• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি

নিজেকে ‘নির্দোষ’ ভাবেন বাচ্চু!


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৪, ২০১৭, ০২:২৮ পিএম
নিজেকে ‘নির্দোষ’ ভাবেন বাচ্চু!

বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু

ঢাকা: বেসিক ব্যাংক দুর্নীতির ঘটনায় নিজেকে ‘নির্দোষ’ ভাবেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। ব্যাংকটির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগের মুখে থাকা বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান মনে করেন, এসব দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তিনি সম্পূর্ণ ‘নির্দোষ’!

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে উপস্থিত হন বাচ্চু। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। পরে বেলা পৌনে ১১টায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক কর্মকর্তারা।

দুদক পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি বিশেষ টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এরই মধ্য ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুর নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের ১০ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।

জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- ব্যাংকটির পরিচালনা পর্যদের সাবেক সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, আনিস আহমদ, কামরুন নাহার আহমেদ, অধ্যাপক কাজী আকতার হোসাইন, সাখাওয়াত হোসেন, ফখরুল ইসলাম, একেএম কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, শ্যাম সুন্দর শিকদার ও একেএম রেজাউর রহমান।

২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক।

ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধি বহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করে দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় মোট আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। মামলায় ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আনা হয়।

এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখার মাধ্যমে অনিয়ম করে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া কেলেঙ্কারির অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান রয়েছে। মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রযেছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণ গ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংকার ও ঋণ গ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, গ্রেপ্তার হওয়া মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি।

তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুরসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোনো সম্পৃক্ততা দুদকের অনুসন্ধানে আসেনি। তবে তদন্তকালে যদি তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে জাড়িতদের পরবর্তীকালে আসামি করা হবে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সিএজি কার্যালয় ও খোদ বেসিক ব্যাংকের নানা প্রতিবেদনে এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুসহ অনেকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে শুনানিতে এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দুদককে। মূলত এরপরই দুদক থেকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মামলার তদন্তে দুদকের উপ পরিচালক মোরশেদ আলম, মো. ইব্রাহিম ও ঋত্বিক সাহা, সহকারী পরিচালক শামসুল আলম, উপসহকারী পরিচালক ফজলে হোসেন ও মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলার তদারককারী কর্মকর্তারা হলেন পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

জাতীয় পার্টির প্রাক্তন সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।


সোনালীনিউজ/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!