• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের অপারেশন করলেন যে চিকিৎসক!


নিউজ ডেস্ক জুলাই ১৯, ২০১৮, ০৪:০১ পিএম
নিজের অপারেশন করলেন যে চিকিৎসক!

ঢাকা: দিনটা ছিল ১৯৬১ সালের পয়লা মে। বেলা দুটো। তীব্র হিমশীতল ঠাণ্ডা, বাইরে বিরামহীন তুষার ঝঞ্ঝা। জায়গাটা যে আন্টার্টিকায় সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীন নোভোলাজারেভস্কায়া মেরু গবেষণা কেন্দ্র।

২৭ বছরের তরতাজা যুবক লিওনিড রোজোগভ গত দুদিন ধরে সাংঘাতিক পেটের ব্যথায় কাতর। গায়ে জ্বর, পেটের ডানপাশের তলার দিকটা ফুলে টনটন করছে। সাথে বমিবমি ভাব।

১৩ জনের এই সোভিয়েত গবেষণা দলের একমাত্র ডাক্তার সদস্য হয়ে তিনি এসেছেন এই জনহীন, প্রায় প্রাণহীন বরফের উপত্যকায়, তা প্রায় আটমাস হল। এমন গেরোয় যে পড়তে হবে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি।

গেরো বলতে গেরো! লক্ষণ যা তাতে তিনি একপ্রকার প্রায় নিশ্চিত যে এটি অ্যাপেন্ডিসাইটিস। অ্যাপেন্ডিসাইটিস এমন কিছু মারাত্মক ব্যাপার নয় বটে। তবে যদি ফেটে যায়, আর ফেটে গিয়ে সংক্রমণ হয়ে যায়, তবে প্রাণসংশয়ও হতে পারে। একটাই উপায় এবং তা হল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওটাকে কেটে বাদ দেওয়া। মানে সার্জারি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সার্জারি করবে কে? কাছাকাছি সোভিয়েত সাহায্য বলতে ষোলশ কিমি দূরের মিরনি গবেষণা কেন্দ্র। কোন উড়ানের সুবিধা নেই। কারণ মারাত্মক মরুঝড়ের কারণে আন্টার্টিকার এসব জায়গায় হেলিকপ্টার চালানো যায় না।

অগত্যা, সিদ্ধান্তটি নিয়েই ফেললেন লিওনিড। এযাবৎ কেউ যা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। হ্যাঁ, নিজের সার্জারি নিজেই করবেন তিনি। সাথে নিলেন এক আবহবিৎ আর ড্রাইভারকে। ঠিক হল, তাঁরা ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি ধরিয়ে দেবেন আর আয়নাটি ধরে থাকবেন। লোকাল এ্যানাস্থেশিয়ার সাহায্য নিলেন লিওনিড।

তারপর আধশোয়া হয়ে ডানদিকের তলপেটে প্রথামত দশ বারো সেমি পেটের চামড়া কেটে ফেললেন। তলার ফ্যাসা ও পেশী ইত্যাদি নিয়মমাফিক কেটে পৌঁছে গেলেন অকুস্থলে। এইখানে একটা ঝামেলা বাঁধল। আয়না দেখে কাটতে গিয়ে একটু এদিক ওদিক হয়ে যাওয়ায় কেটে ফেললেন বৃহদান্ত্রের কিছুটা। সেটি আবার সেলাই করতে হল। ইতিমধ্যে তাঁর বেশ দুর্বল লাগতে শুরু করেছে, মাথাটাও বেশ ঝিমঝিম করছে।

যাই হোক, আয়নায় অ্যাপেনডিক্সটা দেখতে পেলেন এবার। গোড়ার কাছটা কালো হয়ে ঢোল হয়ে আছে। আর একটু সময় গড়ালেই আর দেখতে হত না! ওটাকে কেটেকুটে আবার সব সেলাই করে উঠতে চারটে বেজে গেল। এইভাবে পৃথিবীর প্রথম সেল্ফ সার্জারির উদাহরণ তৈরী হয়ে গেল সেই দিন।

দুই সপ্তাহের মধ্যেই লিওনিড একেবারে সুস্থ হয়ে গেলেন। মারাত্মক ঠাণ্ডার একটা সুবিধেও আছে। সংক্রমণ হয় না অত সহজে। তবে খবরটা চাউর হয়ে গেল আর অবধারিতভাবে আড়োলন তুলল, বিশেষত নিজের দেশে। সোভিয়েত সরকার ওই বছরই 'অর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার অফ লেবার' সম্মানে ভূষিত করলেন তাঁকে।

১৯৬২ সালের অক্টোবরে অভিযান শেষ করে দেশে ফিরলেন লিওনিড। এম ডি করলেন সার্জারিতে। পরবর্তীতে সেন্ট পিটার্সবার্গ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সার্জারি বিভাগের হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট হন তিনি। দুহাজার সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় সেন্ট পিটার্সবার্গেই।


সোনালীনিউজ/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!