁজ থাকার খবর প্রকাশে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। অন্যদিকে দেশটিতে সম্প্রতি আটক হওয়া মুসা নামের জঙ্গির দেওয়া তথ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাদের কপালে। মুসা স্বীকারোক্তিতে বলেছে, এপারে (বাংলাদেশ) থাকা ওস্তাদের নির্দেশে ন্যুনতম তিনজনকে হত্যার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল সে। আর এসবের পরিপ্রেক্ষিতে জোরালোভাবে মাঠে নেমেছে তারা।

বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার বিভিন্ন গ্রামে নিখোঁজদের গা ঢাকা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গোয়েন্দাদের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে দুই বাংলাজুড়ে ছড়ানো IS মডিউল। মুসার গ্রেফতারের পর যার জাল ফাঁস হয়েছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরবর্তী তদন্ত থেকে স্পষ্ট রাজ্যে ইতিমধ্যেই শিকড় ছড়িয়েছে JMB। তাই বাংলাদেশ থেকে থেকে নিখোঁজ যুবকদের ভারতে গা ঢাকা দেয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

সেই সম্ভাবনা থেকেই ১০ নিখোঁজের তালিকা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্র। এক বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ। নিখোঁজদের সাম্প্রতিক গতিবিধি ট্র্যাক করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত এই ১০জন বাইরে থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। ভারতে নিয়মিত যাতয়াত রয়েছে এদের। এপারের সীমান্ত লাগোয়া দুই দিনাজপুর বা মালদহে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে এই ১০ তরুণ।

গুলশানে আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নিখোঁজ ১০ যুবকের সন্ধান চেয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। একই সঙ্গে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধান চাওয়া পরিবারের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিখোঁজরা হলেন রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর- এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), চাপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), লক্ষ্মীপুরের এ টিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর- এফ ০৫৮৫৫৬৮), ঢাকার ধানমণ্ডির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টি কে ৮০৯৯৮৬০) ও জুন্নুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বি ই ০৯৪৯১৭২)।

সূত্র জানায়, নিখোঁজ যুবকদের পরিবারগুলোও তাদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এদের কেউ ২ বছর, কেউ এক বছর থেকে ৬ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে। অনেকের পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডিও করেছেন। এর আগে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও পরিবারের কোনো সদস্য নিখোঁজ থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তা জানাতে অনুরোধ করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি
 

Wordbridge School
Link copied!